দৈনিক বার্তা-মংলা,৩০জুলাই : বঙ্গোপসাগরের সুন্দরবন সংলগ্ন নদ নদীতে শত শত জেলে প্রতিদিনই রূপালি ইলিশের আশায় জালসহ নৌকা নিয়ে নদীতে গিয়ে শূণ্য হাতে ফিরে আসছেন৷ ইলিশের মৌসুম থাকা সত্ত্বেও জালে ধরা দিচ্ছে না ইলিশ৷
জেলেদের সাথে কথা বলে জানা যায়, ইলিশ মৌসুম শুরু হতেই জীবিকার সন্ধানে প্রতিদিন শত শত জেলে সুন্দরবন সংলগ্ন বিভিন্ন নদ নদীতে নামছেন৷তবে জালে তেমন একটা ইলিশ ধরা পড়ছে না৷ তাই হতাশ সুন্দরবন সংলগ্ন বিভিন্ন এলাকার জেলেরা৷ শুধু তাই নয়,মহাজনের ঋণের দায়ে মরণফাঁদে আটকে গেছেন এসব ইলিশ শিকারীরা৷
জেলেরা জানায়, সাগর মোহনার বাইরেও সুন্দরবন সংলগ্ন উপকূলীয় বিভিন্ন উপজেলার কয়েক হাজার জেলে পশুর, শিবশা, কাজিবাছা, বলেশ্বর, ভোলা, বিষখালি, পারসিয়াসহ বিভিন্ন নদীতে ইলিশ ধরতে জাল ফেলছেন৷ইঞ্জিন চালিত ট্রলার এবং বৈঠা চালিত জেলে নৌকায় প্রায় ৫০ হাজার জেলে উপকূলীবর্তী এসব নদীতে নামছেন৷ তবে এরমধ্যে শুধুমাত্র পশুর নদীতে নামছেন ৫ হাজার বৈঠাচালিত নৌকায় ২০ হাজার জেলে৷ এসব জেলেরা সাধারণত কয়রা, পাইকাগাছা, দাকোপ, মংলা, শরণখোলা, পিরোজপুর, তালা, মুন্সিগঞ্জসহ বিভিন্ন উপজেলার বাসিন্দা৷
দাকোপ উপজেলার ঢাংমারী এলাকার সালাউদ্দিন হাওলাদার জানান, গত ৩০ বছর ধরে তিনি পশুর নদীতে ইলিশ ধরছেন৷ তবে আগে ইলিশ পাওয়া গেলেও এখন তেমন একটা পাওয়া যায় না৷ এমন একটা সময় ছিলো যখন প্রচুর ইলিশ পেতেন৷ এমনকি গতবছরও তিনি দিনে ৪/৫টি ইলিশ ধরেছেন৷ আর এবার গত ১৫ দিন একটিও ইলিশ পাননি তিনি৷ সালাউদ্দিন জানান, মহাজনের কাছ থেকে দাদন (ঋণ) নিয়ে ইলিশ ধরতে এসেছি৷ তাই ইলিশ পাই আর না পাই মহাজনের দেনার হাত থেকে মুক্তি পাওয়ার কোন উপায় নেই৷
মংলার পশুর নদীতে সাতক্ষীরা থেকে মাছ ধরতে আসা ইব্রাহিম জানান, অনেক জেলের নিজের জাল ও নৌকা থাকার পরও মহাজনের কাছ থেকে দাদন নিতে হয়৷ এ মৌসুমে তিনি ৬০ হাজার টাকা দাদন নিয়েছেন৷ ইলিশ থেকে যে আয় হবে তা’ থেকে মহাজনের টাকা পরিশোধ করার কথা৷ তবে এবার ইলিশ পাওয়া যাচ্ছে না৷ মংলা বাজারের ইলিশ ব্যবসায়ী ইজারাদার বুলবুল আহম্মেদ জানান, যারা ইলিশ ধরতে যান লাভের বিনিময়ে তাদের পুঁজি দিয়ে সহযোগিতা করি৷ তবে এবার এই খাতে জেলেদের পেছনে যে বিনিয়োগ করা হয়েছে তা’ আদায় করতে বেশ বেগ পেতে হবে৷ কারণ মৌসুম শুরম্ন হলেও জালে ইলিশ ধরা না পড়ায় জেলেরাই হতাশ৷
মংলার অপর পাইকারী মাছ ব্যবসায়ী শেখ কামরম্নজ্জামান জসিম জানান, প্রতিবছর এ সময়ে মাছঘাটে (আড়ত্)ক্রেতাদের হাঁকডাকে সরগরম থাকলেও এ বছর তা নেই৷ আড়তে খালি বাঙ্ নিয়ে বসে থাকে কর্মচারীরা৷ আর বেতন গুনছেন আড়তদাররা৷ এ ব্যাপারে মংলা উপজেলা সিনিয়র মত্স্য কর্মকর্তা বিশ্বজিত্ কুমার দেব জানান, জলবায়ু পরিবর্তন ও আদ্রতার কারণে গভীর সমুদ্র থেকে ইলিশের ঝাঁক এখনও উপরে উঠে আসেনি৷ এছাড়া সাগরে পানির উচ্চতা বেড়ে যাওয়ায় উজানে স্রোত কম৷ স্রোতে মাছের খাবার বয়ে আনে৷ ঝড়ো হাওয়া না থাকায় সাগর থেকে ইলিশ নদীতে আসছে না৷ কারণ তার মতে ঝড়ো আবহাওয়াসহ বৃষ্টিপাত বাড়লেই ইলিশ পাওয়া যাবে৷
এদিকে দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের নদ-নদীতে ভরা মৌসুমেও পর্যাপ্ত ইলিশ ধরা না পড়ায় মংলাসহ আশপাশ এলাকার বিভিন্ন বাজারে ইলিশের দাম চড়া৷ বিভিন্ন বাজারে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, আকার অনুসারে ইলিশের মূল্য কেজি আটশ থেকে এক হাজার দুই শত টাকা পর্যনত্ম বিক্রি হচ্ছে৷ দেড় থেকে দুই কেজি ওজনের ইলিশ বাজারে একটা দেখা যায় না৷