দৈনিক বার্তা: প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গণমাধ্যমের প্রতি আরও বেশি দায়িত্বশীল ভূমিকা পালনের আহবান জানিয়ে বলেছেন, বিদেশে বাংলাদেশের সুনাম যাতে নষ্ট না হয় সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে। তিনি বলেন, সকলে মিলে দেশটাকে গড়ে তুলি। আপনারা সমালোচনা করেন কিন্তু কাজে যাতে কোন প্রতিবন্ধকতা এবং বিদেশে বাংলাদেশের যাতে বদনাম না হয় সে ব্যাপারে লক্ষ্য রাখতে হবে। সংবাদপত্রকে সমাজের দর্পণ হিসাবে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বস্তুনিষ্ঠ সংবাদ ছাড়া কোন সমাজই চলতে পারেনা। গণতন্ত্র সুসংহত করা, সরকারি কর্মকাণ্ডের স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা এবং সুশাসন প্রতিষ্ঠায় স্বাধীন ও দায়িত্বশীল গণমাধ্যমের ভূমিকা অত্যন্ত বেশী। প্রধানমন্ত্রী গতকাল শুক্রবার জাতীয় প্রেস ক্লাবে ইফতার মাহফিলে গণমাধ্যমের প্রতি এ আহবান জানান।
বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়ন (বিএফইউজে) ও ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়ন (ডিইউজে) এই ইফতার মাহফিলের আয়োজন করে। বিএফইউজে’র সভাপতি মনজুরুল আহসান বুলবুলের সভাপতিত্বে ইফতার পূর্ব আলোচনা সভায় বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন তথ্য মন্ত্রী হাসানুল হক ইনু। স্বাগত বক্তব্য রাখেন ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি আলতাফ মাহমুদ। বক্তব্য রাখেন ডিইউজের সাধারণ সম্পাদক কুদ্দুস আফ্রাদ। অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন বিএফইউজে’র মহাসচিব আবদুল জলিল ভূঁইয়া।
সাবেক তথ্যমন্ত্রী আবুল কালাম আজাদ, তথ্য সচিব মোরতুজা আহমেদ, প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব এ কে এম শামীম চৌধুরী, সিনিয়র সাংবাদিক হাবিবুর রহমান মিলন, রাহাত খান, বাসস’র ব্যাবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান সম্পাদক আবুল কালাম আজাদ ও প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ সহকারী মাহবুবুল হক শাকিল অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন।
ইফতারের আগে দেয়া ভাষণে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৭২ সালের সংবিধানে ৩৯ অনুচ্ছেদে দেশের প্রত্যেক নাগরিকের বাকস্বাধীনতা এবং সংবাদ মাধ্যমের স্বাধীনতার নিশ্চয়তা দিয়ে গেছেন।
জাতির পিতার পদাঙ্ক অনুসরণ করে আওয়ামী লীগের নির্বাচনী ইশতেহারে গণমাধ্যমের স্বাধীনতা সুনিশ্চিত করার প্রতিশ্র“তি দিয়েছিলেন উল্লেখ করে তিনি বলেন, বাংলাদেশের গণমাধ্যম আজ তাই পূর্ণ স্বাধীনতা ভোগ করছে।
বিগত ’৯৬ সালের সরকারের সময় আওয়ামী লীগই প্রথম বেসরকারি টিভি চ্যানেলের অনুমতি দেয় উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, তার সরকার গত মেয়াদে আরো ৩২টি বেসরকারি টিভি চ্যানেল, ২২টি এফএম ব্যান্ড রেডিও ও ৩২টি কমিউনিটি রেডিও’র অনুমতি দিয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা বিশ্বাস করি, জনগণের ক্ষমতায়নের মূল শক্তি তথ্য। তাই আমরা গ্রাম পর্যন্ত তথ্যের অবাধ প্রবাহ নিশ্চিত করেছি। সাংবাদিকদের অহেতুক হয়রানি বন্ধে ক্রিমিনাল প্রসিডিউর কোড সংশোধন করে মানহানি মামলায় গ্রেফতারি পরোয়ানা জারির পরিবর্তে সমন জারির বিধান চালু করা হয়েছে। অষ্টম ওয়েজ বোর্ড রোয়েদাদ ঘোষণা করেছি।
সাংবাদিকদের আবাসিক সমস্যা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ’৯৬ সালে তার সরকার ন্যাম সম্মেলনের জন্য ৩ হাজার ফ্লাট তৈরী করেছিল যার উদ্দেশ্য ছিল সাংবাদিকসহ বিভিন্ন পেশার লোকজনদের দেয়া। ২০০১ সালে সরকারে না আসতে পারায় সেই সুযোগ বাস্তবায়ন করা যায়নি বলে উল্লেখ করেন প্রধানমন্ত্রী।
সমবায় সমিতির মাধ্যমে সাংবাদিকদের মধ্যে জমি প্রদানের বিষয়টি বিবেচনা করবেন আশ্বাস দিয়ে তিনি বলেন, শুধু ঢাকা নয়, ঢাকার বাইরের সাংবাদিকরা যাতে জমি পান সে ব্যাপারে লক্ষ্য রাখতে হবে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, তিনি বাংলাদেশকে একটি আত্মনির্ভরশীল দেশ হিসেবে গড়ে তুলতে চান। যাতে আমরা নিজেদের পায়ে নিজেরা দাঁড়াতে পারি। আর সেই লক্ষ্যেই পদ্মা সেতু নির্মাণ হচ্ছে বলে জানান তিনি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, সমুদ্রে অধিকার নিশ্চিত করার লক্ষ্যে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৭৪ সালে সমুদ্রসীমা আইন করে যান। সেই সময় জাতিসংঘও এই আইন করেনি উল্লেখ করে তিনি বলেন, তার দূরদর্শিতার কারণেই মিয়ানমার ভারতের সঙ্গে সমুদ্রসীমা মামলায় আমরা বিজয়ী হয়েছি।
শেখ হাসিনা বলেন, বিশ্ব অর্থনীতির মন্দার সময়েও মহাজোট সরকার বাংলাদেশের অর্থনীতিকে গতিশীল করেছে। মাথাপিছু আয় ২০০৯ সালের ৮৪৩ ডলার থেকে বৃদ্ধি পেয়ে বর্তমানে ১ হাজার ১৯০ মার্কিন ডলার হয়েছে। দারিদ্র্যের হার ২০০৯ সালের ৩৩.৪ শতাংশ থেকে হ্রাস পেয়ে ২০১৩ সালে ২৬.৪ শতাংশ এবং হত-দারিদ্র্যের হার ১৯.৩ শতাংশ থেকে ১১.৯ শতাংশে নেমে এসেছে’। গত পরশুদিন রেকর্ড পরিমাণ ৭,৪০৩ মেগাওয়াট বিদ্যুত্ উত্পন্ন হয়েছে। এর আগে মঙ্গলবার উত্পাদন হয় ৭,৩৭১ মেগাওয়াট।
প্রধানমন্ত্রী দেশকে এগিয়ে নেয়ার জন্য এবং দেশের অর্থনৈতিক মুক্তি নিশ্চিত করতে সবার সহযোগিতা কামনা করেন।
ইফতারের আগে দেশ ও জাতির শান্তি, অগ্রগতি এবং সমৃদ্ধি কামনা করে বিশেষ মোনাজাত অনুষ্ঠিত হয়। মোনাজাত পরিচালনা করেন বায়তুল মোকাররম মসজিদের খতিব অধ্যাপক মাওলানা মোহাম্মদ সালাউদ্দিন আহমেদ।