দৈনিক বার্তা- লন্ডন | ২৮ জুলাই ২০১৪, সোমবার : সাত দিনের সৌদি সফর শেষে শনিবার লন্ডন ফিরেছেন বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমান। সৌদি বাদশাহর আমন্ত্রণে গত ১৯শে জুলাই বাংলাদেশ থেকে বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া ও লন্ডন থেকে সপরিবারে তারেক রহমান সৌদি আরব যান। সৌদিতে অবস্থানকালে ইবাদত বন্দেগির পাশাপাশি বিএনপির শীর্ষ দুই নেতা বেগম খালেদা জিয়া ও তারেক রহমান বেশ কয়েক দফা একান্ত বৈঠক করেন। বৈঠকে সরকারবিরোধী আন্দোলনকে গুরুত্ব দেয়ার পাশাপাশি বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে ব্যাপক আলোচনা হয়। আলোচনা শেষে ঈদের পর রাজপথে লাগাতার কর্মসূচির মাধ্যমে আন্দোলনের ব্যাপারে ঐকমত্যে পৌঁছেন তারা। এসব বৈঠকে বেশ কিছু কমিটি ও কিছু খসড়া পরিকল্পনাও চূড়ান্ত করা হয়। তারেক রহমান ইবাদত বন্দেগির পাশাপাশি রাজনীতিকে গুরুত্ব দিয়ে আগামী দিনের আন্দোলনে তার নতুন পরিকল্পনা বাস্তবায়নের ওপর জোর দেন। তিনি মনে করেন, সরকার বেশি দিন স্থায়ী হলে তারা আরও বেশি ভয়ঙ্কর হয়ে নেতাকর্মীদের ওপর জুলুম-নির্যাতনের মাত্রা বাড়িয়ে দেবে। আর এতে নেতাকর্মীরা ঘেরাটোপে পড়ে থাকবে। এসব কারণে আন্দোলন ইস্যুতে খালেদা-তারেক ঐকমত্য হন। বৈঠকে উপস্থিত তারেক রহমানের ঘনিষ্ঠ সূত্র এসব তথ্য নিশ্চিত করেন।
সূত্র মতে, মদীনায় পৌঁছার পর খালেদা জিয়া ও তারেক রহমান মহানবী (সা.)-র রওজা মোবারক জিয়ারত করেন। সেখানে দোয়া ও মোনাজাতে তারা দেশ ও জাতির কল্যাণ কামনা করেন। এ সময় সঙ্গে ছিলেন তারেক রহমানের স্ত্রী ডা. জোবায়দা রহমান, মেয়ে জাইমা রহমান, বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ডা. এজেডএম জাহিদ হোসেন, বিশেষ সহকারী শামসুর রহমান শিমুল বিশ্বাস, প্রেস সচিব মারুফ কামাল খান, মধ্যপ্রাচ্যবিষয়ক দূত এনামুল হক চৌধুরী, সউদী আরব পশ্চিমাঞ্চল বিএনপির সভাপতি আহমদ আলী মুকিব, সাবেক ছাত্রনেতা রকিবুল ইসলাম বকুল ও জোটের শরিক দল বিজেপির চেয়ারম্যান আন্দালিব রহমান পার্থও শরিক হন। মদীনায় আল ইমান হোটেলে অবস্থান করে তিনদিনে ইবাদত বন্দেগি ও পারিবারিক সম্মিলনের পাশাপাশি তারা চারবার একান্ত বৈঠক করেন। বৈঠকগুলোতে মূলত দলের পুনর্গঠন, কূটনীতিক তৎপরতা এবং আন্দোলনের নতুন রোডম্যাপ নিয়ে আলোচনা হয়। বৈঠকে তারেক রহমান তার কিছু পরিকল্পনা তুলে ধরেন। এছাড়া তারা দলের অভ্যন্তরীণ বিভিন্ন বিষয়ে তাদের পর্যবেক্ষণ এবং সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের বিষয়ে আলোচনা করেন।
