দৈনিক বার্তা : জ্বলে পুড়ে ছাই হয়ে গিয়েছে কফিনগুলি। ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়ে রয়েছে কাঠের পাটাতন, জলের কলসি, ভাঙাচোরা বাসনপত্র। অথচ প্রায় অক্ষতই রয়ে গিয়েছে কফিনগুলিতে সমাহিত ৫০টি মমি!
কায়রোর দক্ষিণে ‘কিং অব ভ্যালি’-র কাছে সন্ধান মিলল খ্রিস্টপূর্ব চতুর্দশ শতকের এ রকমই এক সমাধিক্ষেত্রের। বাসেল ইউনিভার্সিটির প্রত্নতত্ত্ববিদদের দাবি, অষ্টাদশ ফারাও সাম্রাজ্যের রাজা, রানি ও তাঁদের পরিবারের অন্য সদস্যদের সমাহিত করা হয়েছিল এখানেই। এর পর খ্রিস্টপূর্ব উনবিংশ শতকের শেষে এই সমাধিক্ষেত্রে লুঠপাট চালায় চোরেরা। আগুন লাগিয়ে দেয় সেখানে। যার জেরেই পুড়ে ছাই হয়ে যায় কফিনগুলি।
ফারাও রাজত্বের কনিষ্ঠতম শাসক তুতানখামেনের মৃত্যু ঘিরে গত তিন বছর ধরে লুক্সর শহরের এই ‘কিং অব ভ্যালি’-তেই গবেষণা চালাচ্ছেন প্রত্নতত্ত্ববিদেরা। সেই সূত্রেই সংশ্লিষ্ট এলাকায় চলছে খননকাজ। সম্প্রতি মাটি থেকে ছ’মিটার গভীরে এই সমাধিক্ষেত্রটি চোখে পড়ে তাঁদের। কুড়ি ফুট বিস্তৃত এই সমাধিক্ষেত্রে আড়াআড়ি ভাবে ছিল ৫০টি সমাধি। সমাধিগুলির পাশে নাম খোদাই করা কাঠের পাটাতনগুলিও প্রায় অক্ষতই রয়েছে। তাঁর থেকেই প্রায় তিরিশ জনের পরিচয় জানা সম্ভব হয়েছে বলে জানিয়েছেন গবেষকরা। পাটাতনে খোদাই করা হিয়েরোগ্লিফিক্স থেকেই জানা গিয়েছে, এখানেই সমাহিত করা হয়েছিল ফারাও তুতমোসিস চতুর্থ ও আমেনহোতেপ তৃতীয়কে। সমাধিক্ষেত্রে সন্ধান মিলেছে সদ্যোজাত কিছু শিশুর মমিরও। গবেষকদের দাবি, এখানেই সমাহিত করা হয়েছিল অষ্টাদশ ফারাও সাম্রাজ্যের অন্তত চার রাজা, নয় যুবরানিকে। সন্ধান মিলেছে কিছু বিদেশিনির মমিরও। মমিগুলির পাশ থেকে উদ্ধার হয়েছে প্যাপিরাস কাগজের মণ্ড, ছিন্নভিন্ন পোশাক।
গবেষকরা এ-ও বলছেন, খ্রিস্টপূর্ব চতুর্দশ শতকের আগেও হয়তো ব্যবহৃত হতো সমাধিক্ষেত্রটি। উদ্ধার হওয়া ছোট ধাতব কলসি প্রভৃতি থেকে অনুমান, খ্রিস্টপূর্ব নবম শতকেও ‘কিং অব ভ্যালি’-তে সমাহিত হতো কফিন। এখানে উদ্ধার হওয়া কফিনগুলির বেশ কয়েকটির গায়ে ‘প্রিন্স’ অথবা ‘প্রিন্সেস’ শব্দ খোদাই করা রয়েছে। তবে দুই তৃতীয়াংশ কফিনের গায়ে তেমন কিছুই খোদাই নেই। তা দেখে গবেষকদের অনুমান, সম্ভবত কোনও পুরোহিত পরিবার সে সময় ব্যবহার করত এটি। সমাধিক্ষেত্রের একদম মাঝখানে রয়েছে একটি ঘর। তিন দিকে আরও তিনটি। কিছুটা দূরে আরও একটি। সব মিলিয়ে ভূগর্ভস্থ মোট পাঁচটি ঘরের সন্ধান মিলেছে। মাঝখানে রয়েছে যাতায়াতের পথও।
অষ্টাদশ ফারাও রাজাদের এই সমাধিক্ষেত্রটি মিশরের ইতিহাসে নতুন কোনও অধ্যায়ের সূচনা করবে বলেই দাবি প্রত্নতত্ত্ববিদদের। মিশর বিশেষজ্ঞ সুজানে বাইকেল বললেন, “আশা করি, এ বার হয়তো জানা যাবে প্রাচীন মিশরে মানুষের জীবনযাত্রা ঠিক কেমন ছিল।”