দৈনিক বার্তা : নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের প্যানেল মেয়র নজরুল ইসলাম ও অ্যাডভোকেট চন্দন সরকারকে অপহরণ ও খুনের মামলার প্রধান আসামি নূর হোসেনের অস্থাবর সম্পত্তি ক্রোক করতে অভিযান চালিয়েছে। বিকেল পৌনে ৪টায় সিদ্ধিরগঞ্জের শিমরাইলের টেকপাড়ায় নূর হোসেনের মালিকানাধীন ভবনের নিচ তলার কলাপসিবল গেটের তালা ভেঙে ভেতরে প্রবেশ করে পুলিশ। বাড়ি থেকে আট রাউন্ড গুলিসহ রিভলবার উদ্ধার করে পুলিশ।
ইতোমধ্যে ওই ভবন থেকে মালামাল ক্রোক করে গেটের বাইরে আনা হয়। স্থানীয় ৫ জন স্বাক্ষীর উপস্থিতিতে সিদ্ধিরগঞ্জ থানার ওসি আলাউদ্দিনের নেতৃত্বে ৫০ সদস্যের একটি পুলিশ টিম এ ক্রোক অভিযান করে। পুরো ক্রোক অভিযানের তদারকি করছেন নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসনের এনডিসি আবুল কাশেম শাহীন।
নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের প্যানেল মেয়র নজরুল ইসলাম ও অ্যাডভোকেট চন্দন সরকারকে অপহরণ ও খুনের ঘটনার প্রধান আসামি নূর হোসেনের বাড়ি থেকে ৮ রাউন্ড গুলিসহ একটি রিভলবার, শটগানের ৮ রাউন্ড কার্তুজ ও হরিণের চামড়াসহ বেশ কিছু মালামাল জব্দ করেছে পুলিশ।
বৃহস্পতিবার বিকেল পৌনে ৪টায় সিদ্ধিরগঞ্জের শিমরাইলের টেকপাড়ায় নূর হোসেনের দুই তলার বাড়িতে অভিযান শুরু করে পুলিশ।
অভিযানে জব্দ করা মালামাল বাড়ির সামনের উঠানে এনে জড়ো করা হচ্ছে। এর মধ্যে রয়েছে দুটি এলসিডি টেলিভিশন, দুই সেট সোফাসহ অন্যান্য আসবাবপত্র।পুরো ক্রোক অভিযানের তদারকি করছেন নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসনের এনডিসি আবুল কাশেম শাহীন।
এর আগে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা নারায়ণগঞ্জ ডিবি পুলিশের ওসি মামুনুর রশিদ মন্ডলের এক আবেদনের প্রেক্ষিত্রে বুধবার সন্ধ্যায় নারায়ণগঞ্জ সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট কেএম মহিউদ্দিন এক আদেশে নূর হোসেনের অস্থাবর সম্পত্তি ক্রোকের নির্দেশ দেন।
গত ২৭ এপ্রিল নারায়ণগঞ্জ থেকে একসঙ্গে নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের ৩ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর ও প্যানেল মেয়র-২ নজরুল ইসলাম, তার বন্ধু মনিরুজ্জামান স্বপন, তাজুল ইসলাম, লিটন, নজরুলের গাড়িচালক জাহাঙ্গীর আলম, আইনজীবী চন্দন কুমার সরকার এবং তার ব্যক্তিগত গাড়িচালক ইব্রাহিম অপহৃত হন। পরদিন ২৮ এপ্রিল নারায়ণগঞ্জ থানায় একটি মামলা দায়ের করেন নজরুল ইসলামের স্ত্রী। কাউন্সিলর নূর হোসেনকে প্রধান করে মামলায় আসামি করা হয় মোট ১২ জনকে। গত ৩০ এপ্রিল বিকেলে নারায়ণগঞ্জের শীতলক্ষ্যা নদী থেকে ৬ জন এবং ১ মে সকালে একজনের লাশ উদ্ধার করা হয়।
নিহত সবারই হাত-পা বাঁধা ছিল। পেটে ছিল আঘাতের চিহ্ন। প্রতিটি লাশ ইটভর্তি দুটি করে বস্তা বেঁধে ডুবিয়ে দেওয়া হয়। ৩ মে নূর হোসেনের সিদ্ধিরগঞ্জের বাসায় অভিযান চালিয়ে পুলিশ ১৬ জনকে গ্রেফতার এবং রক্তমাখা মাইক্রোবাস জব্দ করে। এরপর গ্রেফতার করা হয় আরো ৭ জনকে।
