1দৈনিক বার্তাঃ গাড়িতে কালো কাচ ব্যবহার নিষিদ্ধে সরকারের সিদ্ধান্ত কার্যকরে দুই সপ্তাহের স্থিতাবস্থা বজায় রাখতে নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। বুধবার বিচারপতি মির্জা হোসেইন হায়দার ও বিচারপতি মুহাম্মদ খুরশীদ আলম সরকার সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট  বেঞ্চ রিট আবেদনের ওপর শুনানি নিয়ে রুলসহ এ আদেশ  দেন।

তবে মাইক্রোবাস ছাড়া কালো কাচ রয়েছে এমন ব্যক্তিগত গাড়ির মালিকেরা চাইলে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআরটিএ) কাছে অনুমতি চাইতে পারবেন। আবেদন করলে তা সাত দিনের মধ্যে নিষ্পত্তি করতে বিআরটিএ-কে বলা হয়েছে।

রুলে গাড়িতে কালো কাচ ব্যবহার নিষিদ্ধে সরকারের ওই সিদ্ধান্ত  কেন অবৈধ ও  বেআইনি ঘোষণা করা হবে না, তা জানতে চাওয়া হয়েছে। স্বরাষ্ট্রসচিব, পুলিশের মহাপরিদর্শক, ঢাকা মহানগর পুলিশ কমিশনার, ঢাকা মহানগর পুলিশের যুগ্ম কমিশনারসহ (ট্রাফিক) পাঁচজনকে চার সপ্তাহের মধ্যে রুলের জবাব দিতে বলা হয়েছে।

আদালতে রিটের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী মনজিল মোরশেদ। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন অ্যাটর্নি  জেনারেল মাহবুবে আলম,  ডেপুটি অ্যাটর্নি  জেনারেল  মো. আল আমিন সরকার।আদেশে আদালত বলেছে, স্থিতাবস্থার সময়ের পরে মাইক্রোবাসে কালো গ্লাস ব্যবহার করা যাবে না। তবে বিআরটিএ বা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অনুমতি সাপেক্ষে প্রাইভেটকারে ব্যবহার করতে পারবে।

যে কেউ কালো গ্লাস ব্যবহারের প্রয়োজনীয়তা ব্যাখ্যা করে আবেদন করতে পারবে, ওই আবেদন সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে এক সপ্তাহের মধ্যে নিষ্পত্তি করতে হবে।এছাড়া গাড়ির কালো গ্লাস সরানোর আদেশ  কেন অবৈধ ঘোষণা করা হবে না, তা জানতে চেয়ে একটি রুল দিয়েছে আদালত।

চার সপ্তাহের মধ্যে স্বরাষ্ট্র সচিব, পুলিশের মহাপরিদর্শক, ঢাকা মহানগর পুলিশ কমিশনার, জয়েন্ট কমিশনার (ট্রাফিক), স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট উপসচিবকে রুলের জবাব দিতে বলা হয়েছে।

সম্প্রতি কয়েকটি অপহরণের ঘটনায়  বেশব্যাপী আলোচনার  প্রেক্ষাপটে গত ৩০ এপ্রিল এক বিজ্ঞপ্তিতে গাড়িতে কালো, রঙিন, মার্কারি ও অস্বচ্ছ কাচ ব্যবহার নিষিদ্ধের কথা জানায় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।গাড়ির এসব কালো কাচ সরিয়ে  ফেলার জন্য ১০ মে পযন্ত সময় বেধে  দেয়া হয়। এর পরদিন  থেকে কালো ও অস্বচ্ছ কাচের গাড়ির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার বিষয়ে অভিযান শুরু করে পুলিশ।সরকারের এই সিদ্ধান্তের  বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে আসাদুজ্জামান সিদ্দিকী ও এখলাস উদ্দিন ভূঁইয়া নামে দুই আইনজীবী গত ১৪ মে হাই কোর্টে রিট আবেদনটি দায়ের করেন।

রিটকারীর আইনজীবী মনজিল  মোরসেদ বলছেন, অপহরণে ব্যবহারের কারণে যদি গাড়ির রঙিন গ্লাস নিষিদ্ধ হয়। তাহলে দড়ি ও রশির ব্যবহারওতো নিষিদ্ধ করতে হবে। কারণ  এগুলোও অপহরণ ও খুনে ব্যবহার হয়েছে।

আইনে এ ধরনের সিদ্ধান্ত নেয়ার এখতিয়ার কর্তৃপক্ষের নেই। এরপরও তারা এ ধরনের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। পরে আবার বিল্ট ইন গাড়িকে ছাড়  দেয়া হয়েছে। আইনে এই সিদ্ধান্ত   বৈধ হলেও এই ধরনের বৈষম্য বৈধ হতো না।মনজিল মোরশেদ বলেন, গাড়িতে কালো কাচ ব্যবহারের সিদ্ধান্ত কার্যকরে দুই সপ্তাহের স্থিতাবস্থা বজায় রাখতে নির্দেশ দিয়েছেন আদালত। ফলে এখন গাড়িতে কালো কাচ ব্যবহারে বাধা নেই।মো. আল আমিন সরকার বলেন, মাইক্রোবাসে কালো কাচ ব্যবহার করা যাবে না।

নারায়ণগঞ্জে সাত খুনের ঘটনায় কালো কাচের মাইক্রোবাস ব্যবহারের অভিযোগ ওঠার পর মাইক্রোবাসসহ সব ধরনের যানবাহন  থেকে ১০ মের মধ্যে কালো কাচ খুলে  ফেলতে নির্দেশ  দেয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।

রিট আবেদনে দাবি করা হয়, মোটর ভেহিক্যালস অর্ডিন্যান্স-১৯৮৩ এবং বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের জারি করা এসআরওতে এমন কোনো বিধান নেই যার কারণে সরকার এ রকম সিদ্ধান্ত নিতে পারে। ৩০ এপ্রিল সরকারের নেওয়া সিদ্ধান্ত শিথিল করে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ৬ মে সিদ্ধান্ত দেয়। এতে বিল্ট-ইন গাড়ির ক্ষেত্রে ওই সিদ্ধান্ত প্রযোজ্য নয় বলা হয়। এ সিদ্ধান্তটি  বৈষম্যমূলক। রিটে ওই সিদ্ধান্ত  কেন বেআইনি ও বাতিল ঘোষণা করা হবে না, এ মর্মে রুল চাওয়া হয়েছে।

৬ মে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জারি করা সিদ্ধান্তে বলা হয় অপহরণসহ অপরাধ কর্মকাণ্ড পরিচালনার সময় অপরাধীরা কালো, রঙিন, মার্কারি ও অস্বচ্ছ কাচযুক্ত গাড়ি ব্যবহার করায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পক্ষে গাড়ির আরোহী বা ভেতরে রাখা বস্তু শনাক্ত করা, অপরাধীদের গতিবিধির ওপর নজর রাখা ও প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে সমস্যা হয়। এ জন্যই কৃত্রিম আবরণ অপসারণের এই আদেশ  দেওয়া হয়েছে।