দৈনিক বার্তাঃ গুম-খুন বন্ধ না হলে জাতীয় পার্টি কঠোর আন্দোলনে যাবে বলে মন্তব্য করেছেন পার্টির সিনিয়র প্রেসিডিয়াম সদস্য ও বিরোধী দলীয় নেতা বেগম রওশন এরশাদ এমপি। তিনি বলেন, দেশের মানুষ গুম-খুন আতঙ্কে বসবাস করছে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পর্যন্ত শিশুদের পড়ালেখা বন্ধ হয়ে যাচ্ছে।
তিনি বুধবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে জাতীয় সংসদের মিডিয়া সেন্টারে এক জরুরি সংবাদ সম্মেলনে এ ঘোষণা দেন।বিরোধী দলীয় নেতা বলেন, গুম-খুনের কারণে সরকারের প্রতি সন্তুষ্ট নয় জাতীয় পার্টি।নারায়ণগঞ্জের সাত জনকে অপহরণের পর খুনের ঘটনার প্রকৃত দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি করেন তিনি।
এসময় তিনি ভারতের জাতীয় নির্বাচন থেকে বাংলাদেশের রাজনীতিবিদদের শিক্ষা গ্রহণের আহ্বান জানিয়ে বলেন, কীভাবে বিজয়ী দলকে পরাজিত দল শুভেচ্ছা জানায়, সে দৃষ্টান্ত অনুসরণ করুন। দীর্ঘদিন যে দলটি ক্ষমতায় ছিল, তারা বিপুল ব্যবধানে পরাজিত হয়েও বিজয়ী দলকে শুভেচ্ছা জানিয়েছে; এটাই রাজনৈতিক শিষ্টাচার।
বেগম রওশন এরশাদ বলেন, বাংলাদেশের রাজনীতিবিদরা পরস্পরের সাথে সংঘর্ষে লিপ্ত। তারা একে অপরকে বিশ্বাস করে না।তিনি উভয়পক্ষকেই আলোচনায় বসার আহ্বান জানান।গুরুত্বপূর্ণ কথা বলবেন বলে মিডিয়াকর্মীদের ডাকা হয়েছিলো। কিছুতো বলেন নাই, উপরন্তু কোনো প্রশ্নেরও সরাসরি উত্তর দেননি বিরোধী দলীয় নেতা রওশন এরশাদ।
একজন সাংবাদিকতো প্রশ্ন করেই বসলেন, তাহলে এ জরুরি ভিত্তিতে সাংবাদিকদের ডাকার কারণ কি? যা বললেন, তার মধ্যে নতুনতো কিছুই নেই।
ফোনে বলা হয়েছিলো সংবাদ সম্মেলন। কিন্তু ব্যানারে লেখা হয় সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময়। বিরোধী দলীয় নেতার জনসংযোগ কর্মকর্তা মামুনুর রশীদ, জাতীয় পার্টির যুগ্ম দফতর সম্পাদক আবুল হাসান আহমেদ জুয়েল পৃথক মেইল পাঠান দু’দিন আগে। মেইল পাঠিয়ে স্বস্তিবোধ করতে না পেরে কয়েক দফায় ফোনে যোগাযোগ করা হয় জাতীয় পার্টি বিটে কর্মরত সাংবাদিকদের সঙ্গে।
দফতরের পাশাপাশি খোদ জাপার মহাসচিব জিয়া উদ্দিন আহমেদ বাবলুও কোন কোন মিডিয়ায় ফোন করে সাংবাদিক পাঠানোর জন্য অনুরোধ করেন।আবার নিজের পারফরমেন্স দেখাতে অনেক সাংবাদিককে ব্যক্তিগতভাবে ফোনে উপস্থিত হওয়ার অনুরোধ জানান মহাসচিব।
ফোনে সাংবাদিকদের বলা হয়েছিলো,খুবই গুরুত্বপূর্ণ কথা বলবেন ম্যাডাম (রওশন এরশাদ)। সে কারণে অনেক মিডিয়া লাইভ প্রচারের উদ্যোগ নেয়। অথচ সে সভারই বেহালদশা দেখে বিরক্ত হন গণমাধ্যম কর্মীরাও।
