দৈনিক বার্তাঃ বর্তমানে বাংলাদেশে মাথাপিছু আয় ১০৪৪ ডলার থেকে বেড়ে ১১৮০ ডলারে দাঁড়িয়েছে। বুধবার জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় এ ঘোষণা দেয়া হয়। বাসস।
সভায় জানানো হয়, গত কয়েক মাসে দেশে রাজনৈতিক অস্থিরতা থাকার পরও এডিপির বাস্তবায়ন হার ৫৫ শতাংশ। এ ছাড়া গত পাঁচ বছর ৬ শতাংশ জিডিপি প্রবৃদ্ধি অর্জন করেছে বাংলাদেশ। এ বছর জিডিপির প্রবৃদ্ধির হার ৬ দশমিক ১২ শতাংশ।
প্রধানমন্ত্রী ও জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির চেয়ারপারসন শেখ হাসিনা বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন। সভায় পরিকল্পনামন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল, শিল্পমন্ত্রী আমির হোসেন আমু, কৃষিমন্ত্রী বেগম মতিয়া চৌধুরী, ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি মন্ত্রী আবদুল লতিফ সিদ্দিকী, নৌপরিবহন মন্ত্রী শাজাহান খান, বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী নসর“ল হামিদসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাগণ এ সময় উপস্থিত ছিলেন।সভাশেষে পরিকল্পনামন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল একনেক পাস হওয়া ৪টি প্রকল্প বিষয়ে সাংবাদিকদের ব্রিফিং করেন।
বুধবার একনেকে ৬ হাজার ৩শ’ ৮৬ কোটি ০৭ লক্ষ টাকার ৪টি প্রকল্প পাস হয়। পাসকৃত প্রকল্প ৪টি হলো ‘পল্লী বিদুৎ বিতরণ সিস্টেমের ক্ষমতা বর্ধন’, ‘ডিজিটাল বাংলাদেশের জন্য ওয়্যারলেস ব্রডব্যান্ড নেটওয়ার্ক স্থাপন, ‘বিভাগীয় ও জেলা শিল্পকলা একাডেমী নির্মাণ’ এবং উত্তরা লেক উন্নয়ন প্রকল্প। মোট প্রকল্প বরাদ্দের মধ্যে সরকারি অর্থায়ন ১ হাজার ৮শ’ ৪৩ কোটি ৪৭ লক্ষ টাকা, প্রকল্প সাহায্য ৪ হাজার ৩শ’ ১৭ কোটি ১৫ লক্ষ টাকা এবং সংস্থার নিজস্ব তহবিল ২শ’ ২৫ কোটি ৪৫ লক্ষ টাকা। ৪টি প্রকল্পই নতুন প্রকল্প। ১টি প্রকল্প সম্পূর্ণ জিওবি অর্থায়নে বাস্তবায়িত হবে।
সভায় পল্লী বিদুৎ বিতরণ সিস্টেমের ক্ষমতা বর্ধন’ প্রকল্পটি পাস হয়। এতে ব্যয় হবে ৫ হাজার ১শ’ ৯৮ কোটি ৩৩ লক্ষ টাকা। প্রকল্পটি জিওবি, সংস্থার নিজস্ব এবং বৈদেশিক অর্থায়নে বিদ্যুৎ বিভাগের আওতায় বাংলাদেশ পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড বাস্তবায়ন করবে। প্রকল্প ব্যয়ের মোট বরাদ্দকৃত টাকার মধ্যে জিওবি ১ হাজার ২শ’ ৯৩ কোটি ৩৩ লক্ষ টাকা, সংস্থার নিজস্ব ২শ’ কোটি টাকা এবং প্রকল্প সাহায্য হিসেবে ৩ হাজার ৭শ ৫ কোটি টাকা।প্রকল্পটির বাস্তবায়নকাল জুলাই, ২০১৪ হতে জুন, ২০২০ পর্যন্ত ধরা হয়েছে।
