দৈনিক বার্তা –কিশোরগঞ্জ,২৯জুলাই : প্রতি ঈদের মতো এবারো উপ-মহাদেশের বৃহত্তম ঈদ জামাত অনুষ্ঠিত হয়েছে কিশোরগঞ্জের শোলাকিয়া ঈদগাহ ময়দানে৷ বৃষ্টি উপেক্ষা করে কিশোরগঞ্জের শোলাকিয়ায় দেশের বৃহত্তম ঈদ জামাতে অংশ নিয়েছে চার লক্ষাধিক মুসল্লী৷সকাল ১০টায় অনুষ্ঠিত ১৮৭তম এ জামাতে ইমামতি করেন বিশিষ্ট ইসলামী চিনত্মাবিদ ও বাংলাদেশ ওলামা-মাশায়েখ সংহতি পরিষদের চেয়ারম্যান মুফতি ফরীদ উদ্দীন মাসউদ৷
লাখো মুসলি্লর অংশগ্রহণে শোলাকিয়ার এ ঈদ জামাত শেষে বিশেষ মোনাজাতে ইসরাইলের নৃশংসতা থেকে ফিলিসত্মিনের গাজাবাসীদের রক্ষা ও ইসাইলের ধ্বংসে আলল্লাহ’র রহমত এবং বিশ্ব মানবতার শানত্মি ও সমৃদ্ধি এবং মুসলিম উম্মাহর সংহতি কামনা করা হয়৷ শোলাকিয়ায় গত কয়েক দিনের টানা বৃষ্টির পর আজ ঈদের দিন সকালেও আকাশ ছিল মেঘাচছন্ন এবং সকাল ন’টার দিকে কিছুক্ষণ ঝিরঝির বৃষ্টিও পড়েছে৷ তবে সকাল ১০টার দিকে রৌদ্রোজ্জ্বল আবহাওয়ায় মুসলি্লরা দেশের সর্ববৃহত্ এ ঈদ জামাতে নামাজ আদায় করেন৷এবার দেশ-বিদেশের চার লাখেরও বেশি মানুষ এখানে ঈদুল ফিতরের নামাজ পড়তে আসায় জনসমুদ্রে পরিণত হয় শোলাকিয়া ময়দান৷দেশের সর্ববৃহত্ এ জামাতে অংশগ্রহণ করতে ভোর থেকেই মুসলি্লদের ঢল নামে জেলা শহরের পূর্বপ্রান্তে নরসুন্দা নদীর তীরে অবস্থিত এই ঈদগাহে৷
ঈদগাহমুখী সকল সড়ক মুসলি্লদের দখলে চলে যাওয়ায় কয়েক ঘন্টার জন্য এসব সড়কে যান চলাচল বন্ধ করে দেওয়া হয়৷জামাত শুরুর প্রায় দুই ঘন্টা আগেই সাত একর আয়তনের শোলাকিয়া মাঠ কানায় কানায় ভরে যায়৷ আগত মুসলি্লদের অনেকে মাঠে জায়গা না পেয়ে পাশর্্ববতী রাসত্মা, তিনপাশের ফাঁকা জায়গা, নদীর পাড় ও বাড়ীর ছাদে জায়গা করে নিয়ে মুসল্লিরা জামাতে শরীক হন৷
১৮২৮ সালে অনুষ্ঠিত ঈদের প্রথম বড় জামাতের হিসাব অনুযায়ী শোলাকিয়া ময়দানের এবারের জামাতটি ছিল ১৮৭তম ঈদ জামাত৷জামাতকে কেন্দ্র করে নেওয়া হয় তিন সত্মরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা৷ সহস্রাধিক পুলিশ, আর্মড পুলিশ ও র্যাব সদস্যের কঠোর নিরাপত্তা ও নজরদারিতে শানত্মিপূর্ণভাবে নামাজ শেষ হয়৷ মাঠের চারপাশে বসানো হয় নিরাপত্তা চৌকি৷পুরো এলাকায় সিসি ক্যামেরা বসানো ছাড়াও মাঠের ২৮টি প্রবেশ পথে মেটালডিটেক্টর দিয়ে মুসলিস্নদের দেহ তল্লাশি করা হয়৷
নামাজ শেষে ফিলিসত্মিনের গাজায় নিহতের মাগফেরাত এবং দেশ, জাতি ও মুসলিম উম্মাহর শানত্মি এবং মঙ্গল কামনা করে বিশেষ মোনাজাত করা হয়৷