বুধবার বেলা ১১টায় শুরু করার কথা থাকলেও প্রায় ২০ মিনিট দেরিতে অনুষ্ঠানস্থল সংসদ ভবনের মিডিয়া সেন্টারে হাজির হন বিরোধী দলীয় নেতা।
রওশন এরশাদ বক্তব্য শুরু করতে যাবেন, ঠিক তখনই বিপত্তি দেখা দেয় মাইক নেই। মিডিয়া কর্মীদের আপত্তির মুখে বিলম্ব করা হয়। কেটে যায় আরও প্রায় ২০ মিনিট, কিন্তু মাইক নেই। শেষে মাইক ছাড়াই বক্তব্য শুরু করেন বিরোধী দলীয় নেতা।
দীর্ঘ বক্তব্য প্রদান শুরু করেন তিনি। তাতে নিউজের মতো কোনো বিষয়বস্তু না দেখে সংবাদকর্মীরা ভাবভঙ্গিতে কিছুটা উষ্মা প্রকাশ করতে থাকেন। বিষয়টি আঁচ করতে পেরে পাশে বসা জাপার প্রেসিডিয়াম সদস্য কাজী ফিরোজ রশীদ কানে কানে কথা বলেন। তার কথার পর রওশন বলে ওঠেন, আমার আরও কিছু বক্তব্য ছিলো তা পরে বলব। এখন আপনাদের কোনো প্রশ্ন থাকলে বলেন।
নারায়ণগঞ্জে সেভেন মার্ডার, বিগত নির্বাচন,দেশের আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি, দেশের মধ্যবর্তী নির্বাচন প্রসঙ্গ ও ভারতের নির্বাচন নিয়ে তার দলের অবস্থান জানতে চান মিডিয়া কর্মীরা।তবে রওশন শুধু ভারত নির্বাচন প্রসঙ্গে বলেন, তাদের থেকে অনেক কিছু শেখার আছে। তাদের একে অন্যের প্রতি শ্রদ্ধাবোধ আছে। আমাদের নেই।
আর সব প্রসঙ্গে ঘুরিয়ে- পেচিয়ে বলেছেন, যার কোনো অর্থ দাঁড়ায় না। আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতিতে তারা অসন্তুষ্ট- এ কথা বলতেও সময় নিয়েছেন প্রায় ৫ মিনিট। অনেক প্রশ্নের পরে বলতে গেলে বাধ্য হয়েই বলেছেন, আমরা সন্তুষ্ট না।
বিএনপির মধ্যবর্তী নির্বাচন দাবি প্রসঙ্গে বিরোধী দলীয় নেতা তার দলের অবস্থান কি এমন প্রশ্নের জবাবে গা বাচানো উত্তর দেন, জনগণ চাইলে হবে। সব দল চাইলে মধ্যবর্তী নির্বাচন হবে। আমরা সংবিধানের বাইরে কথা বলতে পারি না।এক পর্যায়ে অনেকটা ক্ষেপেই যান তিনি। বলে ওঠেন, আমরা বিরোধী দলের ভূমিকা পালন করছি। আগের বিরোধী দলীয় নেতাতো ১০ দিনও সংসদে যাননি। তাকে প্রশ্ন করেননি কেন?আমরাতো ফাইল ছিড়িনি, অশালীন বক্তব্য দেইনি। সরকারের গঠনমূলক সমালোচনা করেছি বলেও মন্তব্য করেন রওশন এরশাদ।
কর্মসংস্থানের অভাব এবং মাদকের কারণে খুন-গুমের ঘটনা ঘটছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, আমরা এর বিরুদ্ধে রাজপথে আন্দোলনে নামবো। সরকার ব্যর্থ কি-না সে বিষয়ে কোনো মন্তব্য করেননি বিরোধী দলীয় নেতা।
বিরোধী দলীয় নেতা নির্বাচিত হওয়ার পর এটা রওশন এরশাদের দ্বিতীয় দফায় সাংবাদিকদের মুখোমুখি হওয়া। এর আগে নির্বাচনের পর শপথ নিয়ে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়েছিলেন তিনি।সেদিনের রওশন আর আজকের রওশন যেন ভিন্ন কেউ। ওই দিন তিনি ছিলেন অনেক গোছানো ও পরিপক্ক।
