গাজায় লাশের মিছিল॥ ইসরাইলী নৃশংসতা থামেনি
দৈনিক বার্তা ডেস্ক : গাজায় ইসরাইলের বিমান হামলায় গতকাল রোববার ৩০ জন ফিলিস্তিনী নিহত হয়েছে। এদের মধ্যে ভোরে নিহত হয় ১২ জন। ফিলিস্তিনের জরুরি সেবা সংস্থাগুলো জানিয়েছে, ইসরাইলী হামলায় দক্ষিণাঞ্চলের রাফাহ শহরে নয়জন ও গাজার মধ্যাঞ্চলে তিন জন নিহত হয়েছে। গত ৮ জুলাই থেকে গাজায় ইসরাইলী হামলায় প্রায় ১ হাজার ৭শ’ ৬২ জন ফিলিস্তিনী নিহত হয়েছে। নিহতদের বেশিরভাগই বেসামরিক নাগরিক। অন্যদিকে হামাসের সঙ্গে যুদ্ধে ৬৬ ইসরাইলী নিহত হয়েছে বলে তেলআবিব দাবি করেছে। তবে হামাসের দাবি, তাদের যোদ্ধাদের হামলায় অন্তত ১৩০ জন ইসরাইলী সেনা নিহত হয়েছে।
এদিকে দু’দিন আগে শুক্রবার অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকায় নিখোঁজ ইসরাইলী সেনা নিহত হয়েছে বলে তেল আবিব জানিয়েছে। এর কিছু আগেই গাজায় হামলা অব্যাহত রাখার ঘোষণা দেন ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু। তিনি বলেন, ইসরাইলী নাগরিকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত গাজায় অভিযান চলবেই। এমনকি হামাসের তৈরি করা টানেলগুলো ধ্বংস করার পরেও ইসরাইলী আর্মি গাজায় অভিযান চালাবে বলেও তিনি ঘোষণা দিয়েছেন। টেলিভিশনে প্রচারিত এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ কথা বলেন। হামাসকে হুঁশিয়ারি জানিয়ে নেতানিয়াহু বলেছেন, ইসরাইলের আক্রমণ করার অপরাধে হামাসকে ‘দুঃসহ মাশুল’ দিতে হবে।
গাজায় যুদ্ধবিরতি কার্যকর করার আশায় মিসরের কায়রোতে যে আলোচনা চলছে নেতানিয়াহুর এই বক্তব্যে যুদ্ধবিরতি কার্যকর হওয়ার সেই আশা একেবারেই শূন্যে মিলিয়ে গেছে বলেই ধারণা করা হচ্ছে। তবে এর জবাবে হামাস বলেছে, তাদের লক্ষ্য পূরণ না হওয়া পর্যন্ত তারাও তাদের লড়াই চালিয়ে যাবে। গাজার চারদিকে ইজরাইলের যে ভূ-অবরোধ আছে, তা তুলে নেয়ার দাবি করছে হামাস।
এদিকে গাজায় জাতিসংঘের একজন মুখপাত্র সতর্ক করে দিয়ে বলেছেন যে, সেখানকার বাসিন্দাদের স্বাস্থ্যঝুঁকি মারাত্মক পর্যায়ে পৌঁছেছে। জাতিসংঘের কর্মকর্তা ক্রিস গুয়েনেস বলেছেন, গাজার চিকিৎসা ব্যবস্থা সম্পূর্ণ ভেঙ্গে পড়েছে। হাসপাতাল কিনিক এবং এ্যাম্বুলেন্স ধ্বংস হয়ে গেছে এবং চল্লিশ শতাংশের বেশি চিকিৎসা কর্মী অক্ষম হয়ে পড়েছেন।
ইসরাইলী সেনাবাহিনী গাজা সীমান্তে তার স্থলবাহিনী পুনঃমোতায়েন শুরু করার পাশাপাশি গাজায় ঐ বিমান হামলা চালায়। ইসরাইলী ট্যাংক ও সামরিক যান যুদ্ধ বিধ্বস্ত গাজা এলাকা ত্যাগ করছে এরকম রিপোর্টের মধ্যে ইসরাইল সরকার তার অভিযান পুনর্মূল্যায়ন করছে বলে ইঙ্গিত দেয়া সত্ত্বেও গতকাল রোববার হামলা চালানো হয়। ফিলিস্তিনের ইসলামী প্রতিরোধ যোদ্ধা হামাস ইসরাইলে রকেট হামলা অব্যাহত রেখেছে।
