দৈনিক বার্তাঃ শপথগ্রহণের মাধ্যমে ভারতের ১৫তম প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব নিলেন নরেন্দ্র দামোদর দাস মোদি। স্থানীয় সময় সন্ধ্যা ৬টায় রাইসিনা হিলে শপথ নেন তিনি। সোমবার সন্ধ্যায় ভারতের রাজধানী নয়া দিলি¬তে রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখোপাধ্যায় তার সরকারি বাসভবনে মোদিকে শপথ পড়ান।
তার পরে বিজেপি সভাপতি রাজনাথ সিং ও সুষমা স্বরাজ শপথ নেন।মোদির সরকারে এই দুজন পাচ্ছেন স্বরাষ্ট্র ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব। রাষ্ট্রপতি ভবনের আঙ্গিনায় প্রায় চার হাজার অতিথির উপস্থিতিতে শপথ নেন মোদি। বিজেপি ও কংগ্রেসের শীর্ষ নেতাদের পাশাপাশি দক্ষিণ এশিয়ার বিভিন্ন দেশের সরকার প্রধানরাও উপস্থিত ছিলেন তার শপথ অনুষ্ঠানে।
পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরীফ, শ্রীলঙ্কার প্রেসিডেন্ট মাহিন্দ রাজাপাকসে, আফগান প্রেসিডেন্ট হামিদ কারজাই যোগ দিয়েছেন শপথ অনুষ্ঠানে। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জাপান সফরে থাকায় এই অনুষ্ঠানে যোগ দেন স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরী।
ভারতের সদ্য বিদায়ী প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং এবং কংগ্রেস নেতৃত্বাধীন সংযুক্ত প্রগতিশীল মোর্চার (ইউপিএ) সভানেত্রী সোনিয়া গান্ধীও উপস্থিত হয়েছেন মোদির শপথে। দেখা গেছে ক্রিকেট, চলচ্চিত্রসহ বিভিন্ন অঙ্গণের তারকাদেরও।
এক দশক আগের দাঙ্গার জন্য সমালোচনা, আর দক্ষ হাতে গুজরাট পরিচালনা- নিন্দা আর প্রশংসার দুই বিপরীত ধারার মধ্যেই পৃথিবীর বৃহত্তম গণতান্ত্রিক দেশের ষোড়শ লোকসভা নির্বাচনে ভোটের লড়াইয়ে প্রায় দেড়শ’ বছরের দল কংগ্রেসকে ধসিয়ে দেন ৬৩ বছর বয়সী মোদি।
ভারতে ভোটের ইতিহাসে কংগ্রেসকে সবচেয়ে বড় লজ্জায় ডুবিয়ে প্রধানমন্ত্রী হলেন এক সময়ের চা বিক্রেতা নরেন্দ্র মোদি। আর ১৯৮৪ সালের পর এবারই ভারত দেখল সবচেয়ে শক্তিশালী সরকার।
সরকার গঠনের ন্যূনতম ২৭২ আসন ছাড়িয়ে লোকসভায় বিজেপির সদস্য সংখ্যা ২৮২,আর জোট এনডিএকে হিসেবে আনলে এই সংখ্যা পৌঁছে যায় ৩৩৬ এ।
বিজেপির ঐতিহাসিক জয়ের পর সবাই অপেক্ষায় ছিলেন এ মাহেন্দ্র ক্ষণের। মোদি কেবল বিজেপিকে ঐতিহাসিক বিজয়ই এনে দেননি, তার শপথগ্রহণও হয়েছে ঐতিহাসিক। কারণ এই প্রথম ভারতের কোনো প্রধানমন্ত্রীর শপথ অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার সবগুলো দেশের রাষ্ট্র ও সরকার প্রধানেরা।
কেবল বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পূর্ব নির্ধারিত জাপান সফরে থাকার কারণে তার প্রতিনিধি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন স্পিকার শিরীর শারমিন চৌধুরী। সকাল থেকেই ভারতে পৌঁছতে থাকেন পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরীফ থেকে শুরু করে আফগানিস্তানের প্রেসিডেন্ট হামিদ কারজাই ও শ্রীলঙ্কার প্রেসিডেন্ট মাহিন্দ্রা রাজাপাক্ষে। বাংলাদেশের প্রতিনিধিদল ও নেপালের প্রধানমন্ত্রী দিলি¬তে যান রোববারই।
এদিকে মোদির শপথগ্রহণকে কেন্দ্র করে কয়েকদিন ধরেই কড়া নিরাপত্তা ব্যবস্থা জারি করা হয়েছে প্রেসিডেন্ট প্রাসাদের আশপাশে। আজ বিদেশি অতিথিদের উপস্থিতিতে তা আরো কঠোর করা হয়।