হতাশ সাংবাদিকরা অনেকে বলাবলি করেন, আর কখনও সংবাদ সম্মেলন ডাকলে সাংবাদিক খুঁজে পাবেন না তারা। যদি কোনো ইস্যু না থাকে, তাহলে অহেতুক হয়রানি করার কোনো মানে হয় না।
বিরোধী দলীয় নেত্রী রওশন এরশাদ বলেছেন, নির্বাচনকালীন আন্দোলনে বিএনপি জনগণকে সম্পৃক্ত করতে পারেনি। জনগণকে সম্পৃক্ত করতে পারলে তাদের আন্দোলন অন্য রূপ নিতে পারত।
রওশন এরশাদ বলেন, আমাদের দেশের মানুষ শান্তিপ্রিয় মানুষ। তাদের চাহিদা খুব কম। এই চাহিদা যদি পূরণ করতে না পারি তবে আমাদের রাজনীতি করে কী লাভ? আমরা রাজনীতি করি জনগণেরই জন্য।সংসদ বর্জন না করে, সত্যিকার অর্থেই বিরোধীদলের ভূমিকা পালন করার প্রতিশ্র“তি দেন বিরোধী দলীয় নেত্রী। আগের বিরোধী দলের ভূমিকা কেউই কার্যকরভাবে পালন করতে পারেননি বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
তিনি বলেন, অতীতে দেখা গেছে, বিরোধী দল সরকারের বিরোধিতা করতে লেগে যায়। কিন্তু বিরোধী দল সরকারকে সহযোগিতা করবে- এটাই সংসদীয় গণতন্ত্র। আমরা সেটাই করে আসছি। অতীতের বিরোধী দল বেশিরভাগ সংসদ অধিবেশন বর্জন করেছে। আমরা সরকারকে সহযোগিতা করবো। আমরা সংসদ বর্জন করিনি, অকথ্য ভাষায় কথা বলিনি, ফাইল ছুঁড়িনি।
জনগণের এ সামান্য চাহিদা পূরণ করতে না পারলে রাজনীতি করে লাভ কি? বলেও প্রশ্ন রাখেন রওশন এরশাদ।তিনি বলেন, ভারতের নির্বাচন েেথকে আমাদের অনেক কিছু শেখার আছে। ভারতে একজন নেতা অন্য জন্য নেতাকে সম্মান করেন, বিশ্বাস করেন। কিন্তু আমাদের দেশে তা হয় না। আমাদের দেশে তো একজন নেতা অন্য বিরোধী পক্ষের নেতার সঙ্গে কথাই বলেন না। কথা না বললে সমস্যা দূর হবে না।
ভারতের নির্বাচন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, দেশের আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি যে খুব একটা ভালো তা নয়। এ জন্য আমাদের জনগণকে পাশে নিয়ে কাজ করতে হবে।আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি উন্নতির জন্য আমাদের বেকারত্ব সমস্যাদূর করাসহ মাদক সমস্যার সমাধান করতে হবে বলেও তিনি জানান।
বিএনপির মধ্যবর্তী নির্বাচনের দাবি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, জনগণ যদি দেশে আরেকটি নির্বাচন চায় তা হলে আরেকটি নির্বাচন হবে এবং জাতীয় পার্টিও এ নির্বাচনে অংশ নেবে।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন, জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য জিয়াউদ্দিন বাবলু, জাতীয় পার্টির চিফ হুইপ তাজুল ইসলাম চৌধুরী প্রমুখ।