ইসরাইলের প্রতিরক্ষা বাহিনী জানায়, শুক্রবার সংঘর্ষের সময় জঙ্গিদের হাতে আটক ইসরাইলী সেনা হাদার গোল্ডিন (২৩) নিহত হয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এ ঘটনায় হামাস ও ইসরাইলের ৭২ ঘণ্টার অস্ত্রবিরতি ভেঙ্গে পড়েছে বলে অনেকে মনে করছেন।
এর আগে গত শুক্রবার ইসরাইলী সেনাবাহিনী দাবি করেছিল, গোল্ডিন গাজায় হামাস যোদ্ধাদের হাতে আটক হয়েছে। তবে হামাসের সামরিক শাখা নিখোঁজ সেনাকে আটকের দাবি অস্বীকার করে বলেছিল, ওই ইসরাইলী সেনার অবস্থান সম্পর্কে তারা কিছু জানে না। হামাসের সামরিক শাখা জানায়, যে এলাকায় ইসরাইলী সেনা আটক হয়েছে বলে দাবি করা হয়েছে সেখানকার কিছু যোদ্ধাদের সঙ্গে তাদের যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে। ইসরাইলী বিমান হামলায় সেখানকার যোদ্ধারা ও সম্ভবত গোল্ডিন নিহত হয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
ইসরাইলের কফর সাবা শহরে শনিবার রাতে নিহত সৈন্যের পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে দেখা করেছেন দেশটির প্রতিরক্ষা মন্ত্রী ও সামরিক প্রধান। ডিএনএ পরীক্ষার পর গোল্ডিন নিহত হয়েছে বলে ইসরাইলের সামরিক বাহিনী ধারণা করছে। এর কিছুক্ষণ আগে ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু বলেন, ইসরাইলী নাগরিকদের নিরাপত্তা ফিরিয়ে না আনা পর্যন্ত গাজায় অভিযান অব্যাহত থাকবে। জাতিসংঘের স্কুলে হামলার বিষয়ে ইসরাইলের সেনাবাহিনী কোনো মন্তব্য করেনি। তবে তারা বলেছে, এ ধরনের স্কুলে হামলার বিষয়ে বেশ সতর্কতা অবলম্বন করা হচ্ছে। আরেক খবরে বলা হয়, ইসরাইলী সামরিক কর্তৃপক্ষ বলেছে, তারা স্কুলের জাতিসংঘ উদ্বাস্তু শিবিরে হামলার ব্যাপারে অবগত আছে এবং বিষয়গুলো খতিয়ে দেখছে। জাতিসংঘের মুখপাত্র ক্রিস গানিস হামলার খবর নিশ্চিত করে জানান, স্থানীয় সময় সকাল ১০টা ৫০ মিনিটের দিকে ওই স্কুলে বিমান হামলা চালায় ইসরাইল।
তিনি বলেন, ‘আমি অত্যন্ত দুঃখের সঙ্গে আরো নিশ্চিত করছি যে, হামলায় অসংখ্য মানুষ নিহত ও আহত হয়েছে। নিরস্ত্রদের ওপর হামলা করে এখানে যে পরিস্থিতি তৈরি করা হয়েছে তা বর্ণনা করা অসম্ভব।’ গত শুক্রবার এই রাফা থেকেই নিখোঁজ হন সেনা সদস্য হার্দার গোলডিন। রবিবার সকালে অভিযানে তার নিহত হওয়ার খবর নিশ্চিত করার পরেই ইসরাইল রাফায় এই হামলা চালালো।
প্রায় তিন সপ্তাহ আগে ৮ জুলাই থেকে শুরু হওয়া এই আগ্রাসনে ১ হাজার ৭৬২ জন ফিলিস্তিনী নিহত হয়েছে। আহত হয়েছে ৯ হাজার ২১২ জন। ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে গাজা। প্রায় আড়াই লাখ মানুষ উদ্বাস্তু হয়েছে।