দৈনিক বার্তাঃ ফেনীর ফুলগাজী উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি একরামুল হক প্রকাশ্যে পুড়িয়ে মারার ঘটনায় সরকার এর দায় উদোর পিন্ডি বুধোর ঘাড়ে চাপিয়ে দিতে চাইছে বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
একরামুল হক আওয়ামী লীগের অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্বের জেরধরে নিহত হয়েছেন বলেও এ সময় উল্লেখ করেন মির্জা ফখরুল। তিনি বলেন, এ ঘটনার মূল হোতাদের আড়াল করে অন্যায়ভাবে বিএনপি নেতাকর্মীদের জড়ানোর চেষ্টা করা হচ্ছে। উদোর পিন্ডি বুধোর ঘাড়ে চাপানো হচ্ছে।
বুধবার সকাল ১১ টায় নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত সাংবাদিক সম্মেলনে একথা বলেন মির্জা ফখরুল।
তিনি বলেন,ফুলগাজী উপজেলা চেয়ারম্যান খুন হওয়ার বিষয়টি দলীয় কোন্দলের বহিঃপ্রকাশ। সরকার গায়ে পড়ে ঝগড়া করার মতো বিএনপিকে এ ঘটনায় অযাচিতভাবে অভিযুক্ত করছে বলেও এ সময় অভিযোগ করেন তিনি।
ফুলগাজী উপজেলা চেয়ারম্যান একরামুল হক আওয়ামী লীগের অভ্যন্তরীণ কোন্দলের শিকার এমন মন্তব্য করে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, নিজেদের অপবাদ ও অপকর্ম ঘোচাতে প্রধানমন্ত্রী এই হত্যাকাণ্ডের দায় বিরোধীদলের ওপর চাপাতে চেষ্টা করছেন।
এর মাধ্যমে সরকার এই ঘটনায় বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের জড়াতে উদোর পিণ্ডি বুধোর ঘাড়ে চাপানোর চেষ্টা করছে বলেও দাবি করেন ফখরুল।মঙ্গলবার প্রকাশ্য দিবালোকে ফেনী ফুলগাজীতে উপজেলা চেয়ারম্যান ও আওয়ামী লীগ নেতার গাড়িতে আগুন দেয় সন্ত্রাসীরা। এতে অগ্নিদগ্ধ হয়ে তিনি নিহত হন।পরে মামলায় প্রধান আসামি করা হয় ফুলগাজীর বিএনপি নেতা মাহতাব উদ্দিন আহমেদ চৌধুরী মিনারকে, যিনি কয়েকমাস আগে ভোটে একরামের কাছে হেরেছিলেন।
এই বিষয়ে দলের অবস্থান ব্যাখ্যা করতে বুধবার নয়া পল্টনে এক সংবাদ সম্মেলনে ফখরুল বলেন,তদন্তের আগেই প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে বিবৃতি দিয়ে এই ঘটনার দায় বিরোধী দলের ওপর চাপানোর অপচেষ্টা করা হয়েছে।
এই হত্যাকাণ্ডের প্রসঙ্গে ফখরুল বলেন, ঘটনার পর তড়িঘড়ি করে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে বিবৃতি দিয়ে বিরোধী দলের ওপর দোষ চাপানোতে বোঝা যায় সরকার থলের বিড়ালটি থলিতেই রাখতে চাচ্ছেন। কিন্তু আসল বিড়ালটি ঠিকই বেরিয়ে পড়বে এবং মিথ্যা অপসৃত হবেই। যেভাবে শত চেষ্টা করেও নারায়ণগঞ্জের ঘটনা ধামাচাপা দিতে পারেনি; ঠিক তেমনিভাবে ফেনীর ঘটনাকে ধামাচাপা দেয়ার অপচেষ্টা ব্যর্থতায় পর্যবসিত হবে।
তিনি আরো বলেন, বর্তমান অবৈধ সরকার নিজেদের সন্ত্রাসী-গডফাদারদের মানবতা বিপন্নকারী কর্মকাণ্ড ঢাকতে কোনো ধরনের তদন্ত ও বিচারিক প্রক্রিয়া সম্পন্ন হওয়া ব্যতিরেকে অন্যের ঘাড়ে দোষ চাপিয়ে দেয়।
সম্প্রতি নারায়ণগঞ্জসহ সারা দেশে বেআইনি গুম, খুন, অপহরণ, গুপ্ত হত্যা, মুক্তিপণ আদায়, ক্রসফায়ার ও বন্দুক যুদ্ধের নামে মানুষ হত্যার কারণে জাতীয় ও আন্তর্জাতিকভাবে বর্তমান অবৈধ সরকার নিন্দিত ঘৃণিত ও বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ছে বলেও মন্তব্য করেন ফখরুল।
ফেনী হত্যাকাণ্ডের নিরপেক্ষ তদন্তের মধ্য দিয়ে সত্য উদঘাটন করে ঘটনার সঙ্গে প্রকৃত জড়িতদের অবিলম্বে উপযুক্ত শাস্তির দাবি জানান ফখরুল।
অবিলম্বে নিরপেক্ষ তদন্তের মাধ্যমে একরামুল হক হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় দোষীদের চিহ্নিত করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়েছে বিএনপি।
বিভিন্ন সংবাদপত্রের প্রতিবেদন দেখিয়ে সংবাদ সম্মেলনে ফখরুল বলেন, একরাম হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ক্ষমতাসীনদের অভ্যন্তরীণ অন্তঃকোন্দলের ফল। আজ প্রকাশিত সব দৈনিকে এই বিষয়টি স্পষ্ট হয়ে গেছে।
একরাম জয়নাল হাজারীর স্টিয়ারিং কমিটির সদস্য ছিলেন। সেসময়ে ফেনী ছিল সন্ত্রাসকবলিত জেলা। ফেনী সদরের সংসদ সদস্য নিজামউদ্দিন হাজারীর সঙ্গে একরামের দ্বন্দ্ব চরম আকারে ছিল, যা পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে।
বিএনপির নেতা মাহতাব মিনারের বিরুদ্ধে মামলা দায়েরের নিন্দা জানিয়ে ফখরুল বলেন, সরকারের দমন-পীড়নের কারণে বিএনপি নেতা-কর্মীরা যেখানে এলাকাতেই থাকতে পারছে না, সেখানে ক্ষমতাসীন দলের চেয়ারম্যানের সঙ্গে সংর্ঘষে লিপ্ত হওয়া কোনো পাগলেও বিশ্বাস করবে না।
নারায়ণগঞ্জের সাত খুনের পর ফেনী ও নোয়াখালীতে একই দিনে তিনটি হত্যাকাণ্ডের প্রেক্ষাপটে বিএনপির মুখপাত্র বলেন, আওয়মী লীগের অপশাসনে সারাদেশে আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির যে চরম অবনতি হয়েছে, তাই এখন প্রকাশিত হচ্ছে।
সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী, অর্থ বিষয়ক সম্পাদক আবদুস সালাম, ছাত্রবিষয়ক সম্পাদক শহিদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানি, কেন্দ্রীয় নেতা আবদুল লতিফ জনি, আসাদুল করিম শাহিন, আবদুস সালাম আজাদ, শিরিন সুলতানা, রেহানা আখতার রানু উপস্থিত ছিলেন।