11দৈনিক বার্তাঃ জনপ্রিয়তা যাচাইয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে নিজের সংসদীয় আসনে (কুমিল¬া-২) নির্বাচনে লড়তে চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দিয়েছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য এম কে আনোয়ার।

সময় থাকতে দমন-নিপীড়ন বন্ধ করে মানুষের দাবি পূরণের আহ্বান জানিয়ে তিনি হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, হত্যা, গুম, অপহরণ, লুটপাট বন্ধ করুন। সব জনগণের হিসাবের খাতায়  লেখা হচ্ছে। সব অপকর্মের জবাব দিতে হবে।রোববার বিকেলে জাতীয়  প্রেস ক্লাবে জাতীয়তাবাদী মহিলা দল আয়োজিত এক স্মরণ সভায় তিনি এ চ্যালেঞ্জ দিয়ে এসব কথা বলেন।

বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা ও সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের ৩৩তম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে এ স্মরণ সভার আয়োজন করা হয়। এতে সভাপতিত্ব করেন সংগঠনের সভানেত্রী নূরে আরা সাফা।প্রধানমন্ত্রীকে উদ্দেশ করে তিনি বলেছেন, আমি এখন এমপি-মন্ত্রী কিছুই না। তারপরও আমি আপনাকে চ্যালেঞ্জ করছি। এখন নির্বাচন দিয়ে আপনি আমার নির্বাচনী এলাকায় প্রার্থী হন। আমিও প্রার্থী হব। যদি আপনি জয়ী হতে পারেন তাহলে সালাম দিয়ে আপনাকে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে  মেনে নেব।

জিয়াউর রহমান আওয়ামী লীগকে ধ্বংসের ষড়যন্ত্র করেছিলেন সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রীর দেয়া বক্তব্যের সমালোচনা করে এম কে আনোয়ার বলেন, “জিয়াউর রহমান আওয়ামী লীগের সৃষ্টি করেছেন। আর চতুর্থ সংশোধনীর মাধ্যমে আওয়ামী লীগসহ অন্যান্য রাজনৈতিক দল ধ্বংস করেছিলেন। সংবাদপত্রে স্বাধীনতা খর্ব করেছিলেন।জিয়াউর রহমানের স্বাধীনতার ঘোষণা নিয়ে সরকারি দলের সমালোচনার জবাবে তিনি বলেন, জিয়াউর রহমান না হলে হয়তো ইতিহাস ভিন্নতর হতো। তিনি (জিয়াউর রহমান) যে স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়েছেন তা আওয়ামী লীগের অনেক নেতার লেখা বইয়ে প্রমাণ রয়েছে। সবশেষ বাংলাদেশের প্রথম প্রধানমন্ত্রী তাজ উদ্দিন আহমেদের মেয়ে শারমিন আহমেদের লেখা বইয়ে প্রমাণ দিয়েছেন।

প্রধানমন্ত্রীকে উদ্দেশ করে তিনি বলেন, আমি এখন এমপি-মন্ত্রী কিছুই না। তারপরও আমি আপনাকে চ্যালেঞ্জ করছি। এখন নির্বাচন দিয়ে আপনি আমার নির্বাচনী এলাকায় প্রার্থী হন। আমিও প্রার্থী হব। যদি আপনি জয়ী হতে পারেন তাহলে সালাম দিয়ে আপনাকে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে মেনে নেব।প্রধানমন্ত্রীকে উদ্দেশ্য করে তিনি বলেছেন, যদি নিজেকে বৈধ জনপ্রতিনিধি মনে করে থাকেন, তাহলে আমার আসনে নির্বাচনে লড়ুন, আমার সঙ্গে যদি জয়লাভ করতে পারেন তাহলে আমি আপনাকে সালাম করবো।

তিনি শেখ হাসিনার উদ্দেশে বলেন, আপনার বাবা (বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান) ক্ষমতায় এসে বাকশাল কায়েম করেন। তিনি জনমত প্রকাশ বন্ধ করে  দেন, রক্ষীবাহিনী গঠন করে নিজেকে রক্ষার  চেষ্টা করেন। কিন্তু তার শেষ রক্ষা হয়নি। আপনিও ভিন্ন কায়দায় বাকশাল কায়েম করে  শেষ রক্ষা পাবেন না।

