1দৈনিক বার্তাঃ ষষ্ঠ পর্যায়ের উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে ১২টি উপজেলার ছয়টিতে ২১৭ জন ভোটারকে ভয়ভীতি দেখানো হয়। এছাড়াও আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবহারের পরিমাণও ছিল অনেক  বেশি।এবারের উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে ভোটকেন্দ্রে যে হারে সহিংসতা হচ্ছে এ বিষয়ে নির্বাচন কমিশন কঠোর ব্যবস্থা না নিলে এক সময়ে ভোটাররা ভোট দিতেই যাবে না বলে জানিয়েছে ইলেকশন ওয়ার্কিং গ্র“প।

বুধবার জাতীয় প্রেস ক্লাবের কনফারেন্স রুমে ষষ্ঠ পর্যায়ের উপজেলা নির্বাচন পর্যবেক্ষণের প্রাথমিক বিবৃতি প্রদান উপলক্ষে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে সংগঠনটি এসব তথ্য জানায়।সংবাদ সম্মেলনে আয়োজক কমিটির সদস্য কামরুল হাসান মঞ্জুর সঞ্চালনায় লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন আয়োজক সংগঠনের পরিচালক আব্দুল আলীম।

জাল  ভোটের কারণে চতুর্থ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের ষষ্ঠ ধাপে মোট ১২টি উপজেলায় পরিসংখ্যানে  ভোট প্রদানের প্রকৃত চিত্র উঠে আসেনি বলে উল্লেখ করেছে ইলেকশন ওয়ার্কিং গ্র“প।

ইলেকশন ওয়ার্কিং  গ্র“প অভিযোগ করে জানায়, ষষ্ঠ ধাপের নির্বাচনে দিনব্যাপী সহিংসতা এবং  ভোট কার্যক্রমে অনিয়মের যে ঘটনাগুলো ঘটেছে  সেগুলোর এর  বেশির ভাগই কুমিল্লা আদর্শ সদর এবং কুমিল্লা সদর দক্ষিণ উপজেলায় ঘটেছে।

ইলেকশন ওয়ার্কিং গ্র“প ১৯ মে ২০১৪ অনুষ্ঠিত ষষ্ঠ পর্যায়ের উপজেলা নির্বাচন ফলপ্রসূভাবে পর্যবেক্ষণ করার লক্ষ্যে (ইডব্লিউজি) ১২টি উপজেলার ৩৫৮টি কেন্দ্র বাছাই করে  মোট ৩৫৮ জন পর্যবেক্ষক নিয়োগ করে। নির্বাচন কমিশন বাংলাদেশ কর্তৃক  গেজেট আকারে প্রকাশিত বিভিন্ন উপজেলার ভোট কেন্দ্রের পূর্ণাঙ্গ তালিকা  থেকে  দৈব চয়নের মাধ্যমে এসব  কেন্দ্র বাছাই করে এগুলোতে পর্যবেক্ষক নিয়োগ করা হয়।

কুমিল্ল সদর দক্ষিণ উপজেলা : এ উপজেলার বিভিন্ন ভোট কেন্দ্রে ব্যাপকমাত্রায় সহিংসতা এবং নির্বাচনী অনিয়মের ঘটনা ঘটেছে। পর্যবেক্ষণ অনুযায়ী একটি  ভোট কেন্দ্রের বেশ কয়েকটি বুথে একজন প্রার্থীর ৫-৬ জন সমর্থক প্রবেশ করে  পোলিং এজেন্টদের বের করে দেয়, উল্লেখযোগ্য সংখ্যক ব্যালট  পেপার নিয়ে সেগুলোতে সিল মেরে বাক্সে ঢুকিয়ে  দেয়।

অন্য একটি  ভোট কেন্দ্রে একদল  লোক বেশ কয়েকটি ছোট হাতবোমার বিস্ফোরণ ঘটিয়ে ব্যাপক সংখ্যক ব্যালট পেপার নিয়ে সেগুলোতে সিল  মেরে বাক্সে ঢুকিয়ে দেয়। এ উপজেলার পর্যবেক্ষিত  ভোট কেন্দ্রের মধ্যে আরও ৫টি  কেন্দ্রে ব্যালট পেপার নিয়ে তাতে সিল মারার ঘটনা ঘটেছে। অধিকন্তু স্থানীয়রা অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে কিছু লোককে ২টি কেন্দ্রে ঘোরাফেরা করতে দেখা গেছে।

কুমিল্লা আদর্শ সদর উপজেলা : এ উপজেলার ৫টি ভোট কেন্দ্রে ব্যালট পেপার নিয়ে তাতে সিল মারার ঘটনা ঘটেছে। একটি কেন্দ্রের ব্যালট বাক্সগুলোতে আগে  থেকেই ব্যালট পেপার রাখা ছিল বলে ইডব্লিউজি পর্যবেক্ষকদের কাছে  গোচরীভূত হয়েছে।

