দৈনিক বার্তাঃ নারায়ণগঞ্জের আলোচিত সেভেন মার্ডারের ঘটনায় গ্রেফতার হওয়া র্যাবের চাকুরিচ্যুত সাবেক কর্মকর্তা লে. কমান্ডার এম এম রানাকে কাউন্সিলর নজরুল ইসলামসহ পাঁচ হত্যা মামলায় গ্রেফতার দেখিয়ে ফের ৮ দিনের রিমান্ডে নেয়া হয়েছে। সাত দিনের রিমান্ডে জিজ্ঞাসাবাদ শেষে রোববার বিকেলে তাকে নারায়ণগঞ্জ সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট কে এম মহিউদ্দিনের আদালতে হাজির করে পুনরায় ১০ দিনের রিমান্ডের আবেদন করেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা (ডিবি ওসি) মামুনুর রশীদ মন্ডল। আদালত শুনানি শেষে তাকে আট দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
এর আগে গত ১৮ মে একই আদালত তাকে হাজির করে ৫৪ ধারায় গ্রেফতার দেখিয়ে ১০ দিনের রিমান্ডের আবেদন করলে আদালত সাত দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
এদিকে, নারায়ণগঞ্জে সাতজনকে অপহরণ ও খুনের ঘটনায় তদন্তের স্বার্থে যে কাউকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে বলে জানিয়েছেন তদন্ত কমিটির চেয়ারম্যান ও জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব শাজাহান আলী মোল্লা।
নারায়ণগঞ্জের সাবেক পুলিশ সুপার (এসপি) ও জেলা প্রশাসকের (ডিসি) জবানবন্দি শেষে সাংবাদিকদের এ কথা জানান জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের গঠিত তদন্ত কমিটির চেয়ারম্যান।
ফোনালাপে নূর হোসেনকে পালাতে সহায়তার প্রশ্নে নারায়ণগঞ্জের সংসদ সদস্য শামীম ওসমানকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে কি না জানতে চাইলে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব ও তদন্ত কমিটির চেয়ারম্যান বলেন, অপেক্ষা করুন, দেখতে পাবেন।কমিটির পরবর্তী পদক্ষেপ সম্পর্কে জানতে চাইলে শাজাহান আলী মোল্লা বলেন, সোমবার নারায়ণগঞ্জে গেলেই জানতে পারবেন।
রোববার বিকেলে দ্বিতীয় দফায় নারায়ণগঞ্জের সাবেক জেলা প্রশাসক মনোজ কান্তি বড়ালকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। বেলা পৌনে তিনটায় মনোজ কান্তি বড়ালকে জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করে তদন্ত কমিটি। বেলা তিনটা ৩৫ মিনিটের সময় তিনি তদন্ত কমিটির অফিস থেকে বেরিয়ে যান। তবে মিডিয়া কর্মীদের সঙ্গে কোনো কথা বলেননি তিনি।
নারায়ণগঞ্জের কাউন্সিলর নজরুল ইসলামসহ সাত খুনের ঘটনায় র্যা ব ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীসহ অন্যদের জড়িত থাকার অভিযোগ তদন্তে হাইকোর্টের নির্দেশে ৭ মে রাতে তদন্ত কমিটি করে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়।
ওই মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মো. শাহজাহান আলী মোল্লাকে চেয়ারম্যান করে সাত সদস্যের কমিটি করা হয়। এই কমিটি গণতদন্তের মাধ্যমে নারায়ণগঞ্জের অপহরণ ও হত্যার সঙ্গে প্রশাসনের কোনো সদস্য বা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কোনো সদস্যের প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ ভূমিকা ও সংশ্লিষ্টতা রয়েছে কি না, তা উদঘাটন করবে।
কমিটির সদস্যরা হলেন জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের উপসচিব মো. আব্দুল কাইয়ুম সরকার ও আবুল কাশেম মহিউদ্দিন, আইন ও বিচার বিভাগের উপসচিব মো. মোস্তাফিজুর রহমান ও মো. মিজানুর রহমান খান, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের উপসচিব মো. শফিকুর রহমান ও সাঈদ মাহমুদ বেলাল হায়দার।
অন্যদিকে, নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনে উপ-নির্বাচনে নাগরিক ঐক্যের উপদেষ্টা, সাবেক এমপি ও জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক আহবায়ক এস এম আকরাম স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার ঘোষণা দিয়েছেন। সোমবার দুপুরে নারায়ণগঞ্জ প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলনে এই তিনি ঘোষণা দেন। পরে তিনি জেলা নির্বচন অফিস থেকে মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেন।
সংবাদ সম্মেলনে এস এম আকরাম বলেন, নারায়ণগঞ্জ-৫(শহর-বন্দর) আসনের সাংসদ নাসিম ওসমানের মৃত্যুর পর আসনটি শুন্য হলে সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতার কারণে নির্বাচন কমিশন তফসিল ঘোষণা করলে নেতাকর্মীদের অনুরোধে আমি নির্বাচনে অংশ নেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। তিনি বলেন, নারায়ণগঞ্জের রাজনীতিতে আমার গ্রহণযোগ্যতা রয়েছে এবং এলাকার জনগণ আমাকে চায়। তাই ২৬ জুন অনুষ্ঠিত নির্বাচনে সমর্থন থাকলেও আওয়ামী লীগ ছাড়াও বিএনপিসহ অন্যান্য দলের বিপুল ভোটে জয়ী হবো বলে আশা করছি।
তিনি বলেন, মহাজোটের অস্বিত্ব নেই। জাতীয় পার্টি বিরোধী দলে। তাই এই নির্বাচনে আওয়ামী লীগের কোন প্রার্থী না দিলেও আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী সমর্থকদের বিপুল সংখ্যক ভোট পাবো। আর এই নির্বাচনে বিএনপি অংশ না নিলে বিএনপির ভোট তো আওয়ামী লীগ ও জাতীয় পার্টিতে যাবে না- তাদের ভোটও আমিই পাবো। সাংবাদিকদের অপর প্রশ্œের জবাবে এস এম আকরাম বলেন, নারায়ণগঞ্জে সাত খুনসহ গুম ও খুনের ঘটনায় সরকার এমনিতেই নাজেহাল অবস্থা। তাই সরকার এই নির্বাচনে কারচুপির মাধ্যমে আরেকটি মাগুরার নির্বাচন করতে চাইবে না। তাহলে সরকার পতনের আন্দোলন শুরু হয়ে যাবে।