1দৈনিক বার্তা : ২০১৪-১৫ নতুন অর্থ বছরে ৮৬ হাজার কোটি টাকার প্রস্তাবিত বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি (এডিপি) গ্রহণ করেছে সরকার।এর মধ্যে পদ্মা  সেতুর জন্য ৮ হাজার একশ’  কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে।মূল এডিপি’র মধ্যে স্বায়ত্তশাসিত সংস্থা খাতের ৫ হাজার ৬৮৫ কোটি ৪৮ লাখ টাকা  যোগ করা হয়েছে।

নতুন এডিপিতে পদ্মা  সেতু, বিদ্যুৎ খাত, পরিবহন, শিক্ষা ও পল্লী উন্নয়নকে অধিক গুরুত্ব  দেওয়া হয়েছে। পদ্মা  সেতুতে বরাদ্দ রাখা ৮ হাজার একশ’  কোটি টাকা। এর মধ্যে স্থানীয় মুদ্রা সাড়ে ৬ হাজার  কোটি টাকা এবং প্রকল্প সাহায্য  থেকে ১ হাজার ছয়শ’  কোটি টাকা  মেটানো হবে। পদ্মাসেতুসহ এ বিভাগে  মোট বরাদ্দ রাখা হয়েছে ৮ হাজার ৭১৩  কোটি টাকা।মঙ্গলবার সকালে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের (এনইসি)  বৈঠকে এ সিদ্ধান্ত হয়।  বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন প্রধানমন্ত্রী  শেখ হাসিনা।

অনুমোদিত এডিপির মধ্যে নিজস্ব তহবিল  থেকে ৫২ হাজার ৬১৫  কোটি টাকা যোগান দেয়া হবে। আর প্রকল্প সাহায্য  থেকে আসবে ২৭ হাজার ৭০০ কোটি টাকা।শেরেবাংলা নগরে এনইসি সম্মেলন  কেন্দ্রে বৈঠক  শেষে পরিকল্পনা মন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল এসব তথ্য জানান।এডিপিতে  দেশের সবচেয়ে বড় অবকাঠামো প্রকল্প পদ্মা  সেতু নির্মাণের জন্য ৮ হাজার ১০০ কোটি টাকা রাখা হয়েছে।

চলতি ২০১৩-১৪ অর্থবছরে মূল এডিপির আকার ছিল ৬৫ হাজার ৮৭২ কোটি টাকা। পরে এপ্রিল মাসে তা সংশোধন করে ৬০ হাজার  কোটি টাকায় নামিয়ে আনা হয়।

বৈঠক  শেষে পরিকল্পনা মন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল এসব তথ্য জানান। তিনি জানান,  সেতু বিভাগে ৮ হাজার ৭১৩  কোটি টাকার মধ্যে প্রকল্প সাহায্য থেকে ১ হাজার ছয়শ’  কোটি টাকা এবং স্থানীয় মুদ্রা  থেকে ৭ হাজার ১১৩ কোটি টাকা মেটানো হবে।তিনি জানান, মূল এডিপি’র আকার ছিল ৭৯ হাজার ৩১  কোটি টাকা। এর সঙ্গে নতুন অর্থবছরে প্রধানমন্ত্রী’র সম্মতিতে ১ হাজার ২৮৪  কোটি টাকা বৃদ্ধি করা হয়েছে।

এডিপি প্রসঙ্গে কামাল জানান, বাড়তি ১ হাজার ২৮৪ কোটি টাকা স্থানীয় মুদ্রা  থেকে মেটানো হবে। পরে যেসব খাতে অধিক বরাদ্দের প্রয়োজন সেখানে বরাদ্দ  দেওয়া হবে। তবে এখন ঠিক করা হয়নি অতিরিক্ত টাকা কোথায় কত বরাদ্দ  দেওয়া হবে।

মুস্তফা কামাল জানান, পদ্মা  সেতু বিভাগে সাড়ে ৬ হাজার  কোটি স্থানীয় মুদ্রা খরচ করা হবে এবং আগামী বছর পদ্মা সেতুর ফিজিক্যাল ওয়ার্ক শুরু হবে। আমরা পদ্মা  সেতু প্রকল্প বাস্তবায়ন করে  গোটা জাতিকে  দেখাতে চাই।

নতুন এডিপিতে ১৭টি  সেক্টর এবং উন্নয়ন সহায়তা খাতে  মোট বরাদ্দ দাঁড়াল ৮০ হাজার ৩১৫ কোটি টাকা। এর মধ্যে প্রকল্প সাহায্য ২৭ হাজার সাতশ’  কোটি টাকা এবং স্থানীয় মুদ্রা ৫২ হাজার ৬১৫  কোটি টাকা।