বিনা ভোটে ক্ষমতায় এসে সরকার খুন-গুম-অপহরণ করাচ্ছে অভিযোগ করে বিএনপির স্থায়ী কমিটির এ সদস্য বলেন, শেখ মুজিবুর রহমানের মতো তার মেয়েও বাকশাল কায়েম করেছেন। ভিন্নমত প্রকাশ করতে দেওয়া হচ্ছে না। সভা-সমাবেশ করতে দেওয়া হচ্ছে না। বিরোধী দল দমন-নিপীড়নে সরকার উন্মত্ত হয়ে উঠেছে। এমনকি আইনজীবীদেরও কোনো মত প্রকাশ করতে দেওয়া হচ্ছে না।

তিনি বলেন, জিয়াউর রহমানের নেতৃত্বে আমরা স্বাধীনতা যুদ্ধ করেছিলাম গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার জন্য, মানুষের মুক্তির জন্য। কিন্তু সে লক্ষ্য আওয়ামী লীগ বরাবরই ধ্বংস করে দিতে চাইছে।

এম কে আনোয়ার বলেন, তাদের কাছে জনগণের জানমালের কোনো মূল্য নেই। তারা অর্থ ও ক্ষমতার জন্য বিরোধী দলের  নেতাকর্মীদের হত্যা-গুম-অপহরণ করে চলেছে। এখন কেবল বিরোধী দলই নয়, নিজেরা নিজেরাই মারামারি-খুনোখুনি করছে। তাদের এসব নৃশংস কর্মকাণ্ডে মানুষ আতঙ্কিত হয়ে পড়েছে। মানুষ এই সরকারের হাত  থেকে মুক্তি চায়।

বিএনপির এ  জ্যেষ্ঠ নেতা বলেন, হত্যা, গুম, অপহরণে ক্ষতিগ্রস্থ২২টি পরিবারের লোকজনের সঙ্গে দেখা করে তাদের সান্ত্বনা দিতে চেয়েছিলেন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। কিন্তু সরকার রমনার ইনস্টিটিউশন অব ইঞ্জিনিয়ার্সে পরিবারগুলোর সঙ্গে খালেদাকে দেখা করার সুযোগ দেয়নি। অবস্থা এমন দাঁড়িয়েছে, কেউ শোকাহত হয়ে পড়লে তাকে কাঁদতেও দিচ্ছে না সরকার।

ভারত থেকে ১০০ ক্যাডারকে দুর্ধষ প্রশিক্ষণ দিয়ে এনে তাদের মাধ্যমে গুম-অপহরণ-হত্যা করানো হচ্ছে বলেও অভিযোগ করেন তিনি।

এম কে আনোয়ার বলেন, এতো কিছুর পরও প্রধানমন্ত্রী যদি মনে করে থাকেন তিনি জনপ্রতিনিধি আছেন, তাহলে চ্যালেঞ্জ দিচ্ছি, আমার আসনে নির্বাচন করুন। যদি জয়লাভ করতে পারেন, তাহলে আমি আপনাকে সালাম করবো।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির এ জ্যেষ্ঠ সদস্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেন, দেশ-জাতিকে রেহাই দিতে অবিলম্বে নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীন নির্বাচন দিয়ে একটি গণতান্ত্রিক সরকারকে রাষ্ট্রপরিচালনার সুযোগ দিন।

জাতীয়তাবাদী মহিলা দলের সভাপতি নূরে আরা সাফার সভাপতিত্বে স্মরণসভায় বক্তব্য রাখেন সংগঠনের বিএনপির যুগ্ম-মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী আহমেদ, মহিলা দলের সাধারণ সম্পাদিকা শিরিন সুলতানা, সহ-সভাপতি রাবেয়া সিরাজ, শীর্ষ নেত্রী রওশন আরা ফরিদ, বিলকিস জাহান, নেওয়াজ হালিমা আরলী প্রমুখ।