দৈনিক বার্তাঃ দেশজুড়ে মাসখানেক ধরে চলছে দাবদাহ। ভাপসা গরমে হাঁসফাস নাগরিক জীবন। বৃষ্টির দেখা নেই তপ্ত রাজধানীসহ সারাদেশে। প্রচণ্ড গরমে নাভিশ্বাস জনজীবনে। গত দশ দিনে এক দিনও আকাশ ভেঙ্গে আসেনি কাক্ষিত বৃষ্টি, গর্জে ওঠেনি মেঘ, কালো হয়েও হয়নি আকাশ!অবশেষে প্রতীক্ষার অবসান ঘটিয়ে জ্যৈষ্ঠ মাসের দশ দিন পেরিয়ে দেখা মিললো সেই কাক্ষিত বৃষ্টির। অবশেষে রাজধানীতে নামল স্বস্তির বৃষ্টি। শনিবার দুপুরের পরপরই বৃষ্টি হয়েছে। ভারী বর্ষণের শীতল হাওয়া জুড়িয়ে দিয়ে গেছে রাজধানীবাসীর তপ্ত প্রাণ। এই বৃষ্টিটুকুর জন্যই চাতকের মতো অপেক্ষায় ছিলেন সবাই।বৃষ্টিতে মানুষ স্বস্তি ফিরে পেলেও রাস্তায় জমে থাকা পানির কারনে চলাচলে ভোগান্তিও কম ছিল না।
শনিবার সকাল থেকে রাজধনীর আকাশ কিছুটা মেঘাচ্ছন্ন ছিল।মেঘ থাকলেও গরম কমেনি। দেশজুড়ে মাসখানেক ধরে চলছে দাবদাহ। ভাপসা গরমে হাঁসফাস নাগরিক জীবন। লাফিয়ে লাফিয়ে বেড়েছে তাপ মাত্রা। মাঝে মাঝে বৃষ্টি হলেও তার স্থায়িত্ব ছিল কম। বৃষ্টি শেষ হলেই গরম বেড় যায়। যতক্ষণ বৃষ্টি ততক্ষণই স্বস্তি। সবশেষ রাজধানীতে ২৬ এপ্রিল সন্ধ্যায় হালকা বৃষ্টি হয়েছিল।
দুঃষহ গরমের পর হঠাৎ করে রাজধানীতে এক পশলা বৃষ্টিতে যেন শান্তির পরশ নিয়ে আসে সাবার প্রাণে। এতে স্বস্তির নি:শ্বাস নেয় নগরবাসী। শনিবার দুপুর পৌণে তিনটার দিকে রাজধানীর বিভিন্ন জায়গায় ১৫/২০ মিনিট ধরে বৃষ্টি হয় বলে জানা গেছে। মুষলধারে বৃষ্টি না হলেও ঝিরিঝিরি বৃষ্টিতে ভিজতে দেখা গেছে অনেককে। বৃষ্টির পর যানজটের সৃষ্টি হয়। শনিবার দুপুরে রাজধানীর বেশ কয়েকটি জায়গায় বৃষ্টি নামে। দুপুর ১টায় ঝড়া শুরু হয়ে বৃষ্টি চলে বিকেল ৩টা পর্যন্ত।
বিকেল ৩টা পর্যন্ত ২৩ মিলিমিটার বৃষ্টি রেকর্ড করেছে আবহাওয়া দপ্তর। তবে বৃষ্টির কারণে তাপমাত্রা ৩৭ থেকে কমে ৩২ ডিগ্রি সেলসিয়াসে এসে ঠেকেছে।বৃষ্টি হয়েছে আগারগাঁও, শ্যামলী, মোহাম্মদপুর, মিরপুর, ফার্মগেট, প্রেসক্লাব, বসুন্ধরা আবাসিক এলাকা ও উত্তরায়। এর আগে সর্বশেষ গত ১৩ মে বৃষ্টি হয় ঢাকায়।
রাজধানী ছাড়াও বৃষ্টি হয়েছে দেশের বেশ কয়েকটি জেলায়। আরও বৃষ্টিপাতের পূর্বাভাস দিয়েছে আবহাওয়া দপ্তর।জ্যৈষ্ঠের দাবদাহ কমাতে মাঝে মাঝেই নামবে এমন বৃষ্টি, এটাই এখন চাওয়া তাপক্লান্ত রাজধানীবাসীর। এদিকে, পশ্চিম-মধ্য বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন এলাকায় সৃষ্ট নিম্নচাপটি দুর্বল হয়ে লঘুচাপের ফলে এ বৃষ্টি হয় বলে আবহাওয়া সূত্রে জানা গেছে।
আবহাওয়া কর্মকর্তা রাশেদুজ্জামান জানান, লঘুচাপটি এখন পশ্চিম-উত্তরপশ্চিম দিকে সরে গিয়ে একই এলাকায় অবস্থান করছে। লঘুচাপের ফলে পশ্চিমমধ্য বঙ্গোপসাগরে গভীর সঞ্চালনশীল মেঘমালার সৃষ্টি হয়েছে। এর প্রভাবে পশ্চিম মধ্য বঙ্গোপসাগর ও তত্সংলগ্ন বাংলাদেশের উপকূলীয় এলাকায় ঝড়ো হাওয়া ও বৃষ্টি হতে পারে।
চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, মংলা এবং পায়রা সমুদ্র বন্দরসমূহকে তিন নম্বর স্থানীয় সতর্কতা সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে।রাজধানীর বাইরেও বিভিন্ন জেলা থেকে বৃষ্টির খবর পাওয়া গেছে। বঙ্গোপসাগরে নিম্নচাপের প্রভাবেই এই বৃষ্টিপাত বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অধিদফতর।
উত্তর বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট গভীর সঞ্চালনশীল মেঘমালার কারণে মংলা সমুদ্র বন্দরসহ দেশের সমুদ্র বন্দরসমূহকে ৩ নম্বর স্থানীয় সতর্ক সংকেত শনিবারও বহাল রেখেছে আবহাওয়া অফিস।এছাড়া সাগর ও সুন্দরবনে অবস্থানরত মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলারসমূহকে পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত উপকূলের কাছাকাছি থেকে সাবধানে চলাচল করতে বলা হয়েছে।
এর আগে শুক্রবার দুপুরে সাগরে সৃষ্ট নিম্নচাপের কারণে চট্টগ্রাম, মংলা, পায়রা ও কক্সবাজার বন্দর ও উপকূলীয় এলাকায় ৩ নম্বর সতর্ক সংকেত জারি করা হয়।এদিকে, নিম্নচাপের প্রভাবে শনিবার সকাল থেকে মংলা ও আশপাশের উপকূলীয় এলাকার ওপর দিয়ে থেমে থেমে বৃষ্টি হচ্ছে। রোদ না থাকলেও প্রচণ্ড ভ্যাপসা গরম পড়ছে।দূর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ার কারণে মংলা বন্দরে অবস্থানরত সার ও ক্লিংকারবাহী দেশী-বিদেশি জাহাজে পণ্য বোঝাই ও খালাস কাজ ব্যাহত হচ্ছে।
শনিবার সকাল ৯টা থেকে আগামী ২৪ ঘন্টার আবহাওয়ার পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, ঢাকা, রাজশাহী, রংপুর, খুলনা, বরিশাল, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের দু-এক জায়গায় অ¯’ায়ীভাবে দমকা অথবা ঝড়ো হাওয়াসহ বৃষ্টি অথবা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। সেই সাথে কোথাও কোথাও মাঝারি ধরনের ভারী বর্ষণও হতে পারে।রাজশাহী, যশোর এবং কুষ্টিয়া অঞ্চলসমূহের উপর দিয়ে তীব্র তাপপ্রবাহ এবং রাজশাহী ও খুলনা বিভাগের অবশিষ্ট অঞ্চলসহ ঢাকা ও রংপুর বিভাগ এবং রাঙ্গামাটি, কুমিল¬া, চাঁদপুর, মাইজর্দীকোর্ট, ফেনী, বরিশাল ও পটুয়াখালী অঞ্চলসমূহের উপর দিয়ে মৃদু থেকে মাঝারি ধরনের তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে । মৃদু থেকে মাঝারি ধরনের এই তাপপ্রবাহ অব্যাহত থাকতে পারে।
সারা দেশে দিনের তাপমাত্রা ১ থেকে ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস হ্রাস পেতে পারে এবং রাতের তাপমাত্রা প্রায় অপরিবর্তিত থাকতে পারে।আবহাওয়া অধিদফতরের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে আজ একথা বলা হয়।ঢাকায় সূর্যাস্ত ৬টা ৩৮মিনিটে এবং রোববার সূর্যোদয় ভোর ৫টা ১২ মিনিটে।আগামী ৭২ ঘন্টার আবহাওয়ার অবস্থা সম্পর্কে বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়,এ সময়ে বৃষ্টিপাতের পরিমাণ বৃদ্ধি পেতে পারে।আবহাওয়া দৃশ্যপটের সংক্ষিপ্তসারে বলা হয়,মধ্য বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন এলাকায় সৃষ্ট নি¤œচাপটি ক্রমেই দুর্বল হয়ে লঘুচাপে পরিণত হয়ে উত্তরপশ্চিম দিকে সরে গিয়ে একই এলাকায় অবস্থান করছে। এটি আরোও দুর্বল হয়ে উত্তর-উত্তর পশ্চিম দিকে সরে যেতে পারে।