দৈনিক বার্তাঃ তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু বলেছেন, জঙ্গিবাদ,দুর্নীতি ও দলবাজি এই তিনটি প্রশ্নে গণমাধ্যমের কেউ সরব, কেউ নীরব। যাঁরা নীরবতা পালন করেন, তাঁরা সৎ ও বস্তুনিষ্ঠ সাংবাদিকতা করছেন না।বুধবার সকালে বাংলাদেশ প্রেস ইনস্টিটিউট (পিআইবি) আয়োজিত প্রয়াত বরেণ্য সাংবাদিক এবিএম মূসার স্মরণসভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তথ্যমন্ত্রী এ কথা বলেন।
বস্তুনিষ্ঠ সাংবাদিকতা চর্চার মাধ্যমে এবিএম মূসাকে শ্রদ্ধা জানানো যায় বলে উল্লেখ করেন তথ্যমন্ত্রী। পিআইবি মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত স্মরণসভায় তিনি বলেন, জঙ্গিবাদ, দুর্নীতি ও দলবাজি প্রসঙ্গে সাংবাদিকেরা সমালোচনামুখর। কিন্তু এর দোসর নেতা- নেত্রী সম্পর্কে নীরবতা পালন করেন। আমি মনে করি, এটা নৈতিকতা-বর্জিত বস্তুনিষ্ঠহীন সাংবাদিকতা। এ বিষয়ে বিভক্ত গণমাধ্যম গণতন্ত্রের জন্য একটা বড় দুর্বলতা।
সাংবাদিকদের দলীয় রাজনীতির বাইরে থাকার আহ্বান জানিয়ে তথ্যমন্ত্রী বলেন, মুখ দেখে, দল দেখে সাংবাদিকতা হয় না। সাংবাদিক যিনি, তিনি নেতা-নেত্রীর লেজুড়বৃত্তি করবেন না। যাঁরা করেন, তাঁদের বলব নেতা-কর্মীদের লেজুড়বৃত্তি ছেড়ে দলে যোগ দিন। তা হলে গণমাধ্যমও রক্ষা পাবে, আর রাজনীতির জন্যও মঙ্গল হবে। যারা সাংবাদিকতার নামে লেজুরবৃত্তি করে দলভারি করছেন তাদের গণমাধ্যম ছেড়ে যেকোনো রাজনৈতিক দলে যোগ দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু এমপি।
তিনি বলেন, দল দেখে বস্তুনিষ্ঠ সাংবাদিকতা হয় না। এবিএম মূসা সারা জীবন সংবাদপত্রের স্বাধীনতা ও বস্তুনিষ্ঠ সংবাদিকতার জন্য সংগ্রাম করে গেছেন। তাকে কেবল আলোচনার মধ্য দিয়ে নয়, কর্মের মধ্য দিয়ে স্মরণ করতে হবে। তিনি ছিলেন গণমাধ্যমের অভিভাবক। তার মৃত্যুতে বর্তমানে গণমাধ্যম জগৎ অভিভাবকশূন্য রয়েছে।তিনি বলেন, গণমাধ্যমকে জঙ্গিবাদ, দলবাজিমুক্ত করার সময় এসেছে। একইসঙ্গে গণমাধ্যমের বস্তুনিষ্ঠ অবস্থান নিশ্চিত করে বিভক্ত গণমাধ্যমের ঐক্য ফিরিয়ে আনারও চেষ্টা করতে হবে।এবিএম মূসাও গণমাধ্যমকে একটি প্লাটফর্মে দাঁড় করার চেষ্টা করেছিলেন।
সভায় গণমাধ্যম শক্তিশালী করতে সাংবাদিকদের ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানান প্রবীণ সাংবাদিক কামাল লোহানী। তিনি বলেন, এবিএম মূসা মানুষকে ভালোবাসতেন, দেশকে ভালোবাসতেন। বঞ্চিতদের অধিকার পাইয়ে দেওয়ার ব্যবস্থা করেছেন তিনি।মূসা ভাইকে স্মরণ করতে হলে সাংবাদিকদের সাহসী হওয়া ছাড়া পথ নেই।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রীর তথ্য উপদেষ্টা ইকবাল সোবহান চৌধুরী বলেন, এবিএম মূসা সাংবাদপত্রের স্বাধীনতার জন্য কলম সৈনিক হিসেবে সংগ্রাম করেছেন, কিন্তু স্বাধীনতা ভোগ করতে পারেননি।
বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের (বিএফইউজে) সভাপতি মঞ্জুরুল আহসান বুলবুল বলেন, এবিএম মূসা ছিলেন ব্যবহারিক সংবাদিকতার জনক। তিনি ছিলেন সাংবাদিকদের শিক্ষক ও অভিভাবক। পেশাদারিত্বে তিনি ছিলেন আপোসহীন।তার মৃত্যুতে সাংবাদিকদের পেশাদারিত্বেও ভাটা পরেছে।এ সময় এবিএম মূসার পেশাদারিত্ব নিয়ে একটি গ্রন্থ প্রকাশ করার জন্য পিআইবি কর্তৃপক্ষের প্রতি আহ্বান জানান তিনি।
পিআইবি’র চেয়ারম্যান হাবিবুর রহমান মিলনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি আলতাফ মাহমুদ, পিআইবি’র মহাপরিচালক শাহ আলমগীর, প্রবীণ সাংবাদিক কামাল লোহানী এবং এবিএম মূসার বড় মেয়ে পারভীন সুলতানা ঝুমা বরেণ্য এই সাংবাদিকের জীবন ও কর্মের বিভিন্ন দিক নিয়ে স্মৃতিচারণ করেন।