কামাল বলেন,   সেক্টর ভিত্তিক মোট ১৭টি সেক্টরে নতুন এডিপি’তে বরাদ্দ থাকছে ৭৬ হাজার ৩  কোটি ৯৬ লাখ টাকা। এর মধ্যে প্রকল্প সাহায্য ২৭ হাজার ২১৬  কোটি ৯৬ লাখ টাকা এবং স্থানীয় মুদ্রা ৪৮ হাজার ৭৮৭ কোটি টাকা।

নতুন অর্থ বছরে  সেক্টর ভিত্তিক বরাদ্দ  বেশি থাকছে পরিবহন খাতে প্রায় ১৮ হাজার ৯৮ কোটি ৩৮ লাখ টাকা। এর মধ্যে প্রকল্প সাহায় ৪ হাজার ২৭৪ কোটি ২৪ লাখ টাকা এবং স্থানীয় মুদ্রা ১৩ হাজার ৮২৪  কোটি ১৪ লাখ টাকা।এছাড়া  যোগাযোগ খাতে বরাদ্দ থাকছে ৭৭০  কোটি ৭৭ লাখ টাকা। এর মধ্যে স্থানীয় মুদ্রা ৩৬১ কোটি ১৭ লাখ এবং প্রকল্প সাহায্য ৪০৯  কোটি ৬০ লাখ।

এছাড়া নতুন অর্থবছরে কৃষি খাতে ৫ হাজার ৫৭৫  কোটি, পল্লী উন্নয়ন খাতে ৬ হাজার ৮৭১ কোটি, পানি সম্পদ খাতে ২ হাজার ৪৫৩  কোটি, শিল্প খাতে ১ হাজার ৫৩০ কোটি, বিদ্যুৎ খাতে ৯ হাজার ২৭৭  কোটি,  তেল-গ্যাস  ও প্রাকৃতিক সম্পদ খাতে ২ হাজার ২২২  কোটি,  সেতু খাতে ৮ হাজার ৭১৩  কোটি,  ভৌত পরিকল্পনা, পানি সরবরাহ ও গৃহায়ন খাতে ৭ হাজার ৮৭৬  কোটি, শিক্ষা ও ধর্ম খাতে ৯ হাজার ৪০৩  কোটি, ক্রীড়া ও সংস্কৃতি খাতে ১৮২  কোটি, স্বাস্থ্য খাতে ৪ হাজার ৯৪৩ কোটি, গণসংযোগ খাতে ১১৮  কোটি, সমাজকল্যাণ খাতে ৫৭৬ কোটি, জন প্রশাসন ২ হাজার ৬৩৮  কোটি, বিজ্ঞান, তথ্য ও  যোগাযোগ প্রযুক্তি খাতে ৩ হাজার ১২১ কোটি এবং শ্রম ও কর্মসংস্থান খাতে ৩৪২  কোটি টাকা বরাদ্দ থাকছে।

এছাড়া ১০টি উন্নয়ন সহায়তা খাতে  মোট বরাদ্দ ৩ হাজার ২৭  কোটি টাকা। এর মধ্যে প্রকল্প সাহায্য ৪৮৩ কোটি টাকা এবং স্থানীয় মুদ্রা ২ হাজার ৫৪৪ কোটি টাকা।

এবারের এডিটিতে সব  থেকে  বেশি বরাদ্দ থাকছে উপজেলা উন্নয়ন সহায়তা খাতে চারশ’  কোটি টাকা। আর সব  থেকে কম বরাদ্দ থাকছে ইউনিয়ন পরিষদ উন্নয়ন খাতে মাত্র ১০ কোটি টাকা।

এছাড়া  জেলা পরিষদ উন্নয়ন সহায়তা খাতে ৩৫০ কোটি,  পৌরসভা উন্নয়ন খাতে ৩৫০  কোটি, সিটি করপোরেশনের উন্নয়ন সহায়তা খাতে দুইশ’ কোটি, পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন সহায়তা খাতে ১১০, পার্বত্য চট্টগ্রাম স্থানীয় সরকার উন্নয়ন সহায়তা খাতে ৩৫  কোটি, পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন  বোর্ডের জন্য উন্নয়ন সহায়তা ৫০ কোটি, বিশেষ এলাকার জন্য উন্নয়ন সহায়তা (পার্বত্য চট্টগ্রাম ব্যতীত) ১৬ কোটি এবং বিশেষ প্রয়োজনে উন্নয়ন সহায়তা রাখা হয়েছে ১ হাজার ৫০৬ কোটি টাকা।সংবাদ সম্মেলনে পরিকল্পনা সচিব ভূঁইয়া সফিকুল ইসলাম উপস্থিত ছিলেন।