দৈনিক বার্তা : আওয়ামী লীগ সরকার সামরিক স্বৈরতন্ত্রের থেকেও খারাপ অবস্থায় চলে গেছে এ কথা জানিয়েছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে রআবকে দিয়ে টাকার বিনিময়ে মানুষ খুন করাচ্ছে সরকার, আর এ বাহিনীকে নিজেদের রাজনৈতিক হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করছে তারা এ অভিযোগ করে আবারো র্যাব বিলুপ্তির দাবি করেন মির্জা ফখরুল।
সোমবার সকালে জাতীয় প্রেসক্লাব মিলনায়তনে এক প্রতিবাদ সভায় মির্জা ফখরুল এসব কথা বলেন। দেশব্যাপী হত্যা,গুম, নির্যাতন ও মিথ্যা মামলার প্রতিবাদে জাতীয়তাবাদী যুবদল ঢাকা মহানগর দক্ষিণ এ সভার আয়োজন করে।মির্জা ফখরুল বলেন,সরকারের প্রত্যক্ষ মদদেই সারাদেশে হত্যাকাণ্ড চলছে।অবিলম্বে আন্দোলনের মাধ্যমে সরকারের পতন ঘটানো হবে বলেও হুঁশিয়ারি দেন মির্জা ফখরুল।
ভারতের নির্বাচনে বিজেপি সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করায় মোদিকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দেয়া চিঠির কঠোর সমালোচনা করেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেন, শেখ হাসিনা মোদিকে লেখা চিঠিতে দেশকে ছোট করেছেন, দেশের মানুষকে ছোট করে তিনি নিজেকে হাস্যকর ব্যাক্তিতে পরিণত করেছেন।নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে নিজেকে তুলনা কওে প্রধানমন্ত্রী শুধু নিজেকে নয়, বাংলাদেশকেও ছোট করেছেন বলে মন্তব্য করেন এ বিএনপি নেতা। কারণ হিসেবে তিনি বলেন, মোদী জনগণের ভোটে ক্ষমতায় এলেও শেখ হাসিনা আসেন নি।
তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী তার চিঠিতে উলে¬খ করেছেন-ভারতের নির্বাচনে জনগণের বিশাল সংখ্যাগরিষ্ঠতায় বিজেপি ক্ষমতাসীন হওয়ায় আমরা জনগণের বিশাল ম্যাডেন্ট পাওয়া সরকার এক সঙ্গে কাজ করতে চাই।মির্জা ফখরুল বলেন, এরা জনগণের সরকার নয়। জনগণের সাথে এদের সর্ম্পক নেই। বিগত ৫ জানুয়ারির নির্বাচনে যারা ৯৫ ভাগ মানুষের ভোট পায়নি তারা কিভাবে নিজেদেরকে বিশাল ভোটে নির্বাচিত সরকার বলে দাবি করে।
তিনি বলেন, ৫ জানুয়ারি নিবার্চনের পর গত ৩/৪ মাসে সারাদেশে ৩১০ জন খুন, গুম অপহৃত হয়েছে। হত্যা, গুম, খুন এখন সারাদেশে নিত্যনৈমিত্তিক ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে। তার চেয়ে ভয়াবহ ব্যাপার হচ্ছে- এসব ঘটনার সাথে সরকারের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা জড়িয়ে পড়েছে। তারা টাকার বিনিময়ে মানুষকে হত্যা, গুম ও অপহরণ করছে। এসব ঘটনা একটা সভ্য সমাজে হতে পারে না।
র্যাবের কঠোর সমালোচনা করে বিএনপির এ নেতা বলেন, আমরা যখন র্যাব প্রতিষ্ঠা করেছিলাম- তখন র্যাবকে ব্যবহার করা হয়েছে দেশে সন্ত্রাস ও জঙ্গি নির্মূলের কাজে। আমরা তাদের রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে ব্যবহার করিনি। কিন্তু আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর তারা সম্পূর্ণভাবে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে র্যা বকে ব্যবহার করছে।তিনি বলেন,যে র্যাব মানুষের নিরাপত্তার দেয়ার পরিবর্তে মানুষের জীবন হরণকারী বাহিনীতে পরিণত হয়- সেই র্যাবের এখন আর প্রয়োজন নেই। এ কারণেই দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া র্যাব বিলুপ্তের কথা বলেছেন।
এ দলটির হাতে অতীতেও গণতন্ত্র হত্যা হয়েছিলো, এখনো তাদের হাতেই গণতন্ত্র হত্যা হচ্ছে বলে মন্তব্য করেন মির্জা ফখরুল। তারা দেশকে ক্রমশ তলাবিহীন ঝুড়িতে পরিণত করছে।