এ প্রকল্প সম্পর্কে পরিকল্পনামন্ত্রী জানান, এ প্রকল্পের মাধ্যমে ঢাকা, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের ৩৯টি পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি’র বিতরণ নেটওয়ার্কের ক্যাপাসিটি ১৮৪০ এমভিএ বৃদ্ধির মাধ্যমে বিদ্যুতের চাহিদা মেটানো হবে। একই সাথে বিদ্যুৎ বিতরণ সিস্টেমের লস বর্তমান হার হতে ২.৫% হ্রাস করা হবে।’ প্রকল্পের কার্যক্রম সম্পর্কে বলতে গিয়ে মন্ত্রী আরও জানান, ‘এ প্রকল্পের আওতায় ৩৩ কেভির ২৭২৮ কি.মি. নতুন লাইন নির্মাণসহ ৮৮৭ কি.মি. লাইন আপগ্রেডেশন করা। ১১
কেভির ২৬৩৪ কি.মি. নতুন নির্মাণ ও আপগ্রেশেন কাজ সম্পন্ন হবে।এছাড়া, ৩৩/১১ কেভি নতুন ১১০টি বৈদ্যুতিক সাবস্টেশন, ৩১টি সুইচিং স্টেশন এবং ৩২ সেট রিভার ক্রসিং টাওয়ার নির্মাণ করা হবে।
‘ডিজিটাল বাংলাদেশের জন্য ওয়্যারলেস ব্রডব্যান্ড নেটওয়ার্ক স্থাপন শীর্ষক ৯শ’ ৫৬ কোটি ৮৪ লক্ষ টাকার অপর একটি প্রকল্প আজ একনেকে পাস হয়। ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগের আওতায়
বাংলাদেশ টেলিকমিউনিকেশন্স কোম্পানী লিঃ প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করবে। প্রকল্পটির মোট ব্যয়ের মধ্যে জিওবি ৩শ’ ৪৪ কোটি ৬৯ লক্ষ এবং প্রকল্প সাহায্য ৬শ’ ১২ কোটি ১৫ লক্ষ টাকা।এ প্রকল্প ফেবব্র“য়ারি, ২০১৪ হতে জুন, ২০১৭ এর মধ্যে বাস্তবায়ন করা হবে।
প্রেস ব্রিফিং-এ পরিকল্পনামন্ত্রী জানান, সবার জন্যে কম খরচে ইন্টারনেট এক্সেস সুবিধা দিতে ওয়্যারলেস ব্রডব্যান্ড নেটওয়ার্ক স্থাপন একাস্তভাবেই দরকার। এ প্রকল্প বাস্তবায়নের মাধ্যমে এ কাজটি করা হবে। প্রকল্পের আওতায় ঢাকার দু’টি স্থানে কোর নেটওয়ার্ক স্থাপন করা হবে। এছাড়া, ৭টি বিভাগীয় শহরসহ জেলা ও উপজেলা শহরে মোট ৬শ’ ৭০টি বেইজ ট্রান্সসিভার স্টেশন (বিটিএস) নির্মাণসহ ৩শ’ কি.মি. অপটিক্যাল ফাইবার ক্যাবল নেটওয়ার্ক ¯’াপন করা হবে।
মন্ত্রী এ সময় জানান, দেশে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি সংশ্লিষ্ট সেবার পরিধি বৃদ্ধি এবং উচ্চ গতি ও উচ্চ মান সম্পন্ন ইন্টারনেট সুবিধা পেতে প্রকল্পটি সত্যিকারভাবেই সহায়ক হবে।
‘বিভাগীয় ও জেলা শিল্পকলা একাডেমী নির্মাণ’ শীর্ষক ১শ’ ৯৩ কোটি ৯৭ লক্ষ টাকার প্রকল্পটি আজ একনেকে পাস হয়। সম্পূর্ণ জিওবি অর্থায়নে সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের আওতায় বাংলাদেশ শিল্প কলা একাডেমী প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করবে। প্রকল্পটির বাস্তবায়নকাল ধরা হয়েছে অক্টোবর, ২০১৩ হতে জুন, ২০১৭ পর্যন্ত।
এ প্রকল্পটি বাস্তবায়নের মধ্যেমে জাতীয় সংস্কৃতির উন্নয়ন সমৃদ্ধি ও প্রসারসহ কলাকুশলীদের স্ব স্ব ক্ষেত্রে দক্ষতা প্রদর্শন এবং প্রশিক্ষণের জন্য অবকাঠামোগত সুবিধা সৃষ্টি হবে। প্রকল্পের আওতায় ৩টি বিভাগীয় শিল্পকলা একাডেমী এবং ৫টি জেলা শিল্পকলা একাডেমী নির্মাণ করা হবে।এছাড়া, সভায় ৩৭ কোটি টাকা ব্যয়ে ঢাকার উত্তরাবাসীর জন্য ‘উত্তরা লেক উন্নয়ন’ শীর্ষক অপর একটি প্রকল্প পাস হয়।