1দৈনিক বার্তাঃ নারায়ণগঞ্জের সাত খুনের ঘটনায় আটক র‌্যাব-১১ এর সেই ৩ কর্মকর্তা ও পালাতক নূর হোসেনের অবৈধ অর্থ  লেনদেনের বিষয় ক্ষতিয়ে  দেখছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।বুধবার দুদক কার্যালয়ে আয়োজিত মাসিক সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের এ কথা বলেন সচিব  মো. ফয়জুর রহমান  চৌধুরী।

ফয়জুর রহমান বলেন, সাত খুনের ঘটনায় করা মামলার প্রধান আসামি নুর  হোসেন ও আটক তিন র‌্যাব কর্মকর্তার বিরুদ্ধের অবৈধ অর্থ  লেনদেনের অভিযোগের বিষয়ে তথ্য উপাত্ত সংগ্রহ করা হচ্ছে।

দুদকের এখতিয়ার অনুযায়ী তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা  নেয়া হবে বলে জানান তিনি।এসময় চলতি বছর দুদকের দায়ের করা বিভিন্ন মামলার তথ্যাদি সাংবাদিকদের সামনে তুলে ধরেন দুদক সচিব।

নারায়ণগঞ্জের সাত খুনের প্রধান আসামি নূর  হোসেন ও র‌্যাবের তিন কর্মকর্তাসহ সংশ্লিষ্টদের অবৈধ সম্পদের তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। তাদের বিরুদ্ধে প্রাপ্ত অভিযোগ, আর্থিক  লেনদেন এবং নানা অপকর্মের মাধ্যমে অর্জিত স্থাবর-অস্থাবর সম্পদের বিষয়টি অনুসন্ধান  শেষে আইনগত পদক্ষেপ নেয়া হবে বলে জানিয়েছেন দুদক সচিব  মো. ফয়জুর রহমান  চৌধুরী।

রাজউকের ৪১২টি প্লটের আকার বৃদ্ধির মাধ্যমে দুদকের কমিশনার নাসির উদ্দীন, দুদক সচিব ফয়জুর রহমান  চৌধুরীসহ দুদকের আরো  বেশ কয়েকজন কর্মকর্তা প্লট সুবিধা নিয়েছেন সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমরা আবেদন করে প্লট নিয়েছি।আমি ও আমার স্ত্রী দুজন একত্রে ১০ কাঠা প্লটের আবেদন করি। রাজউক পাঁচ কাঠা বরাদ্দ দেয়, পরে ওই প্লটকে সাড়ে সাত কাঠার পরিণত করে রাজউক।

তিনি বলেন, সচিব শওকতের বিরুদ্ধে তিন মামলার তদন্ত চলছে। তদন্ত  শেষ অনিয়ম এবং জালিয়াতির সঙ্গে সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।

আরেক প্রশ্নের জবাবে দুদক সচিব বলেন, মুক্তিযুদ্ধে সহায়তাকারী বিদেশী অতিথিদের সম্মাননা প্রদানের নামে নকল  সোনার  ক্রেস্ট জাতিয়াতির ঘটনায় সরকারের কাছে তথ্য-উপাত্ত চেয়েছে দুদক।প্রাপ্ত তথ্য-উপাত্ত পাওয়ার পরই এ বিষয়ে দুদক ব্যবস্থা নেবে।

তিনি আরো বলেন, হলমার্ক গ্র“পের নন ফান্ডের প্রায় ১৫০০  কোটি টাকা ঋণ জালিয়াতির ঘটনায় অনুসন্ধান ও মামলা করবে না দুদক। কারণ নন ফান্ডের ঘটনা এক ব্যাংকের সঙ্গে আরেক ব্যাংকের আর্থিক লেনদেনের বিষয়টি জড়িত।আমরা চাই ব্যাংক নিজেরাই এই সমস্যার সমাধান করুক।তারপর যদি ব্যাংক এবিষয়ে  কোনো অভিযোগ  দেয়  সেটি দুদক  দেখবে।

তারেক রহমানের খালাসের রায় প্রদানকারী বিচারক মোতাহার হোসেনের অবৈধ সম্পদ অনুসন্ধান প্রক্রিয়া সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এবিষয়টি অনুসন্ধান চলছে।  যেহেতু বিচারক উপস্থিত নেই, তিনি দেশের বাইরে এর জন্য একটু  দেরি হচ্ছে। তবে বিচারককে দেশে আনার বিষয়টি স্বরাষ্ট্র ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় দেখবে, এটি দুদকের বিষয় না।

সচিব বলেন, দুদকের ২০১৩ সালের কার্যক্রমের একটি প্রতিবেদন আজ বিকেলে রাষ্ট্রপতির কাছে উপস্থাপন করা হবে।

লিখিত বক্তব্যে তিনি বলেন, ২০১৪ সালে জানুয়ারি থেকে এপ্রিল পর্যন্ত গত চার মাসে ৮৮টি মামলার অনুমোদন দিয়েছে দুদক। একই সঙ্গে ১৪২টি চূড়ান্ত প্রতিবেদন দাখিল ও ১৬১টি চার্জশিটও অনুমোদন করেছে দুদক।

দুদক সচিব বলেন,গত চার মাসে দুদকে ৩০৪৮টি অভিযোগ জমা পড়ে কমিশন। কমিশনের তফসিলভুক্ত না হওয়ায় ২৫০৭টি আভিযোগ বাদ পড়ে এবং যাচাই বাছাই শেষে ৪৫০ টি অভিযোগ অনুসন্ধানের জন্য গৃহীত হয়।

