দৈনিক বার্তা- রাজীবপুর (কুড়িগ্রাম) : মানুষের বিপদ আপদে পারস্পারিক সহযোগিতা আর সহমর্মিতা আগের মতো এখন আর চোখে পড়ে না৷ আধুনিক যান্ত্রিক জীবনে সবাই ব্যসত্ম নিজেদের নিয়ে৷ এখানে নিঃস্বার্থ ভাবে অন্যের সহযোগিতায় এগিয়ে যাওয়ার খবর খুব একটা দেখা যায় না৷ তবুও অনেকের খোঁজ পাওয়া যায়, যারা দেশের জন্য, দেশের মানুষের জন্য নিজেকে বিলিয়ে দেন৷ সোনার বাংলাদেশ গড়তে নিজ নিজ স্থান থেকে একে অন্যকে সহযোগিতা করলে সত্যিই একদিন সোনার দেশ হয়ে উঠবে বাংলাদেশ৷ সে লৰ্য আর স্বপ্ন নিয়ে রৌমারীর প্রত্যনত্ম গ্রামের ১৩ বন্ধু শপথ গ্রহণ করেছিল দেশ ও মানুষের কল্যান মূলক বিভিন্ন কর্মকান্ডে নিজেদের সম্পৃক্ত রাখার৷ শপথ নিয়েছিল জীবনে তারা কোনো দিন ধুমপান করবে না৷ যা দীর্ঘ ৮ বছরেও তারা তাদের শপথ থেকে নড়েনি৷
২০০৬ সালের জুন মাসের ১ তারিখে ওই ১৩ বন্ধু ধুমপান না করার জন্য শপথ গ্রহণ করে৷ এসময় তারা তারা সিদ্ধানত্ম নেয় তাদের গ্রামের নাম অনুসারে (চতলাকান্দা, ওকড়াকান্দা, বাউসমারী, বোয়ালমারী, শৌলমারী) কোবসা নামের একটি সংগঠন গড়ে তোলে সেই থেকে যাত্রা তা আজও রয়েছে৷ সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক শফিকুল ইসলাম জানান, আমরা তখন এসএসসি পাশ করে কলেজে পড়ি৷ শামীম হোসেন নামের আমাদের এক বন্ধু খুবই মেধাবি ছিল৷ কিন্তু স্কুল জীবনেই সে মাদকের ফাঁদে পড়ে৷ গাঁজা ফেনসিডিলের নেশায় তার এসএসসি পরীৰাও দেওয়া হয়নি সে সময়৷ বর্তমানে সে পাগল হয়ে গেছে৷ আমরা দেখেছি একজন মেধাবি ছাত্র নেশায় পড়ে কিভাবে শেষ হয়ে যায়৷ মূলত তার ওই অবস্থা দেখে আমরা ১৩ বন্ধু শপথ গ্রহণ করি মাদক তো গ্রহণ করবই না এমনকি জীবনে ধুমপানও করব না৷ এরপর বন্ধুদের পরামর্শে মাসে ধুমপানে যে টাকা খরচ হতো ওই টাকা আমরা জমা করি৷ ওই টাকায় আমরা বিভিন্ন সময়ে ব্যয় করি জনকলাণ কাজে৷ যেমন গ্রামের অভাবি হতদরিদ্র কোনো পরিবারে টাকার অভাবে তার মেয়ের বিয়ে হচ্ছে না তখন আমরা ১৩ বন্ধু তার ব্যবস্থা করি৷ প্রয়োজনে বিয়ের খরচের টাকা সংগঠনের পক্ষ থেকে ওদেওয়া হয়ে থাকে৷ অভাবি দিনমজুর ঘরের কোনো শিশু যদি স্কুলে যাওয়া বন্ধ করে তখন আমরা ছুটে যাই৷ অভিভাবকদের সাথে আলাপ আলোচনা করে সমস্যার সমাধান করি৷ গ্রামের স্কুল পড়ুয়া শিশু কিশোদের মা’দের নিয়ে তারা একাধিক সমাবেশ করেছি যাতে তাদের ছেলেমেয়েদের স্কুলে পাঠানো হয়৷ বাড়িতে শিশুরা যাতে পড়তে বসে সে জন্যও আলোচনা করা হয়৷ এছাড়াও আমরা অসংখ্য বার স্কুলের শিৰাথর্ীদের মাঝে গাছের চারাও বিতরণ করেছি৷ বাল্য বিয়ে ও যৌতুক বন্ধে, স্বাস্থ্য সম্মত পায়খানা ব্যবহারে আমরা গ্রামের মানুষকে উত্সাহ প্রদান করেছি৷ এসব তথ্য জানালেন সংগঠনের সভাপতি আলমগীর হোসেন৷
রৌমারী উপজেলার কোবসা সংগঠনের সদস্য ১৩ বন্ধু৷ এরা এখন বিভিন্ন স্থানে কর্ম করছেন, চাকরি করছেন এবং বিদেশেও থাকেন ৩জন৷৷ তারপরও তাদের শপথ ও জনকল্যাণ মূলক কর্মকান্ড অব্যাহত রয়েছে৷ এবার রমজানের ঈদে ১৩ বন্ধু একসঙ্গে বসে নানা সিদ্ধানত্ম গ্রহণ করেছে বলে জানা গেছে৷ বন্ধুরা হলেন, আলমগীর হোসেন, শফিকুল ইসলাম, বজলুর রশীদ দুলাল, জিয়াউর রহমান, রায়হানুল ইসলাম, মাইদুল ইসলাম, আব্দুর রহমান, নুর আলম, আনারম্নল ইসলাম, ইসলাম উদ্দিন, ছাইদুর রহমান, সিরাজুল ইসলাম, ও আসাদুজ্জামান৷
সংগঠনের উপদেষ্টা রৌমারী সিজি জামান হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক আবু হোরায়রা জানান, ১৩ বন্ধু এলাকার অনেক ভালো কাজ করেছে৷ আমি তাদের সকল কর্মকান্ডে অংশ গ্রহণ করেছি৷ ইচ্ছা থাকলে যে কোন স্থান থেকে দেশের ও মানুষের সেবা করা যায় সেটাই তারা দেখিয়েছেন৷
রম্নহুল সরকার