অরূপ তোমার রূপের লীলায় জাগে হৃদয় পুরু/ আমার মধ্যে তোমার শোভা এমন সুমধুর…..। এমনি রূপ ও রসের সুধায় বাংলা সাহিত্যকে যিনি সুশোভিত করেছেন, পরিপূর্ণতা দিয়েছেন, করেছেন ঐশর্যবান সেই বিশ্ব কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের আজ ১৫৩তম জন্মবার্ষিকী। আজ পঁচিশে বৈশাখ। ওই মহামানব আসে/ দিকে রোমাঞ্চ লাগে/ মর্ত্যধূলির ঘাসে ঘাসে…/ উদয় দিগন্তে ওই শুভ্র শঙ্খ বাজে/ মোর চিত্ত মাঝে/ চির নূতনেরে দিল ডাক/ পঁচিশে বৈশাখ। বাংলা ভাষাভাষি প্রতিটি মানুষের মননের সঙ্গী কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ১২৬৮ বঙ্গাব্দের এইদিনে কলকাতার জোড়াসাঁকোর ঠাকুর পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। বাবা দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর ও মা সারদা দেবী। বাঙালির চিন্তা-মনন-অনুভূতির এমন কোন ক্ষেত্র নেই যেখানে কবিগুরুর সৃষ্টিশীলতার ছোঁয়া পড়েনি। সত্য, সুন্দর, ন্যায় ও কল্যাণের পথে ধাবিত করেছেন জাতির মননকে। জন্মের দেড়শ বছর পরেও শিল্প-সাহিত্যের সব শাখাতেই দীপ্তিমান বিশ্বকবি। আজও তার সৃষ্টিসমগ্র ভাবনার বীজ বুনে দেয় সাহিত্য ও শিল্প অনুরাগীর হৃদয়ের গহীনে। বিশ্বকবির জন্মদিন আজ উৎসাহ-উদ্দীপনা ও গভীর শ্রদ্ধার সাথে নানা আয়োজনে উদযাপিত হবে।
বিশ্বকবির জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে প্রেসিডেন্ট, প্রধানমন্ত্রী, বিএনপি চেয়ারপারসন পৃথক বাণী দিয়েছেন। প্রেসিডেন্ট তাঁর বাণীতে বলেন, বাংলা ভাষা ও সাহিত্যে বিষ্ময়কর প্রতিভা রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। শিল্পসাহিত্যের পাশাপাশি শিক্ষাসংগঠন, স্বদেশের মুক্তি আন্দোলন, শান্তির পক্ষে অবস্থান গ্রহণসহ বাংলার গ্রামীণ জনগণের কল্যাণে কৃষিব্যাংক ও সমবায় উদ্যোগ তাকে পরিণত করেছে চিরকালীন মানব হিতৈষী হিসেবে। আমাদের মহান স্বাধীনতা যুদ্ধে রবীন্দ্রনাথের গান ছিল অবিনাশী প্রেরণার চিরন্তন উৎস। আমার সোনা বাংলা, আমি তোমায় ভালোবাসি, তাঁর এই গান আমাদের ঐক্যের প্রতীক জাতীয় সংগীত।
প্রধানমন্ত্রীর বাণীতে বলেন, বিশ্বসাহিত্যের উজ্জ্বল নক্ষত্র কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ছিলেন বহুমুখী প্রতিভার অধিকারী। রবীন্দ্রনাথের শিক্ষাভাবনা আমাদের বিজ্ঞানভিত্তিক আধুনিক শিক্ষায় অগ্রগামী হতে অনুপ্রাণিত করে। বাংলাদেশের মাটি ও মানুষের তিনি একান্ত আপনজন। বিএনপি চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া তার বাণীতে বলেন, বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ছিলেন বাংলা সাহিত্যের অবিসংবাদিত প্রাণপুরুষ। তার লেখনি আজও সমাজের অনাচার, অবিচার আর বৈষম্যের বিরুদ্ধে প্রতিবাদী হতে আমাদের অনুপ্রেরণা যোগায়। আমরা তার অম্লান স্মৃতির প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানাই। এ উপলক্ষে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরও পৃথক বাণী দিয়েছেন।
এ উপলক্ষে দুইদিনব্যাপী রবীন্দ্র-উৎসবের আয়োজন করেছে ঐতিহ্যবাহী সাংস্কৃতিক সংগঠন ‘ছায়ানট’। আজ থেকে শুরু হবে উৎসব। অন্যান্য বছরের চেয়ে এবারের রবীন্দ্র জন্মোৎসব উদযাপনে থাকছে ভিন্ন আবহ। চলমান রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে সমাজের অস্থিরতার বিরুদ্ধে সত্য ও সুন্দরের শুভাগমনই উৎসবে আগতদের কামনা। উৎসবানুষ্ঠান একক কণ্ঠের গান, কবিতা আবৃত্তি, পাঠ ও নৃত্য পরিবেশনা দিয়ে সাজানো হয়েছে। এছাড়া অন্যান্য সাংস্কৃতিক সামাজিক সংগঠনও নানা আয়োজনের রবীন্দ্র জন্মবার্ষিকী পালন করবে। টিভি চ্যানেলগুলোতে প্রচার হবে বিশেষ অনুষ্ঠানমালা।