তিনি বলেন, ৪৫০টি মধ্যে যাচাই বাছাই শেষে অনুসন্ধানের জন্য গৃহীত প্রতিবেদনের সংখ্যা ৪৯টি। এর মধ্যে গত চার মাসে মামলা নিষ্পত্তি সংখ্যা ৪০টি, সাজা হয়েছে ১৪টি এবং খালাস সংখ্যা ২৬টি।

এ সময় তিনি বলেন, গত এপ্রিলে মাসে মামলা দায়েরের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো সিআইডি পরিদর্শক গোলাম সারোয়ার ও তার ছেলে সোলায়মানের বিরুদ্ধে মামলা অনুমোদন দেয়া।

এছাড়া এপ্রিলে মাসে ৩৮টি মামলার চার্জশিট দাখিলের অনুমোদন দিয়েছে কমিশন। আর এসব মামলায় ৮৮ জনকে অভিযুক্ত করা হয়েছে বলে তিনি জানান।

এদিকে, সম্পদের তথ্য গোপন করায় সোনালী ব্যাংকের সাবেক উপ-মহাব্যবস্থাপক (ডিজিএম) একেএম আজিজুর রহমানের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।

বুধবার দুপুরে দুদকের উপ-সহকারী পরিচালক মুহাম্মদ জয়নাল আবেদিন মামলাটি দায়ের করেন। এক  কোটি ৭১ লাখ টাকা আত্মসাতের অভিযোগে রমনা থানায় এ মামলাটি দায়ের করা হয়।

এর আগে মঙ্গলবার দুদকের নিয়মিত  বৈঠকে এ মামলার অনুমোদন দেওয়া হয়।

দুদকে দাখিল করা সম্পদ বিবরণীতে মিথ্যা তথ্য দেওয়ার মাধ্যমে এক কোটি ৭১ লাখ টাকা মূল্যের সম্পদের তথ্য  গোপন করেন আজিজুর রহমানের। দুর্নীতি দমন কমিশন আইন, ২০১৪ এর ২৬ (২) ও ২৭ (১) ধারায় মামলাটি দায়ের করা হয়।

অন্য্যদিকে, অবৈধভাবে বাড়ি ভোগ দখলের অভিযোগে মওদুদ আহমেদ ও তার ভাইয়ের বিরুদ্ধে করা মামলার চার্জশিট দাখিলের অনুমোদন দিয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।বুধবার রাজধানীর   সেগুনবাগিচায় দুদকের প্রধান কার্যালয়ে কমিশনের নিয়মিত বৈঠকে এই মামলার চার্জশিট দাখিলের অনুমোদন দেওয়া হয়। দুদক কমিশনার সাহাবুদ্দিন চুপ্পু এ তথ্য নিশ্চিত করেন।

গত ডিসেম্বর অবৈধভাবে বাড়ি ভোগ দখলের অভিযোগে ব্যারিস্টার মওদুদ আহমেদ ও তার ভাই মঞ্জুর আহমেদের বিরুদ্ধে  যে মামলা করা হয়েছিল তার চার্জশীট দাখিলের অনুমোদন দেওয়া হয়েছে এবং দুই একদিনের মধ্যেই মহামান্য আদালতে এ চার্জশিট দাখিল করা হবে।

উল্লেখ্য, ২০১৩ সালের ১৭ ডিসেম্বর প্রায় ৩০০ কোটি টাকার সরকারি সম্পত্তি ভোগদখলের অভিযোগে বিএনপি’র স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ ও তার ভাই মঞ্জুর আহমদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেছিল দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।

রাজধানীর গুলশান থানায় দুদকের উপ-পরিচালক হারুনুর রশীদ বাদি হয়ে এ মামলাটি (মামলা নং-১৮) দায়ের করেন।

মামলার অভিযোগপত্রে বলা হয়, মিসেস ইনজে মারিয়া ফ্ল্যাজ ও তার স্বামী পাকিস্তানি নাগরিক  মো. এহসান স্বাধীনতার পূর্বে এন. ডাব্লিউ (এএইচ) ৬-এর ১৫৯ নম্বর বাড়িটি (১ বিঘা ১৩ কাঠা ১৪ ছটাক) রেখে দেশ ছেড়ে চলে যায়। স্বাধীনতার পরে পরিত্যক্ত বাড়িটি সরকারি সম্পত্তি হিসেবে তালিকাভুক্ত হয়। তবে মওদুদ আহমদ ক্ষমতার অপব্যবহার করে ১৯৭৮ সাল থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত অবৈধভাবে বাড়িটি ভোগদখল করে আসছিলেন। তবে পরবর্তীতে তার লন্ডন প্রবাসী ভাই মঞ্জুর আহমদের নামে ভুয়া পাওয়ার অফ পাওয়ার অ্যাটর্নির কাগজ তৈরি করে নিজেই ভাড়াটিয়া হিসেবে বাড়িটি নিজের দখলে নিয়েছেন।

কিন্তু বাড়িটি ক্রয় বাবদ কোনো টাকায় ইনজে ফ্ল্যাজের নামে কোনো ব্যাংকে টাকা জমা দেওয়া হয়নি। এতে ৩০০ কোটি টাকার অধিক সরকারি জমি ভোগদখলের মাধ্যমে আত্মসাৎ করার অভিযোগে এবং ওই বাড়ির কথিত মালিক বানানোর কাজে একে অপরের সহায়তা করার অপরাধে ১৯৪৭ সালের দুর্নীতি বিরোধী আইন ৫(২) ও দণ্ডবিধির ১০৯ ধারায় মওদুদ আহমদ ও তার ভাই মঞ্জুর আহমদের বিরুদ্ধে মামলাটি দায়ের করে দুদক।