দৈনিক বার্তাঃ সরকার অস্ত্রের মুখে টিকে আছে বলে মন্তব্য করে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন,হতাশার কোনো কারণ নেই। এ দেশের মানুষ সব সময় ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে সংগ্রাম করেছে। আবারো সংগ্রাম করে এই ফ্যাসিবাদ সরকারের পতন ঘটাবে।বুধবার বিকেলে জাতীয় প্রেস ক্লাবের ভিআইপি লাউঞ্জে দেশ মাতৃক পরিষদ আয়োজিত সন্ত্রাস, গুম, হত্যা: বাংলাদেশ’ শীর্ষক গোলটেবিল বৈঠকে তিনি এসব কথা বলেন।
ফেনীতে একরামুল হত্যার ঘটনা উল্লেখ করে মির্জা ফখরুল বলেন,নারায়ণগঞ্জের ঘটনার রেশ না কাটতেই আবার তারা ফেনীতে হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে। এতেই প্রমাণিত হয় যে, সরকারের কোনো ভিত্তি নেই। এমনকি আইন-শৃংখলা বাহিনীর উপরও সরকারের কোনো নিয়ন্ত্রণ নেই।
উল্লেখ্য, জেলার ফুলগাজী উপজেলা চেয়ারম্যান একরামুল হককে মঙ্গলবার সকাল ১১টার দিকে ফেনী শহরের বিলাস হোটেলের সামনে গুলিবর্ষণ ও ছুরিকাঘাতের পর গাড়িতে আগুন দিয়ে পুড়িয়ে হত্যা করে দুর্বৃত্তরা।তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ একটা দীর্ঘ ঐতিহ্যের দল। আর এই জন্যই তাদের মধ্যে ফ্যাসিবাদ সবচেয়ে বেশি। এমন একটা দলের সঙ্গে লড়াই করতে হলে দেশের জনগণকে একটু বেগ পেতে হবেই। তবুও আন্দোলন-সংগ্রাম চালিয়ে যেতে হবে।
র্যাব এখন একটা সন্ত্রাসী বাহিনীতে পরিণত হয়েছে অভিযোগ করে বিএনপি মহাসচিব বলেন, অর্থের বিনিময়ে র্যাব মানুষ হত্যা করছে। তাই এখন ভাবনার বিষয় হল, আসলে দেশে র্যা বের প্রয়োজন আছে কি-না।আওয়ামী লীগের সমালোচনা করে তিনি বলেন, এই দলটি যখনই ক্ষমতায় আসে তখনই লুটপাট শুরু করে। বহু আগে মাওলানা ভাসানী বলেছিলেন, লুটপাটের জন্য আওয়ামী লীগের নাম পরিবর্তন করে বঙ্গদেশ লুটপাট সমিতি রাখা দরকার।
তবু বিহঙ্গ, ওরে বিহঙ্গ মোর, এখনি, অন্ধ, বন্ধ কোরো না পাখা’- বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের কবিতার লাইন উদ্ধৃত করে এভাবেই কাউকে হতাশ না হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
তিনি পড়েন, যদিও সন্ধ্যা আসিছে মন্দ মন্থরে, সব সংগীত গেছে ইঙ্গিতে থামিয়া, যদিও সঙ্গী নাহি অনন্ত অম্বরে, যদিও ক্লান্তি আসিছে অঙ্গে নামিয়া, মহা-আশঙ্কা জপিছে মৌন মন্তরে, দিক্-দিগন্ত অবগুণ্ঠনে ঢাকা- তবু বিহঙ্গ, ওরে বিহঙ্গ মোর, এখনি, অন্ধ, বন্ধ কোরো না পাখা।প্রধান অতিথির বক্তব্যে মির্জা ফখরুল বলেন, এই সরকার অস্ত্রের শক্তিতে টিকে রয়েছে। কিন্তু তাতেও হতাশার কোনো জায়গা নাই। এই দেশের মানুষ সবসময় সংগ্রাম করেছে এবং জয়ী হয়েছে।ফখরুল বলেন, জনগণ সবসময় ফ্যাসিবাদি শক্তির বিরুদ্ধে লড়াই করে জয়ী হয়েছে, এবারও হবে।ফখরুল বলেন, এই সরকারের কোনো নৈতিক ভিত্তি নেই। এরা দেউলিয়া হয়ে গেছে। তাই জনগণের উপর কোনো আস্থা নেই।
ফখরুল বলেন, বিরোধীদল নির্বাচনে যেতে চাইলে তারা সেই নির্বাচনও করতে দিত না। আওয়ামী লীগ বাকশাল করেছিল এবং তারাই এখন নতুন লেবাসে একদলীয় শাসন নিয়ে আসছে বলে মন্তব্য করেন বিরোধীদলের এই নেতা।ফখরুল বলেন, আওয়ামী লীগ এই দেশকে নিজেদের ব্যক্তিগত ও পারিবারিক সম্পত্তি মনে করে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার শিক্ষাগত সামর্থ্য নিয়ে প্রশ্ন তুললেন বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা শামসুজ্জামান দুদু।
প্রধানমন্ত্রীর পড়ালেখা নিয়ে মন্তব্য করতে গিয়ে তিনি বলেন, শেখ হাসিনার পড়ালেখা এত কম তা জানতাম না।দুদু বলেন, শেখ হাসিনা বলছেন, জিয়া নাকি আওয়ামী লীগের নাম ও নিশানা মুছে দিতে চেয়েছিলেন। আমরা জানি,শেখ হাসিনার পড়ালেখা কম। কিন্তু এতটা কম, সেটা জানতাম না। জিয়াউর রহমানের আমলে তিনি নতুন করে রাজনীতিতে এসেছেন, অথচ কোনো কৃতজ্ঞতা নাই।’
এছাড়া ফেনীতে উপজেলা চেয়ারম্যান ও ফুলগাজী উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি একরামুল হক হত্যার ঘটনায় দলীয় কোন্দলই দায়ী বলে মন্তব্য করেন শামসুজ্জামান দুদু।তিনি বলেন, মানুষকে পুড়িয়ে মারার সংস্কৃতি আওয়ামী লীগেরই।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনুর সংশ্লিষ্টতা গণতন্ত্রের সাক্ষ্য দেয় না বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
বিএনপির নিখোঁজ নেতা এম ইলিয়াস আলী, চৌধুরী আলমসহ কয়েকটি গুমের ঘটনা তুলে ধরে খালেদা জিয়ার এই উপদেষ্টা বলেন,এখন বোঝা যাচ্ছে,এসব গুমের ঘটনার পেছনে কর্নেল তারেকই (নারায়ণগঞ্জের সাত খুনের আসামি) জড়িত। এখন সব বোঝা যাচ্ছে।দুদু আরও বলেন, সন্ত্রাস, খুন ও দুর্নীতি শেখ পরিবারের মজ্জাগত।
সংগঠনের সভাপতি আলহাজ্ব এম.এ. তাহেরে’র সভাপতিত্বে এতে অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন- বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা শামসুজ্জামান দুদু, ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. পিয়াস করিম, বিএনপির নির্বাহী কমিটির সদস্য রাশেদা বেগম হীরা প্রমুখ।