দৈনিক বার্তাঃ বিএনপি নেতা মওদুদ আহমদ,খন্দকার মোশাররফ হোসেন ও এম এ হাশেমের বিরুদ্ধে সম্পদের হিসাব বিবরণীর মামলা চলার পক্ষে রায় দিয়েছে আপিল বিভাগ।বুধবার প্রধান বিচারপতি মো. মোজাম্মেল হোসেনের নেতৃত্বে আপিল বিভাগের চার সদস্যের বেঞ্চ এই রায় দেয়।এর মধ্যে মামলা বাতিলে বিএনপির স্থায়ী কমিটির দুই সদস্য মওদুদ ও মোশাররফ হোসেনের আবেদন খারিজ করেছিল হাই কোর্ট। তারা ওই খারিজ আদেশের বিরুদ্ধে আপিল বিভাগে যান, যেখানে তাদের আবেদন খারিজ হয়ে গেল।
এতে নিম্ন আদালতে তাঁদের বিরুদ্ধে মামলার কার্যক্রম চলতে আর কোনো আইনগত বাধা নেই বলে জানিয়েছেন দুদকের আইনজীবী খুরশীদ আলম খান।২০০৭ সালের ৩ জুলাই তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) মোশাররফ ও মওদুদের সম্পদের হিসাব বিবরণী চেয়ে নোটিশ দেয়। পরে তাঁদের দেওয়া সম্পদের বিবরণীর বাইরেও দুদক জ্ঞাত-আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জন ও সম্পদের তথ্য পায়। পরে এ নিয়ে তাঁদের বিরুদ্ধে মামলা করে দুদক।
খন্দকার মোশাররফ ও মওদুদ আহমদ দুদকের এই মামলা বাতিলের আবেদন করলে হাইকোর্ট তা খারিজ করে দেন। পরে হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে তাঁরা আপিল করেন। অন্যদিকে মামলা বাতিলে বিএনপির সাবেক সাংসদ ও পারটেক্স গ্র“পের চেয়ারম্যান এম এ হাশেমের আবেদন মঞ্জুর করেছিল হাই কোর্ট। ওই রায়ের বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন কমিশনের করা আপিল মঞ্জুর করল আপিল বিভাগ।
সর্বোচ্চ আদালতের এই রায়ের ফলে মওদুদ, মোশাররফ ও হাশেমের মামলা চলতে আর কোনো বাধা নেই বলে জানিয়েছেন দুর্নীতি দমন কমিশনের আইনজীবী মো. খুরশীদ আলম খান।
জ্ঞাত আয়ের সঙ্গে অসঙ্গতিপূর্ণ মোট সাত কোটি ৩৮ লাখ ৪৮ হাজার ২৮৭ টাকার সম্পদ অর্জন এবং চার কোটি ৪০ লাখ ৩৭ হাজার ৩৭৫ টাকার তথ্য গোপনের অভিযোগে ২০০৭ সালের ১৬ সেপ্টেম্বর মওদুদ আহমদের বিরুদ্ধে গুলশান থানায় এ মামলা করে দুদক।
সম্পদের হিসাব বিবরণী চেয়ে দুদক ২০০৭ সালের ৩ জুলাই পারটেক্স গ্র“পের চেয়ারম্যান এম এ হাশেমকে চিঠি দেয়। পরে জ্ঞাত আয় বহির্ভূত সম্পদ অর্জন ও সম্পদের তথ্য গোপনের অভিযোগে তার বিরুদ্ধে ২০০৭ সালের ৫ ডিসেম্বর রমনা থানায় মামলা করে দুদক। পরের বছরের ৩০ সেপ্টেম্বর অভিযোগপত্র দেয়া হয়।
অন্যদিকে জ্ঞাত আয়ের সঙ্গে অসঙ্গতিপূর্ণ ১২ কোটি টাকার সম্পদ অর্জন এবং তিন কোটি টাকার সম্পদের তথ্য গোপনের অভিযোগে ২০০৮ সালের ১০ জানুয়ারি দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) খন্দকার মোশাররফ হোসেনের বিরুদ্ধে রমনা মডেল থানায় মামলাটি করে। ওই বছরের ১৭ সেপ্টেম্বর অভিযোগপত্র দাখিল করা হয়।