এ হত্যাকান্ডের ঘটনায় র্যাব-১১ এর কয়েকজন কর্মকর্তার বিরুদ্ধে সংশ্লিষ্টতার অভিযোগ করেন নিহত প্যানেল মেয়র নজরুলের পরিবারের সদস্যরা। প্যানেল মেয়র নজরুল ইসলামের শ্বশুর অভিযোগ করেন, ৬ কোটি টাকার বিনিময়ে র্যাবকে দিয়ে ওই সাতজনকে হত্যা করিয়েছেন নূর হোসেন। এর পর থেকেই সে পলাতক রয়েছে।
এদিকে, র্যাবের বিরুদ্ধে হুমকি দেয়ার অভিযোগ তুলেছেন নিহত কাউন্সিলর নজরুল ইসলামের শ্বশুর শহীদুল ইসলাম, যিনি এই হত্যাকাণ্ডে এই বাহিনীর সংশ্লিষ্টতার অভিযোগ প্রথম আনেন।
বৃহস্পতিবার নারায়ণগঞ্জ সার্কিট হাউসে গণশুনানিতে সাক্ষ্য দিয়ে বেরিয়ে শহীদুল সাংবাদিকদের বলেন, র্যাবের বিরুদ্ধে কথা বলায় আমাকে হুমকি দিয়েছে। তাই জীবনের নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কায় আছি।
শহীদুলের অভিযোগের প্রতিক্রিয়ায় র্যাব-১১ এর অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট আনোয়ার লতিফ খান বলেন, এই অভিযোগ ভিত্তিহীন।
তবে র্যাবের নামেও কেউ যদি এই ধরনের হুমকি দিয়ে থাকে,তা আমরা তদন্ত করে দেখব।
নূর হোসেন ভারতে পালিয়ে গেছেন বলে র্যাবের অতিরিক্ত মহাপরিচালক কর্নেল জিয়াউল আহসান জানানোর পর শহীদ আবার অভিযোগ করেন, র্যাবের সহায়তায় পালিয়েছেন এই হত্যাকাণ্ডের প্রধান আসামি।
নজরুলের শ্বশুরের ওই অভিযোগের প্রতিক্রিয়ায় র্যাবের মুখপাত্র হাবিবর রহমান বলেছিলেন, তদন্তকে ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করতে শহীদুল এই ধরনের কথা বলছেন।
র্যাব তার বাহিনীর তিন কর্মকর্তা এবং নূর হোসেনকে বাঁচানোর চেষ্টা চালাচ্ছে বলে শহীদুলের অভিযোগ।
শহীদুল প্রথম অভিযোগ তোলার পর র্যাব বিভাগীয় তদন্ত শুরু করেছে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটিতে হাজির হয়ে বাহিনীর মহাপরিচালক বলেছেন, তারা কাউকে বাঁচানোর চেষ্টা করবেন না।
প্রধানমন্ত্রী ও স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী খুনিদের গ্রেপ্তারের আশ্বাস দেয়ায় তাদের ওপর ভরসা রাখছেন শহীদুল। তবে দুই-এক দিনের মধ্যে গ্রেপ্তার না হলে আন্দোলনে নামার হুমকি দিয়েছেন সাবেক এই ইউপি চেয়ারম্যান।
এই হত্যাকাণ্ডে সম্পৃক্ততার অভিযোগ ওঠার পর র্যাব-১১ এর অধিনায়কসহ তিন কর্মকর্তাকে প্রত্যাহার করে আনার পর সামরিক বাহিনী থেকে তাদের অবসরে পাঠানো হয়। তাদের গ্রেপ্তারের নির্দেশ রয়েছে হাই কোর্টের।
এদিকে, নারায়ণগঞ্জে বহুল আলোচিত ৭ খুনের ঘটনায় আদালতের নির্দেশে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় গঠিত তদন্ত কমিটির পরবর্তী অগ্রগতি প্রতিবেদন আগামী ৪ জুনের মধ্যে আদালতে দাখিল করতে নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট।
বৃহস্পতিবার তদন্ত কমিটির এক সপ্তাহের প্রতিবেদন দাখিলের পর বিচারপতি মো. রেজাউল হক ও বিচারপতি গোবিন্দ চন্দ্র ঠাকুরের হাইকোর্ট বেঞ্চ এ আদেশ দেন।
আদালতে প্রতিবেদন উপস্থাপন করেন অ্যাটর্নী জেনারেল মাহবুবে আলম।এর আগে বুধবার তদন্ত কমিটি এক সপ্তাহের তদন্তের অগ্রগতি প্রতিবেদন হাইকোর্টে জমা দেয়।