এবারের ঈদ জামাতে নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) জাবেদ আলী, কিশোরগঞ্জ-২ আসনের সংসদ সদস্য এডভোকেট মো. সোহরাব উদ্দিন, কিশোরগঞ্জের জেলা ও দায়রা জজ আ. ম মোহাম্মদ সাঈদ, জেলা পরিষদের প্রশাসক অ্যাডভোকেট মো. জিল্লর রহমান, জেলা প্রশাসক এস এম আলম, পুলিশ সুপার মো. আনোয়ার হোসেন খান, জেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক এডভোকেট এম এ আফজল, সদর উপজেলা চেয়ারম্যান এডভোকেট শরিফুল ইসলামসহ জাতীয় ও স্থানীয় বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ নামাজ আদায় করেন৷
গত ৪৪ বছর ধরে এ মাঠে নামাজ আদায় করছেন ময়মনসিংহের ভালুকার কাসর গ্রামের আখতার হোসেন মন্ডল (১০৯)৷ তার মতো এ ধরনের অসংখ্য লোকের খোঁজ পাওয়া যায়, যারা দীর্ঘদিন ধরে এখানে নামাজ পড়তে আসেন৷ মাঠের সুনাম ও নানা জনশ্রম্নতির কারণে ঈদের কয়েক দিন পূর্ব থেকেই কিশোরগঞ্জের প্রত্যনত্ম অঞ্চল ও দেশের বিভিন্ন জেলা তথা ময়মনসিংহ, নেত্রকোনা, রাজশাহী, কুষ্টিয়া, গাজীপুর, নরসিংদী, ব্রাক্ষ্মণবাড়িয়া, হবিগঞ্জ, সুনামগঞ্জ, সিলেট, জামালপুর, খাগড়াছড়ি, শেরপুর, যশোর, খুলনা ও চট্টগ্রামসহ অন্যান্য জেলা থেকে শোলাকিয়ায় মুসলিস্ন্লদের সমাগম ঘটে৷তাদের অনেকেই স্থানীয় বিভিন্ন হোটেলে, কেউ আত্মীয়স্বজনের বাড়িতে, আবার কেউ শোলাকিয়া ঈদগাহ মিম্বরে জায়গা করে নেন৷ অনেকে কোথাও জায়গা না পেয়ে রাত কাটিয়েছেন শোলাকিয়া মাঠে খোলা আকাশের নিচে৷
মুসলি্লদের নামাজ আদায়ের সুবিধার জন্য শোলাকিয়া স্পেশাল নামে দুটি বিশেষ ট্রেন ময়মনসিংহ ও ভৈবর থেকে ভোর বেলায় ছেড়ে আসে কিশোরগঞ্জে৷ ভৈরব থেকে সকাল ৬টায় ছেড়ে আসা ট্রেনটি সকাল ৮টায় কিশোরগঞ্জ পেঁৗছায়৷ আর ময়মনসিংহ থেকে সকাল পৌনে ৬টায় ছেড়ে আসা ট্রেনটি কিশোরগঞ্জ পৌঁছায় সকাল সাড়ে ৮টায়৷ দেশের বৃহত্তম এ ঈদ জামাতকে কেন্দ্র করে মাঠ পাশর্্ববর্তী এলাকায় হসত্ম ও কারম্ন শিল্পসহ নানা পণ্যের মেলা আগত মুসলি্লদের জন্য ছিল অন্যতম আকর্ষণের বিষয়৷ শত ব্যসত্মতা, নানা সমস্যা আর প্রাকৃতিক বৈরিতাকে উপেক্ষা করে এক কাতারে দাঁড়িয়ে ধনী-গরীব সকলে নামাজ আদায় করেন শোলাকিয়ার এ ঈদ জামাতে৷ তাদের সবার উদ্দেশ্য একটাই যেন কোন অবস্থাতেই হাত ছাড়া হয়ে না যায় জামাতে অংশগ্রহণ ও আল্লাহর সানি্নধ্য লাভের সুযোগ৷
ধনী-গরীবের ভেদাভেদ ভুলে গিয়ে সাম্য ও সুন্দরের ভিত্তিতে এক নতুন সমাজ গড়ার এই শিক্ষা নিয়েই জামাত শেষে বাড়ির পথে শোলকিয়া ছাড়েন মুসলি্লরা৷