দৈনিক বার্তা – ঢাকা, ৮ জুলাই : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সকল ধরনের ভয়-ভীতি ও প্রলোভনের ঊর্ধ্বে থেকে আইনানুগ দায়িত্ব পালন এবং জনগণের স্বার্থ সংরক্ষণে সচেষ্ট থাকতে জেলা প্রশাসকদের (ডিসি) নির্দেশ দিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘ক্ষুধা, দারিদ্র্য, নিরক্ষরতা ও সাম্প্রদায়িকতামুক্ত সুখী, সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়তে বিভাগীয় কমিশনার ও জেলা প্রশাসকদের ভূমিকা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কারণ আপনারা সাধারণ মানুষের কাছাকাছি অবস্থান করেন।’ তিনি বলেন, ‘তাই আমি আশা করি, কেবল সরকারি কর্মচারি হিসেবে নয়, একজন দেশপ্রেমিক নাগরিক হিসেবে আপনারা জনকল্যাণে আত্মনিয়োগ করবেন এবং এ লক্ষ্যে আপনার সহকর্মীদেরকেও উদ্বুদ্ধ করবেন।’
আজ সকালে এখানে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে জেলা প্রশাসকদের (ডিসি) তিন দিনব্যাপী সম্মেলন উদ্বোধনকালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এ নির্দেশ দেন। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী ইসমত আরা সাদেক ও মন্ত্রিপরিষদ সচিব এম মোশাররফ হোসেন ভূঁইয়া অনুষ্ঠানে বক্তৃতা করেন। অনুষ্ঠানে খুলনার বিভাগীয় কমিশনার মো. আব্দুল জলিল, মাদারীপুরের জেলা প্রশাসক জিএসএম জাফরুল্লাহ, রাঙ্গামাটির জেলা প্রশাসক মোস্তফা কামাল ও পঞ্চগড়ের জেলা প্রশাসক এম সালাহউদ্দীনও বক্তৃতা করেন। অনুষ্ঠানে মন্ত্রীবর্গ, প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টাগণ ও ঊর্ধ্বতন সরকারি কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
জেলা প্রশাসকদের ২৪টি বিষয়ে দিক-নির্দেশনা দেয়ার সময় শেখ হাসিনা তৃণমূল পর্যায়ে সুশাসন প্রতিষ্ঠায় জনপ্রতিনিধিদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করতে তাদের নির্দেশ দেন। তিনি সরকারের কেন্দ্রীয় পর্যায়ে গৃহীত সিদ্ধান্তগুলো মাঠপর্যায়ে যাতে যথাসময়ে ও যথাযথভাবে বাস্তবায়িত হয় তা নিশ্চিত করতে এবং তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির উন্নয়ন ও বিকাশে নেতৃত্ব দিতেও তাদের নির্দেশ দেন। প্রধানমন্ত্রী রাষ্ট্র ও সমাজ জীবনের সর্বক্ষেত্রে সুশাসন প্রতিষ্ঠার জন্য স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা বৃদ্ধি এবং ই-গভর্নেন্স বাস্তবায়নের প্রয়োজনীয়তার ওপর গুরুত্ব আরোপ করেন। এক্ষেত্রে তিনি সরকারি সেবা গ্রহণকালে সাধারণ মানুষ যাতে কোনভাবেই হয়রানি বা বঞ্চনায় শিকার না হন সেদিকে লক্ষ্য রাখতে ও গণশুনানি জোরদার করতে তাদেরকে নির্দেশ দেন।
প্রধানমন্ত্রী জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাসবাদ দূর করে রাষ্ট্র ও সমাজ জীবনের সর্বক্ষেত্রে শান্তি-শৃঙ্খলা ও স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে তাদের নির্দেশ দেন। তিনি বলেন, জেলা প্রশাসকদের নারী ও শিশু নির্যাতন এবং পাচার, মাদকদ্রব্যের অপব্যবহার, যৌতুক, ইভটিজিং এবং বাল্যবিবাহের মতো সামাজিক ব্যাধি নিরোধে কাজ করতে হবে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, তাঁর সরকারের অন্যতম প্রধান লক্ষ্য হচ্ছে প্রত্যেক গৃহহীন নাগরিক আশ্রয় দেয়া। তিনি সংশ্লিষ্ট জেলাগুলোতে গৃহহীন সকলকে বাড়ি প্রদানে পদক্ষেপ নিতে জেলা প্রশাসকদের নির্দেশ দেন। শেখ হাসিনা মত প্রকাশ করে বলেন যে, শিক্ষা খাতে ব্যয় শুধুমাত্র ব্যয় নয়, এটি এক ধরনের বিনিয়োগ। আর তাঁর সরকারের পক্ষে সম্ভব হলে দেশের সামগ্রিক শিক্ষা ব্যবস্থা তিনি ফ্রি করে দেবেন। বিনামূল্যে বই প্রদান, বৃত্তি, গরীব বাবা-মাকে আর্থিক সহযোগিতা এবং দুপুরের খাবার চালুসহ শিক্ষা বিকাশে তাঁর সরকারের পদক্ষেপের কথা উল্লেখ করে শেখ হাসিনা জেলা প্রশাসকদের ছাত্র-ছাত্রীদের বিদ্যালয় ত্যাগের হার কমিয়ে আনতে এবং ঝরে পড়া শিক্ষার্থীদের মূলধারায় ফিরিয়ে আনার পদক্ষেপ নিতে বলেন।
এ ব্যাপারে প্রধানমন্ত্রী বলেন, স্থানীয় পর্যায়ে উচ্চশিক্ষা সহজলভ্য করতে সরকারি -বেসরকারি উদ্যোগে প্রতিটি জেলায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করা হবে। নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যসামগ্রীর দাম জনগণের ক্রয় ক্ষমতার মধ্যে ধরে রাখার ওপর গুরুত্ব দিয়ে শেখ হাসিনা পবিত্র রমজান মাসে কৃত্রিম সংকট সৃষ্টির মাধ্যমে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের দাম বৃদ্ধির যে কোন অপচেষ্টা দৃঢ়ভাবে প্রতিরোধ করতে জেলা প্রশাসকদের নির্দেশ দেন।