মদীনায় তিন দিন অবস্থান করে ইবাদত বন্দেগির পর পবিত্র ওমরাহ পালনের জন্য ২২শে জুলাই রাতে মক্কায় যান খালেদা জিয়া ও তারেক। রাতেই তারা সপরিবারে পবিত্র ওমরা পালন করেন। মক্কায় রয়েল প্যালেসে অবস্থানকালে শুক্রবার জুমার নামাজ আদায়ের জন্য সপরিবারে বায়তুল্লাহ শরীফে যান বেগম খালেদা জিয়া। খুতবার আগে তারা নফল নামাজ ও কোরান তেলাওয়াত করেন। খুতবা শুনেন এবং নামাজ আদায় করেন। বিকালে খালেদা জিয়া ও তারেক বিদায়ী তাওয়াফ শেষে সফরসঙ্গীদের নিয়ে রাতেই মক্কা ত্যাগ করেন।
২০১১ সালে বেগম জিয়ার যুক্তরাজ্য সফরের পর গত ১৯শে জুলাই দুবাই বিমানবন্দরে তারেক-খালেদার পারস্পরিক সাক্ষাৎ হয়। মদিনা ও মক্কায় গত সাত দিন একত্রে ইবাদত-বন্দেগি আর রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা তৈরিতে সময় কাটান মা ও ছেলে। সাত দিনের সৌদি সফর শেষে গত শনিবার জেদ্দা থেকে একত্রে এমিরেটস-এর ইকে-৮১০ ফ্লাইটে তারা দুবাই পৌঁছেন। জিয়া পরিবার বিচ্ছিন্ন হন দুবাই এয়ারপোর্টে। খালেদা জিয়া আসেন বাংলাদেশে আর তারেক রহমান যান লন্ডনে। জেদ্দা ও দুবাই বিমানবন্দরে বিদায় জানাতে গিয়ে সবাই কাঁদেন। নেতাকর্মী ও মায়ের কান্নার জবাবে বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমান বলেন ‘আর কান্না নয়, বাংলাদেশের মানুষের মুখে হাসি ফোটাতে লড়াই করতে হবে। কাঁদতে হবে না, শিগগিরই দেশে ফিরবো ইনশাআল্লাহ’। জেদ্দা বিমানবন্দরে বেগম খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানকে ফুল দিয়ে বিদায় শুভেচ্ছা জানান সৌদি আরব পশ্চিমাঞ্চল বিএনপির সভাপতি আহমদ আলী মুকিব ও সৌদি সম্মিলিত পেশাজীবী পরিষদের সভাপতি ও বিএনপি নেতা আবদুর রহমান। এ সময় অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন তাঁতী দলের কেন্দ্রীয় সহ-সভাপতি জাহাঙ্গীর আলম মিন্টু, সৌদি আরব সম্মিলিত পেশাজীবী পরিষদের সাধারণ সম্পাদক ইঞ্জিনিয়ার নুরুল আমিন, পশ্চিমাঞ্চল বিএনপির সাধারণ সম্পাদক শহীদুল ইসলাম নান্নু, জেদ্দা মহানগর বিএনপি নেতা এমএ আজাদ চয়ন, কেফায়েতউল্লাহ চৌধুরী ও গিয়াসউদ্দিন আল মারুফ, যুবদলের পশ্চিমাঞ্চল সভাপতি মোজাম্মেল হোসেন, জেদ্দা যু্বদলের নেতা প্রিন্স আল লিনটন, স্বেচ্ছাসেবক দলের নেতা এরশাদ আহমেদ, বিএনপি নেতা ওয়ায়েছ আহমেদ, মোজাম্মেল হোসেন রিপন, আনোয়ার জাহিদ, মোশাররফ হোসেন, আজাদ, শিপন, হানিফ সরকার, রঞ্জু আহমেদ, আবদুস শহীদ, স্বেচ্ছাসেবক দল নেতা শাহজাহান, আলমগীর হোসেন, মেহেদী হাসান প্রমুখ।