দৈনিক বার্তাঃ নারায়ণগঞ্জের আলোচিত সেভেন মার্ডারের ঘটনায় জেলার ফতুল্লা ও সিদ্ধিরগঞ্জ থানার প্রত্যাহারকৃত দুই ওসিসহ পুলিশ প্রশাসনের ৬জনকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে সরকার গঠিত তদন্ত কমিটি। গতকাল সোমবার বিকেল সোয়া ৩টায় নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসনের সার্কিট হাউজে গণশুনানী চলাকালে ওই ৬জনকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়।
যাদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে তারা হলেন ফতুল্লা থানার প্রত্যাহারকৃত সাবেক ওসি আকতার হোসেন, সিদ্ধিরগঞ্জ থানার প্রত্যাহারকৃত সাবেক ওসি আবদুল মতিন, ফতুল্লা থানার সাবেক পরিদর্শক (তদন্ত) সাইফুল ইসলাম, জেলা ডিবির সাবেক পরিদর্শক (তদন্ত) আবদুল আউয়াল, ফতুল্লা থানার সাবেক এস আই ফজলুল হক ও জহিরুল ইসলাম। জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের পাশে নারায়ণগঞ্জ সার্কিট হাউজে তদন্ত কমিটির প্রধান জন প্রশাসন মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব শাহজাহান আলীর নেতৃত্বে সাত সদস্যের কমিটি এ জিজ্ঞাসাবাদ ও গণশুনানীতে উপস্থিত ছিলেন। এর আগে গত রবিবার নারায়ণগঞ্জের সাবেক জেলা প্রশাসক মনোজ কান্তি বড়াল ও সাবেক পুলিশ সুপার সৈয়দ নুরুল ইসলামকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে তদন্ত কমিটি ।
এদিকে, নারায়ণগঞ্জের আলোচিত সেভেন মার্ডারের ঘটনার প্রধান আসামী পলাতক কাউন্সিলর নূর হোসেনের অন্যতম ঘনিষ্ট বান্ধবী ও কথিত স্ত্রী নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের সংরক্ষিত নারী আসনের কাউন্সিলর জান্নাতুল ফেরদৌস নীলাকে একটি হত্যা মামলায় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তিন দিনের রিমান্ডে নিয়েছে পুলিশ। সিদ্ধিরগঞ্জের জুয়েল নামের এক যুবক হত্যা মামলায় নীলাকে সোমবার সকালে গ্রেপ্তারের পর ৭ দিনের রিমান্ড চেয়ে আদালতে পাঠানো হয়। পরে নারায়ণগঞ্জ চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট যাবিদ হোসেনের আদালতে নীলাকে হাজির করে রিমান্ডের আবেদন করা হয়। আদালত শুনানী শেষে ৩ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। নীলা নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের ৪, ৫ ও ৬ নম্বর ওয়ার্ডের সংরক্ষিত আসনের কাউন্সিলর।
সিদ্ধিরগঞ্জ থানার ওসি আলাউদ্দিন জানান, সকাল ৭টায় নীলাকে সিদ্ধিরগঞ্জের আজিবপুর এলাকায় তার বাসা থেকে আটকের পর সিদ্ধিরগঞ্জ থানায় আনা হয়। সেখান থেকে তাকে নারায়ণগঞ্জ আদালতে পাঠানো হয়। ২০১৩ সালের ২৬ অক্টোবর খুন হওয়া জুয়েল হত্যা মামলায় নীলাকে গ্রেফতার করা হয়। তবে নীলার পরিবার জানায়, নীলাকে রাত একটায় আটক করে পুলিশ থানায় নিয়ে যায়। এর আগে গত ১৮ মে নীলাকে আটক করা হলেও তাকে প্রায় তিন ঘন্টা জিজ্ঞাসাবাদ করে ছেড়ে দেয় ডিবি পুলিশ। জিজ্ঞাসাবাদে নীলা ডিবি পুলিশকে নূর হোসেন সম্পর্কে অনেক গুরুত্বপূর্ন তথ্য দিয়েছিল। ঐদিন তাকে সাত খুনের ব্যাপারে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয় বলে সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা এস এম মঞ্জুর জানান।
পুলিশ জানায়, ২০১৩ সালের ২৬ অক্টোবর সিদ্ধিরগঞ্জের জালকুড়ি এলাকা থেকে জুয়েল নামের এক ব্যক্তির দেহ ও পরে মাথা উদ্ধার করা হয়। প্রায় মাসখানেক পরে পুলিশ জুয়েলের পরিচয় শনাক্ত করে। ওই ঘটনার পরদিন ২৭ অক্টোবর থানার এস আই জিন্নাহ বাদী হয়ে একটি হত্যা মামলা দায়ের করে। পরে গ্রেপ্তারকৃত এক আসামী আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দী দেয়। এতে হত্যাকান্ডের সঙ্গে নীলা জড়িত থাকার কথা সে জবানবন্দীতে স্বীকার করে। কিন্তু তখন কাউন্সিলর নূর হোসেনের প্রভাবের কারণে পুলিশ নীলাকে গ্রেপ্তার করেনি।
জানা গেছে, ২০১১ সালের ৩০ অক্টোবর সিটি করপোরেশনের নির্বাচনের পর থেকেই দুই কাউন্সিলর নূর হোসেন ও নীলার মধ্যে গভীর সম্পর্ক গড়ে উঠে। এক সঙ্গে ঘুরতে যাওয়া, একই ঘরে ঘুমানোসহ অন্তরঙ্গ সম্পর্ক গড়ে উঠে তাদের মধ্যে । নূর হোসেনের টাকার লোভে নীলা তার প্রথম স্বামীকে ডিভোর্স দেয়। কিন্তু নূর হোসেন বিয়ে করতে না চাইলে গত বছরের ২৮ মে সিদ্ধিরগঞ্জ থানায় অভিযোগ দিতে গিয়ে ব্যর্থ হয়ে থানার সামনে তুলকালাম কান্ড ঘটায় নীলা। থানার ভেতরে ও বাইরে অস্বাভাবিক আচরণের পাশাপাশি সে নিজেই ইট দিয়ে আঘাত করে নিজের হাতে কেটে ফেলে ও রাস্তায় চলন্ত গাড়ির নিচে ঝাপ দিয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা করে। পরে পুলিশ এসে কাউন্সিলর নীলাকে উদ্ধার করে। নীলা কিছুদিন আগে গণমাধ্যমকে বলেছেন যে, নূর হোসেন তাকে রক্ষিতা বানাতে চেয়েছিল। তাকে বিভিন্ন সময়ে ৩৫ লাখ টাকা মূল্যের গাড়ি উপহার দেয় নূর হোসেন। এছাড়া নূর হোসেনের কারণে নীলা তার স্বামীকেও ডিভোর্স দেয়। আলোচিত সেভেন মাড্যারের ঘটনায় অভিযুক্ত নূর হোসেন আত্মগোপনে যাবার পর তার সাথে সম্পর্র্কের কথা নীলা ফাঁস করে দেয়। এরপরই আলোচনায় আসেন নীলা।