অন্যদিকে পর্যবেক্ষিত ৩টি ভোট কেন্দ্রে আওয়ামী লীগ সমর্থিত এবং বিএনপি সমর্থিত প্রার্থীদের সমর্থকদের মধ্যে মারামারির ঘটনা ঘটেছে। একটি কেন্দ্রে গুলি বিনিময়ের ঘটনা ঘটেছে, অবশ্য অন্য একটি কেন্দ্রে কর্মকর্তাদের ভয়ভীতি  দেখানোর সময় পুলিশ দুষ্কৃতকারীদের কেন্দ্র  থেকে  বের করে  দেয়।

কামারখন্দ উপজেলা :পর্যবেক্ষিত ২টি ভোট কেন্দ্রে আওয়ামী লীগ সমর্থিত এবং বিএনপি সমর্থিত প্রার্থীদের সমর্থকদের মধ্যে সংর্ঘষের ঘটনা ঘটেছে।এতে তিনি উল্লেখ করেন, ষষ্ঠ পর্যায়ের নির্বাচনে দিনব্যাপী নির্বাচনী সহিংসতা এবং  ভোট কার্যক্রমে উল্লেখযোগ্য অনিয়মের ঘটনা ঘটেছে।

সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, পর্যবেক্ষণকৃত  ভোটকেন্দ্রগুলোতে  ভোটপ্রদানের হার ছিল শতকরা ৫৮ ভাগ। তবে  যে হারে সহিংসতা হয়েছে এ বিষয়ে নির্বাচান কমিশন এখনই কঠোর ব্যবস্থা না নিলে এক সময়ে ভোটাররা  ভোট দিতেই যাবে না। আর এতে করে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াটি সম্পূর্ণ  ভেঙে পড়বে।

৬ষ্ঠ ধাপের উপজেলা নির্বাচনে কুমিল্লা সদর দক্ষিণ উপজেলা, কুমিল্লা আদর্শ সদর উপজেলায় সহিংসতার ঘটনা সবচেয়ে বেশি ঘটেছে বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।

সংগঠনটির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ১২টি উপজেলার মধ্যে ছয়টিতেই  ভোট জালিয়াতির ঘটনা ঘটেছে ৩৮টি, চার উপজেলায় ভোটকেন্দ্রের ভেতরে সহিংসতার ঘটনা ঘটেছে ৪০টি, ছয় উপজেলায়  ভোটারদের ভয়-ভীতির ঘটনা ঘটেছে ২১৭টি, পাঁচ উপজেলায় নির্বাচনী প্রচারণায় আইন অমান্যে ৩৭টি, এক উপজেলায় ভোটারকে  ভোট প্রদানে বাধা আটটি, এক উপজেলায় ভোটকেন্দ্র বন্ধ  ঘোষণা ১২টি, চার উপজেলায় পোলিং এজেন্টদের কেন্দ্র থেকে বের করে দেয়ার ঘটনা ৪১টি, তিন উপজেলায় ভোট কেন্দ্রের ভেতরে  গ্রেফতার ১১টি এবং দুই উপজেলায় ইডব্লিউজি’র পর্যবেক্ষকদের গণনা প্রক্রিয়া দেখতে না দেয়ার ঘটনা ঘটেছে ২২টি।
সংবাদ সম্মেলনে সংগঠনটির বক্তারা বলেন, রাজনৈতিকভাবে স্থানীয় পর্যায়ে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার কারণেই সহিংতা  বেশি হয়েছে। দলীয়ভাবে নির্বাচন পরিচালনা করা হয়েছে। নির্বাচন কমিশন প্রথম দুই ধাপে সহিংসতার ব্যাপারে যেহেতু কিছু ব্যবস্থা নিয়েছিল, চাইলে পরবর্তী ধাপগুলোতেও ব্যবস্থা নিতে পারতেন। কিন্তু পরবর্তী সময়ে আর নিরপেক্ষ ভূমিকা পালন করেনি নির্বাচন কমিশন।

প্রসঙ্গত, মোট ১২টি উপজেলার ৩৫৮ টি কেন্দ্রে পর্যবেক্ষক নিয়োগ করে উপজেলার নির্বাচনে এসব তথ্য সংগ্রহ করা হয়েছে।

সংবাদ সম্মেলনে আরো উপস্থিত ছিলেন, সংগঠনটির সদস্য বিনয় কৃঞ্চ মল্লিক, তালেয়া  রেহমান, মো. আব্দুল আলীম, প্রফেসর ড. নাজমুল আহসান কলিমুল্লাহ, মো. হারুন অর রশিদ প্রমুখ।