দৈনিক বার্তা- ঢাকা: রাজধানীতে ছিনতাইকারী সন্দেহে গণপিটুনিতে নিহত হয়েছে সাজ্জাদুর রহমান নামে এক যুবক। ঘটনাটি ঘটেছে রোববার সকালে। পুরান ঢাকার ভজহরি সাহা স্ট্রিট দিয়ে হেঁটে যাওয়ার সময় পুলিশি চেকপোস্টে ছিনতাইকারী সন্দেহে আটক করা হয় ওই যুবককে। এর কিছুক্ষণ আগে ওই এলাকায় ছিনতাইকারীরা এক ব্যবসায়ীকে ছুরিকাঘাত করে ১ লাখ ৩০ হাজার টাকা ছিনিয়ে নেয়ার চেষ্টা করে। পুলিশের দাবি, ওই ছিনতাইচেষ্টার সঙ্গে যুক্ত ছিল সাজ্জাদুর রহমান। তবে নিহতের স্বজনদের অভিযোগ, সাজ্জাদ ছিনতাইয়ের সঙ্গে যুক্ত থাকতে পারে না। সে তার বাবার ডেকোরেটরের ব্যবসা দেখভাল করে। ছিনতাইয়ের মতো ঘটনায় তার জড়িত থাকার প্রশ্নই আসে না। পুলিশ পরিকল্পিতভাবে সাজ্জাদকে আটকের পর মারধর করে জনতার হাতে তুলে দিয়ে হত্যা করেছে।
ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, রোববার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে টিপু সুলতান রোডে জহির উদ্দিন নামের বিকাশের এক এজেন্টের কাছ থেকে ১ লাখ ৩০ হাজার টাকা তুলে বের হওয়ার সময় ছিনতাইকারীদের কবলে পড়েন জহির। এ সময় জহিরের ডান হাতে ছুরিকাঘাত করে টাকা ছিনিয়ে নেয়ার চেষ্টা করে তারা। ঘটনাস্থলের কয়েকশ’ গজ দূরে ভজহরি স্ট্রিটে ওয়ারী থানা পুলিশের একটি চেকপোস্ট ছিল। ব্যবসায়ী জহির উদ্দিনের চিৎকারে আশপাশের লোকজন ছিনতাইকারীদের ধাওয়া করে। ঠিক এমন সময়ে পুলিশি চেকপোস্টে আটকা পড়েন সাজ্জাদুর রহমান। প্রত্যক্ষদর্শীরা বলেছেন, পুলিশ সাজ্জাদকে আটক করে মারধর শুরু করে। এরই একপর্যায়ে সাজ্জাদুর রহমানকে উত্তেজিত জনতার হাতে তুলে দেয় পুলিশ। পরে গুরুতর আহত অবস্থায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেয়া হলে দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে সাজ্জাদ মারা যায়।
জানা গেছে, সাজ্জাদের বাবা সাইফুর রহমান লিটন মিয়া টিপু সুলতান রোডে হৃদয় ডেকোরেটরের স্বত্বাধিকারী। তাদের বাসা পুরান ঢাকায়। সাজ্জাদের চাচা তৌফিকুর রহমান টুটুল ভাতিজার বিরুদ্ধে ছিনতাইয়ের অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, ‘সাজ্জাদ ছিনতাই করতে পারে না। সে তার বাবার সঙ্গে ব্যবসা দেখাশোনা করে।
টুটুলের দাবি, বেলা ১১টার দিকে ভজহরি সাহা স্ট্রিট প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সামনে দিয়ে ডেকোরেশনের দোকানে যাচ্ছিল সাজ্জাদ। তখন স্কুলের সামনে সাজ্জাদকে গতিরোধ করে তার দেহ তল্লাশি করা হয়। তার কাছে সন্দেহজনক কিছু না পেলেও পুলিশ তাকে গাড়িতে তুলে নির্যাতন চালায়।
টুটুল দাবি করেন, সাজ্জাদকে ঘটনাস্থলে আটকের পর ওয়ারী থানার উপপরিদর্শক আনোয়ার জনতার হাতে তুলে দেন। এরপরই তাকে পিটিয়ে মেরে ফেলা হয়।
নিহতের বাবা সাইফুর বলেন, নিজের ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান দেখাশোনা করত তার ছেলে। তার কোনো কিছুর অভাব নেই। পুলিশ তার ছেলেকে পিটিয়ে মেরেছে দাবি করে বলেন, দায়ী পুলিশ সদস্যদের বিরুদ্ধে তিনি আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন।
তবে পুলিশের ওয়ারী বিভাগের উপকমিশনার (ডিসি) মোস্তাক আহমেদ বলেন, সাজ্জাদ ছিনতাইয়ের সঙ্গে জড়িত। গত রাতে এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত ছিনতাইয়ের শিকার জহির উদ্দিন পুলিশের হেফাজতে ছিলেন। ওয়ারী থানার ওসি তপন চন্দ্র সাহা জানান, ছিনতাইয়ের শিকার বিকাশকর্মী নিজেই সাজ্জাদকে হাতেনাতে ধরেছেন। তার চিৎকারেই জনতা গিয়ে ছিনতাইকারীকে গণপিটুনি দেয়।
পারিবারিক সূত্র জানায়, দুই ভাই দুই বোনের মধ্যে সবার বড় ছিল সাজ্জাদ। তার স্ত্রী লুবনা রহমান মনি পাঁচ মাসের অন্তঃসত্ত্বা। তাদের তিন বছর বয়সী একটি মেয়ে সন্তানও আছে।