আওয়ামী লীগ স্বৈরতন্ত্রের চেয়ে খারাপ অবস্থায় চলে গেছে উলে¬খ করে তিনি বলেন, তারা জনগণকে ভোট থেকে বঞ্চিত করে সম্পূর্ণ অনৈতিকভাবে ক্ষমতায় জগদ্দল পাথর হয়ে চেপে বসেছে।তিনি বলেন, অত্যাচার-নিপীড়ন চালিয়ে দেশপ্রেমিক ও জাতীয়তাবদী শক্তিকে স্তব্ধ করা যাবে না। বরং যত অত্যাচার-নিপীড়ন চালাবে ততই তারা শক্তিশালী হবে। তাই যুবদলকে ভ্যানগার্ড হিসেবে এগিয়ে আসতে হবে। যুবদলকে ঘুড়ে দাঁড়াতে হবে। তাদেরকে সংগঠন শক্তিশালী করতে হবে।
তিনি বলেন, আমাদের দুর্ভাগ্য, গণতন্ত্র হত্যা করে তারা গণতন্ত্রের কথা বলে। তারা এখন সামরিক স্বৈরতন্ত্রের চেয়েও খারাপ অবস্থায় চলে গেছে।তিনি বলেন, নারায়ণগঞ্জের সাত খুনের ঘটনার অনেক আগে থেকেই আমরা অপহরণ, গুমের প্রতিবাদ করে আসছিলাম। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনকভাবে এর কোনো প্রতিকার দেখতে পাইনি।ইলিয়াস আলী, চৌধুরী আলম গুমের ঘটনা তুলে ধরে তিনি আবারও র্যাব ও সরকারকে এর জন্য দায়ী করেন।
ফখরুর বলেন, নারায়ণগঞ্জে হত্যাকাণ্ড র্যাব ঘটিয়েছে ও তা অর্থের বিনিময়ে। কুমিল¬ায়ও র্যাবের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। ডিএমপি’র সাইটে দেওয়া হয়েছে, অর্থ-আত্মসাতের অভিযোগে র্যাবের সদস্যদের সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। এগুলো শুধু সেই সংবাদ, যেগুলো আমরা পাচ্ছি, প্রকাশিত হচ্ছে।
তিনি বলেন, অপহরণের ঘটনাগুলোর বেশিরভাগই র্যাবের বিরুদ্ধে এসেছে। মানুষ উৎকণ্ঠা ও উদ্বেগের সঙ্গে দেখছে, র্যাব এখন মানুষের জীবন রক্ষার পরিবর্তে জীবন হরণের কাজে ব্যবহার হচ্ছে। জঙ্গি দমনে ব্যবহার করার কথা র্যাব। কিন্তু বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর থেকেই বিরোধীদল দমনে র্যাবকে ব্যবহার করা হচ্ছে।
ফখরুল আরও বলেন, অত্যন্ত যুক্তিসঙ্গতভাবেই সুশীলরা ও খালেদা জিয়া বলেছেন, যে র্যাব মানুষের অধিকার ও প্রাণ হরণ করে, সে র্যাবের প্রয়োজন নেই।
ভারতের ভাবী প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর প্রশংসায় পঞ্চমুখ হলেন বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী যুবদলের সভাপতি সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল। বাংলাদেশের ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ সরকারের নেতারা মোদীর ক্ষমতালাভে লোক দেখানো আনন্দ প্রকাশ করছেন বলেও মন্তব্য করেন তিনি।এ সময় মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল আওয়ামী লীগ সরকারের মন্ত্রী-এমপিদের সমালোচনা করতে গিয়ে মোদীর প্রশংসা করে বলেন, নরেন্দ্র মোদী জনগণের নির্বাচিত একজন সরকার প্রধান। মোদী আপনাদের (আওয়ামী লীগ) মতো গায়ের জোরে চেপে বসা কেউ নন।
তিনি বলেন,আওয়ামী লীগ নেতারা মোদীর ক্ষমতায় আসা দেখে লোক দেখানো আনন্দ প্রকাশ করছেন। কিন্তু এতে কোনো লাভ হবে না। এই মোদী মুদি দোকানদার নন। সুতরাং কংগ্রেসের মতো চাইলেই তিনি আপনাদের সব দিয়ে দেবেন না।
এতে সভাপতিত্ব করেন আয়োজক সংগঠনের সিনিয়র সহ-সভাপতি মাসুদ আহমেদ মিলন।আয়োজক সংগঠনের সিনিয়র সহ-সভাপতি মাসুদ আহমেদ মিলনের সভাপতিত্বে এতে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন বিএনপির যুগ্ম-মহাসচিব বরকতুল¬াহ বুলু, যুবদল সভাপতি সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, যুবদলের সিনিয়র সহ- সভাপতি অ্যাডভোকেট আবদুস সালাম, স্বেচ্ছাসেবক দলের সাংগঠনিক সম্পাদক শফিউল বারী বাবু, ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক হাবিবুর রশিদ হাবিব প্রমুখ।