দৈনিক বার্তা –ঝিনাইদহ প্রতিনিধি : প্রতিবন্ধী কমর্ীদের বেতনের টাকা আত্মসাত করে পালিয়ে গেছেন ঝিনাইদহের মিজানুর রহমান নামে এক এনজিও পরিচালক৷ কর্মীরা নিজেদের বেতন-ভাতা পাওয়া তো দূরের কথা এনজিও’র দায়-দেনা মাথায় নিয়ে মানবেতর জীবন যাপন করছেন৷ মিথ্যা বলে ৫১ জন প্রতিবন্ধী কমর্ীর স্বাক্ষর করিয়ে ‘প্রতিবন্ধীদের সহায়তা প্রকল্পের টাকা তুলে আত্মসাত করেছেন এসডাপ এনজিও’র পরিচালক৷ ঝিনাইদহ শহরের চাকলাপাড়ায় অবস্থিত বে-সরকারী সংস্থা এসডাপের প্রতিবন্ধী কমর্ীসহ পাওনাদারদের দেনা পরিশোধ করার কথা বলে সংস্থার নিজস্ব জমি বিক্রি করে পালিয়ে গেছেন তিনি৷ অসহায় প্রতিবন্ধীরা তার কাছে পাওনা চাইতে গেলে তিনি নানা ধরণের হুমকী-ধামকী দিচ্ছেন৷ এ ছাড়া টাকা দিবেন না বলেও তিনি সাফ জানিয়ে দিয়েছেন৷ এখন তিনি মোবাইল ফোন বন্ধ রেখেছেন৷
সংস্থার সাবেক কর্মী মঈনুদ্দিন আহাম্মেদ জানান, তারা এসডাপ নামের একটি সংস্থার ঝিনাইদহের হরিনাকুন্ডু উপজেলায় প্রতিবন্ধীদের নিয়ে পরিচালিত একটি প্রকল্পে কাজ করতেন৷ দীর্ঘদিন এই প্রকল্পের কাজ চলার পর সংস্থার নির্বাহী পরিচালক মিজানুর রহমান অনিয়ম ও দূর্নীতি করায় কারনে ডোনাররা অর্থ দেওয়া বন্ধ করে দেন৷ এরপর প্রকল্পটি বন্ধ হয়ে যায়৷ সে সময় সংস্থার কাছে কর্মীদের বেতন বাবদ ৩ লাখ ১০ হাজার ৩ শত ২৫ টাকা পাওনা ছিল৷ এছাড়া বিভিন্ন দোকান থেকে মালামাল ক্রয় বাবদ পাওনা ছিল ১ লাখ ২৪ হাজার ৯ শত ৩৪ টাকা৷ এই টাকা তারা নির্বাহী পরিচালক মিজানুর রহমানের কাছে দাবি করলে তিনি বলেন বিল-ভাউচারে স্বাক্ষর করে দিতে৷ এই ভাওচার জমা দেওয়ার পর ব্যাংক থেকে টাকা উঠাবেন৷ এরপর তাদের পাওনা পরিশোধ করবেন৷ সাবেক ওই কর্মচারীসহ আরো বেশ কয়েকজন জানান, তারা বকেয়া পাওয়ার আশায় সরল বিশ্বাসে ভাওচারে স্বাক্ষর করে দেন৷ এই স্বাক্ষর নিয়ে তিনি টাকাও উঠান, কিন্তু তাদের বকেয়া পরিশোধ করেনি৷ কর্মীরা নানা সময়ে চাকার জন্য ধর্ণা দিয়েছেন, কিন্তু টাকা না দিয়ে নানা ভাবে টালবাহানা করতে থাকেন৷ এক পর্যায়ে প্রকাশ হয়ে যায় এই টাকা তুলে তিনি খেয়ে ফেলেছেন৷ সে সময়ে তারা টাকার জন্য জোর চাপ সৃষ্টি করেন৷ পরিস্থিতি সামাল দিতে মিজানুর রহমান সংস্থার একটি জমি বিক্রি করে কর্মীদের টাকা দেবেন মর্মে সিদ্ধান্ত হয়৷ সংস্থার এক সভায় এই মর্মে রেজুলেশনও করা হয়৷ পরবর্তীতে জমিটিও