দৈনিক বার্তা : জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মোহাম্মদ কামারুজ্জামান মুক্তিযুদ্ধের সময় মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে মৃত্যুদণ্ডের আদেশের রায়ের বিরুদ্ধে খালাস চেয়ে জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মোহাম্মদ কামারুজ্জামানের করা আপিলের ওপর শুনানি হবে ১৮ মে।
বৃহস্পতিবার প্রধান বিচারপতি মো. মোজাম্মেল হোসেনের নেতৃত্বাধীন পাঁচ বিচারপতির বেঞ্চ শুনানির এ তারখি ধার্য করেন।এ সময় রাষ্ট্রপক্ষে অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম,কামারুজ্জামানের পক্ষে আইনজীবী খন্দকার মাহবুব হোসেন, তাজুল ইসলামসহ প্রমুখ আইনজীবী উপস্থিত ছিলেন।
একাত্তরে মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে গত বছরের ৯ মে কামারুজ্জামানকে মৃত্যুদণ্ডাদেশ দেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২। রায় ঘোষণার ২৭ দিনের মাথায় ওই বছরের ৬ জুন ওই সাজা বাতিল করে খালাস চেয়ে কামারুজ্জামান আপিল করেন। তবে ট্রাইব্যুনালের ওই রায়ের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষ আপিল করেনি।
কারাদণ্ডাদেশ দেন ট্রাইব্যুনাল। তবে সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ডাদেশ দেওয়ায় যাবজ্জীবন ও ১০ বছরের শাস্তি মৃত্যুদণ্ডের সঙ্গে একীভূত হয়ে যাবে। অপর দুটি অভিযোগ প্রমাণ করতে না পারায় তা থেকে খালাস দেওয়া হয়।এর আগে মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডপ্রাপ্ত জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল আবদুল কাদের মোল্লার দণ্ডের রায়ের বিরুদ্ধে আসামিপক্ষ ও রাষ্ট্রপক্ষ পৃথক আপিল করে। আপিলের ওপর শুনানি শেষে
বৃহস্পতিবার প্রধান বিচারপতি মো.মোজাম্মেল হোসেনের নেতৃত্বে আপিল বিভাগের পাঁচ বিচারপতির বেঞ্চ এই দিন ঠিক করেন।আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে দণ্ড দেয়ার এক বছরেরও বেশি সময় পর মামলাটি আপিল শুনানির দিকে যাচ্ছে।
একাত্তরে ময়মনসিংহ জেলা শাখার আল বদর প্রধান হিসাবে দায়িত্ব পালনকারী কামারুজ্জামানকে ২০১৩ সালের ৯মে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছিল আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল।ওই রায়ের বিরুদ্ধে কামারুজ্জামান গত ৬ জুন সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগে আপিলের আবেদন করেন। তবে সর্বোচ্চ সাজার আদেশ হওয়ায় প্রসিকিউশন এ মামলায় আপিল করেনি।
ওই বছর সংশোধিত যুদ্ধাপরাধ আইনে আপিল শুনানির জন্য ৬০দিন বেঁধে দেয়া হয়। কাদের মোল্লার মামলায় আদালত সেটা মানার আগ্রহও দেখায়। পরে নির্দেশনামূলক বিবেচনায় সেই বাধ্যবাধকতার বাইরে চলে যায় আপিল বিভাগ।
ট্রাইব্যুনালের রায়ে হত্যা ও গণহত্যার দুটি অভিযোগ সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত হওয়ায় জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল কামারুজ্জামানকে মৃত্যুদণ্ড দেয়া হয়। আর দুটি অভিযোগে তাকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড ও একটিতে ১০ বছরের কারাদণ্ড দেয়া হয়।এর আগে আপিল বিভাগে কাদের মোল্লা ও দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর আপিল শুনানি হয়েছিল।এর মধ্যে মোল্লাকে আপিল বিভাগ মৃত্যুদণ্ড দেয়, যা গত ১২ ডিসেম্বর কার্যকর হয়।
সাঈদীর আপিলের শুনানি গত ১৬ এপ্রিল শেষ হয়, যা এখন রায়ের অপেক্ষায় রয়েছে। সাঈদীর মামলা শুনানি শুরু হয়েছিল ২০১৩ সালের ২৪ সেপ্টেম্বর।২০১০ সালের ২৫ মার্চে গঠন করা হয় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল, যার মাধ্যমে বহু প্রতীক্ষিত বিচার শুরু হয়।
জামায়াতে ইসলামীর সাবেক রুকন পলাতক বাচ্চু রাজাকারের মৃত্যুদণ্ডের মাধ্যমে ২০১৩ সালের ২১ জানুয়ারি শুরু হয় যুদ্ধাপরাধ মামলায় রায়।এরপর একে একে সর্বোচ্চ শাস্তির রায় হয় জামায়াত নেতা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী, মোহাম্মদ কামারুজ্জামান, আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদ, পলাতক দুই ছাত্রসংঘ নেতা আশরাফুজ্জামান খান ও চৌধুরী মুঈনুদ্দীনের। মৃত্যুদণ্ডতুল্য অপরাধ করেও বয়সের কারণে ৯০ বছর কারাদণ্ড পান গোলাম আযম।
এ ছাড়া বিএনপি নেতা সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীকে মৃত্যুদণ্ড এবং আবদুল আলীমকে আমৃত্যু কারাদণ্ড দেয় ট্রাইব্যুনাল।কারাগারে থাকা সব দণ্ডিতের মামলাই বর্তমানে চূড়ান্ত নিষ্পত্তির জন্য আপিল বিভাগে রয়েছে।
নেতাদের পাশাপাশি দলগতভাবে বিরোধিতার জন্য জামায়াতকে অপরাধী সংগঠন হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে আদালতের রায়ে। হাই কোর্টের একটি রায়ে দলটি নির্বাচনে অংশগ্রহণের যোগ্যতা হারিয়েছে। এই দলের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করতে তদন্তও করছে ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থা।