দুদকের আরেকটি মামলায় বর্তমানে কারাগারে আছেন বিএনপি-জামায়াত জোট আমলের মন্ত্রী খন্দকার মোশাররফ।
এদিকে,অবৈধভাবে বাড়ি ভোগ দখলের অভিযোগে মওদুদ আহমেদ ও তার ভাইয়ের বিরুদ্ধে করা মামলার চার্জশিট দাখিলের অনুমোদন দিয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।বুধবার রাজধানীর সেগুনবাগিচায় দুদকের প্রধান কার্যালয়ে কমিশনের নিয়মিত বৈঠকে এই মামলার চার্জশিট দাখিলের অনুমোদন দেওয়া হয়। দুদক কমিশনার সাহাবুদ্দিন চুপ্পু এ তথ্য নিশ্চিত করেন।
গত ডিসেম্বর অবৈধভাবে বাড়ি ভোগ দখলের অভিযোগে ব্যারিস্টার মওদুদ আহমেদ ও তার ভাই মঞ্জুর আহমেদের বিরুদ্ধে যে মামলা করা হয়েছিল তার চার্জশীট দাখিলের অনুমোদন দেওয়া হয়েছে এবং দুই একদিনের মধ্যেই মহামান্য আদালতে এ চার্জশিট দাখিল করা হবে।
উল্লেখ্য, ২০১৩ সালের ১৭ ডিসেম্বর প্রায় ৩০০ কোটি টাকার সরকারি সম্পত্তি ভোগদখলের অভিযোগে বিএনপি’র স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ ও তার ভাই মঞ্জুর আহমদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেছিল দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।
রাজধানীর গুলশান থানায় দুদকের উপ-পরিচালক হারুনুর রশীদ বাদি হয়ে এ মামলাটি (মামলা নং-১৮) দায়ের করেন।
মামলার অভিযোগপত্রে বলা হয়, মিসেস ইনজে মারিয়া ফ্ল্যাজ ও তার স্বামী পাকিস্তানি নাগরিক মো. এহসান স্বাধীনতার পূর্বে এন. ডাব্লিউ (এএইচ) ৬-এর ১৫৯ নম্বর বাড়িটি (১ বিঘা ১৩ কাঠা ১৪ ছটাক) রেখে দেশ ছেড়ে চলে যায়। স্বাধীনতার পরে পরিত্যক্ত বাড়িটি সরকারি সম্পত্তি হিসেবে তালিকাভুক্ত হয়। তবে মওদুদ আহমদ ক্ষমতার অপব্যবহার করে ১৯৭৮ সাল থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত অবৈধভাবে বাড়িটি ভোগদখল করে আসছিলেন। তবে পরবর্তীতে তার লন্ডন প্রবাসী ভাই মঞ্জুর আহমদের নামে ভুয়া পাওয়ার অফ পাওয়ার অ্যাটর্নির কাগজ তৈরি করে নিজেই ভাড়াটিয়া হিসেবে বাড়িটি নিজের দখলে নিয়েছেন।
কিন্তু বাড়িটি ক্রয় বাবদ কোনো টাকায় ইনজে ফ্ল্যাজের নামে কোনো ব্যাংকে টাকা জমা দেওয়া হয়নি। এতে ৩০০ কোটি টাকার অধিক সরকারি জমি ভোগদখলের মাধ্যমে আত্মসাৎ করার অভিযোগে এবং ওই বাড়ির কথিত মালিক বানানোর কাজে একে অপরের সহায়তা করার অপরাধে ১৯৪৭ সালের দুর্নীতি বিরোধী আইন ৫(২) ও দণ্ডবিধির ১০৯ ধারায় মওদুদ আহমদ ও তার ভাই মঞ্জুর আহমদের বিরুদ্ধে মামলাটি দায়ের করে দুদক।