বিক্রি করেছেন, কিন্তু কর্মীদের টাকা পরিশোধ করেননি৷ এখন টাকা চাইতে গেলে বলছেন তোমাদের সব টাকা পরিশোধ৷ সরল বিশ্বাসে ভাওচারে স্বাক্ষর করাকে পুজি করে তিনি এই কথা বলছেন৷ এমনকি টাকা যাতে না দিতে হয় সেই জন্য যে চারজন কর্মী বেশী চাপাচাপি করছিলেন তাদের বিরুদ্ধে আদালতে মিথ্যা মামলা দায়ের করেছেন৷ তারাও ইতিপূর্বে বকেয়া বেতন পাওয়ার দাবি করে আদালতে মামলা করেছেন৷ সেই মামলা থেকে বাঁচার জন্য পাল্টা মামলা করেছেন মিজানুর রহমান৷ যে মামলা বর্তমানে বিচারাধীন রয়েছে৷ এছাড়াও একই সংস্থার আরএকটি শাখা শৈলকুপা্ উপজেলার ভাটই বাজারে অবস্থিত৷ সেখানেও নানা দুনর্ীাত করা হচ্ছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে৷ হরিণাকুন্ডু শাখার সাবেক ম্যাজেনার নাজমুল হক জানান, দুর্নিতীবাজ এসডাপের নির্বাহী পরিচালক সকলের টাকা আত্মসাত করে এলাকা থেকে গা ঢাকা দিয়েছেন৷ এমনকি তার বিরম্নদ্ধে একাধিক বিয়েসহ নারী কেলেংকারীর অভিযোগ৷
তাছাড়াও প্রতিবন্ধীদের টাকা আত্বসাতের আরো অভিযোগ রয়েছে৷ তাদের নানা উপকরন দেওয়ার কথা থাকলেও তিনি তা দেননি৷ এমনকি প্রতিবন্ধীদের সভা করার কথা বলে মোটা অংকের টাকা বিল উঠিয়ে তিনি আত্বসাত করেছেন৷ প্রতিবন্ধীদের নিয়ে পরিচালিত প্রকল্পটি বন্ধ হয়ে গেছে নির্বাহী পরিচালকের দূর্নীতির কারনে৷ ব্যাংকে জাল কাগজপত্র জমা দিয়ে টাকা তুলে আত্বসাত করেছেন৷ যা প্রমান হয়ে যাওয়ায় প্রকল্পটি বন্ধ হয়ে গেছে৷ এতে ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছেন ঝিনাইদহের অর্ধশত প্রতিবন্ধী৷ যারা প্রকল্প থেকে উপকৃত হচ্ছিলেন তারা এই দূর্নীতিবাজের বিচার দাবি করেছেন৷ এসডাপের সাবেক সভাপতি আমিনুর রহমান টুকু জানান, অর্থআত্মসাতের ঘটনাটি সত্য৷ আমি সকলের টাকা পরিশোধের জন্য সংস্থার নামে যে একটি জমি ছিল সেটি বিক্রি করতে বলেছিলাম৷ কিন্তু মিজানুর রহমান আমাকে না জানিয়ে জমিটি বিক্রি করে পালিয়ে যায়৷
এ ব্যাপারে জানার জন্য এসডাপ এর নির্বাহী পরিচালক মিজানুর রহমানের সাথে কথা বলার চেষ্টা করে তাকে পাওয়া যায়নি৷ এমনকি তার মোবাইলটিও বন্ধ পাওয়া গেছে৷ প্রতিবন্ধীদের টাকা ও সংস্থার জমি বিক্রির টাকা আত্মসাত করে পালিয়ে যাওয়া প্রতারক এনজিও পরিচালককে অবিলম্বে গ্রেফতার করে আইনের আওতায় আনার দাবী প্রতিবন্ধীসহ সকল পাওনাদারদের৷
টিপু সুলতান , ঝিনাইদহ প্রতিনিধি