মোদির সঙ্গে তার যেসব মন্ত্রীরা শপথ নিলেন তারা হচ্ছেন-পূর্ণমন্ত্রী রাজনাথ সিং, অরুন জেটলি, সুষমা স্বরাজ, নীতীন গড়কড়ি, ভেঙ্কাইয়া নাইডু, সদানন্দ গৌড়া, গোপিনাথ মুন্ডে, কালরাজ মিশ্র, মানেকা গান্ধী, অনন্ত কুমার, রবিশঙ্কর প্রসাদ, অশোক গাদপাতি রাজু, অনন্ত গেতে, হরশিমরত কউর, নরেন্দ্র সিং তোমার, জুয়েল ওরান, টি. গেহলট, স্মৃতি ইরানি, উমা ভারতী, নাজমা হেপতুল¬া, রাধা মোহন সিং, হর্ষবর্ধন।
এছাড়া প্রতিমন্ত্রী হচ্ছেন- জেনারেল ভিকে সিং, সন্তোষ গ্যাংওয়ার, শ্রীপদ নায়েক, ধর্মেন্দ্র প্রধান, সর্বানন্দ সোনোওয়াল, প্রকাশ জাভেরেকের, পিষুষ গোয়েল, জীতেন্দ্র সিং, নির্মলা সীতারমন, রাও ইন্দ্রজিত, জি এম সিদ্ধেশ্বরা, মনোজ সিনহা, উপেন্দ্র খুশওয়া, রাধাকৃষ্ণ পি কিরেন রিজু, কৃষ্ণনান পাল গুর্জর, সঞ্জীব কুমার বালান মানসুকভাই, রাও সাহাব ধানউই, বিষ্ণুদেব ও সুদর্শন ভাগবত।
ভারতের ১৫তম প্রধানমন্ত্রী হিসেবে সোমবার সন্ধ্যায় শপথ নেন নরেন্দ্র মোদি। এর আগে দিনের প্রথম অংশে ভারতের জাতির পিতা মহাত্মা গান্ধির সমাধি পরিদর্শন করেছেন তিনি।
ভোরে ধবধেবে সাদা পোষাকে সজ্জিত মোদি দিলি¬র যমুনা নদীর তীরে রাজঘাটে অবস্থিত মহাত্মা গান্ধি মেমোরিয়াল পরিদর্শন করেন, জানিয়েছে এনডিটিভি।
এরপর ফেরার পথে তিনি ভারতের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও অসুস্থ বর্ষিয়ান বিজেপি নেতা অটল বিহারী বাজপেয়ির আর্শীবাদ নিতে তার বাসায় যান।যাওয়ার পথে এক ট্যুইটে তিনি বলেন, অটল জি’র আর্শীবাদ নেয়ার জন্য তার বাসায় যাচ্ছি।
ভারতের হবু প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি তার শপথ অনুষ্ঠানে বিশ্বব্যাপী তিন হাজার গণ্যমান্য অতিথির পাশাপাশি নিজ রাজ্য গুজরাটের এক চা ওয়ালাকেও আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন।
এ সেই চা ওয়ালা যিনি লোকসভা নির্বাচনে মোদির প্রার্থিতার প্রস্তাব দিয়েছিলেন। মোদি গত মাসে গুজরাটের বডদোরায় বিজেপি থেকে মনোনয়নপত্র জমা দেয়ার সময় তার প্রার্থিতার প্রস্তাব দেয়া ৫ সমর্থকের ইনিও একজন।তার ইচ্ছা আনুযায়ী এবারই প্রথমবারের মতো সার্কভুক্ত দেশগুলোর সরকার প্রধানদেরকে শপথ অনুষ্ঠানে আমন্ত্রণ জানানো হয়।
রাষ্ট্রপতি ভবনের এ অনুষ্ঠানে দেশি-বিদেশি গণ্যমান্য অতিথিদের সঙ্গে যোগ দেবেন ওই চা ওয়ালা। নাম কিরণ মাহিদা।
মোদির আমন্ত্রণ পাওয়ার পর আনন্দে উদ্ভাসিত কিরণের উক্তি, আমি মোদির শপথ অনুষ্ঠানে যাওয়ার নিমন্ত্রণ পেয়ে খুবই খুশী। আমি সম্মানিত বোধ করছি। তার শপথ গ্রহণ দেখতে আমি অবশ্যই দিলি¬ যাব।
কিরণ ছাড়াও শপথ অনুষ্ঠানে বডদোরা থেকে আরো ২৫ জন অতিথি যোগ দেন। এছাড়া, বডদোরা আসনে মোদির নাম প্রস্তাবকারী অপর চারজনও শপথ অনুষ্ঠানে থাকার আমন্ত্রণ পান।
গুজরাটের মুখ্যমন্ত্রী থাকাকালে অর্থনৈতিক সাফল্যের বিষয়টি সামনে এনে মোদিকে সম্ভাব্য প্রধানমন্ত্রী হিসেবে আগেই ঘোষণা করে রেখেছিল তার দল।
এবারের নির্বাচনে মোদির পক্ষে ব্যাপক সমর্থন দেয় ভারতের জনগণ। লোকসভা নির্বাচনের দুইটি আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা (গুজরাটের বডদোরা ও উত্তর প্রদেশের বারানসি) করে জয় লাভ করেন মোদি।
লোকসভার ৫৪৫ আসনের ২৮২টি আসন জিতে অভাবনীয় সাফল্য পেয়েছে মোদির দল ভারতীয় জনতা পার্টি (বিজেপি)। সরকার গঠনের মতো একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা থাকলেও এনডিএ জোটের শরিক দলগুলোকেও নতুন সরকারের রাখার ঘোষণা দেন মোদি।