দৈনিক বার্তা : র্দীঘ ৯ মাস বন্ধ থাকার পর ভোলার বিদ্যুৎ প্লান্ট উদ্বোধন হলেও বিদ্যুৎ সরবরাহ এখনো শুরু হয়নি। কবে বিদ্যুৎ পাবে ভোলাবাসী তাও সুনিদৃষ্ট করে বলছে না কর্তৃপক্ষ। তবে চলতি সপ্তাহের মধ্যেই বিদ্যুৎ পরিস্থিতি স্বাভাবিক হবে এমনটাই আশা করছেন কর্তৃপক্ষ। কিন্তু ভোলাবাসী বিদ্যুৎ না পেয়ে এখনো হতাশার মধ্যে দিন কাটাচ্ছে। মরার উপর খাড়ার ঘা এসে দাঁড়িয়েছে শুক্রবার রাতে আবার পটুয়াখালী থেকে আনা ৩৩ কেভি লাইনে ত্রুটি দেখা দিয়েছে। ফলে শুক্রবার রাত থেকে ভোলার ৬ উপজেলা পুরোপুরি বিদ্যুৎ বঞ্চিত হয়ে পড়ে। এদিকে বারবার বিদ্যুৎ লোডশেডিংয়ের তীব্র তাবদাহে জনজীবন কাটে দুর্বিসহ হয়ে উঠেছে ভোলাবাসীর।
জানা গেছে, শুক্রবার ভোলার একমাত্র গ্যাস ভিত্তিক ৩৪.৫ মেগাওয়াট রেন্টাল বিদ্যুৎ প্লান্ট বাণিজ্য মন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ ভেঞ্চার এ্যানার্জি রিসোর্স পরিচালিত এ প্লান্টে নতুন ভাবে সংযোজিত ২৪ মেগাওয়াট ক্ষমতা সম্পন্ন বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি উদ্বোধন করেন। ভেঞ্চার এ্যানার্জি রিসোর্স লিমিটেড ২০০৯ সালের ১২ জুলাই ভোলায় বাণিজ্যিক ভাবে বিদ্যুৎ উৎপাদন শুরু করে, কিন্তু নিন্মমানের পুরোনো জেনারেটর স্থাপনের কারনে প্লান্টটি কিছু দিন পর পরই বিকল হয়ে আসছিলো। সবশেষ গত বছরের ১০ আগষ্ট এ প্লান্টটি সম্পূর্ণ রূপে বন্ধ হওয়ায় চরম ভোগান্তিতে পড়ে ভোলার ৭ উপজেলার ২১ লক্ষ মানুষ। তবে এবারের মেশিন গুলো পূর্বেও চাইতে অনেক উন্নত হওয়ায় তেমন কোন সমস্যায় পরতে হবেনা বলে জানিয়েছেন ভেঞ্চার কর্তৃপক্ষ।
৯ মাস এ প্লান্টটি বন্ধ থাকার পর শুক্রবার হাঁক ডাক দিয়ে উদ্বোধন করা হয়। কিন্তু উদ্বোধন করা হলেও বিদ্যুৎ সরবরাহ করতে পারেনি ভেঞ্চার এ্যানার্জি কর্তৃপক্ষ। ঠিক কবে নাগাদ পুরোদমে বিদ্যুৎ সরবরাহ শুরুকরা হবে তাও সুনির্দিষ্ট করে বলছে না কেউ। এ নিয়ে কেবল বিভ্রান্তিতে রয়েছে গ্রাহকরা। গ্রাহকদের মাঝে বিদ্যুৎ না পাওয়ায় দিন দিন ক্ষোভ বিরাজ করছে। ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশের ফল স্বরূপ ইতোমধ্যে লালমোহন, চরফ্যাশন, দৌলৎখান ও বাংলাবাজার বিদ্যুৎ অফিসে হামলা, ভাংচুর এবং অফিসে তালা দেওয়ার ঘটনা ঘটেছে। তবুও বিদ্যুৎ ব্যবস্থা স্বাভাবিক করতে পারেনি কর্তৃপক্ষ। ভোলার বিদ্যুৎ প্লান্ট বন্ধ হয়ে যাওয়ার পওে ভোলাবাসীকে পটুয়াখালী থেকে তেঁতুলিয়া নদীর মধ্য দিয়ে ৩৩ কেভির গ্রীড লাইন থেকে বিদ্যুৎ এনে কিছুটা চাহিদা পুরণ করা হতো। কিন্তু সে লাইনেও দেখা দেয় বার বার ত্রুটি। ভোলার বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি পটুয়াখালী সাবস্টেশনের মাধ্যমে জাতীয় গ্রীডের সাথে সংযুক্ত। ভোলা ও পটুয়াখালীর দুরত্ব ৬৫ কিলোমিটার। বিদ্যুতের আইন অনুযায়ী ৩৩ কেভির ভোল্টের বিদ্যুৎ ৩৩ মাইল পর্যন্ত নেওয়া যায়। শুধু তাই নয় পটুয়াখালীর বিদ্যুৎ ৯০ কিলোমিটার দুরে বোরহানউদ্দিন, চরফ্যাশন নেওয়ার কারণে গ্রাহকরা ভোল্টেজ অনেক কম পায়। এদিকে পটুয়াখালী থেকে ভোলায় যে বিদ্যুৎ আসে তাতে ৩৩ কেভির পরিবর্তে ভোলায় ২৩ কেভি পাওয়া যায় এবং জাতীয় গ্রীড থেকে বরিশাল থেকে আসা আরেকটি লাইনে ৩৩ কেভি পুরোটাই পাওয়া যায়।
ভোল্টেজের দু’রকমের তফাতের কারণে দু’টি লাইন একত্র করা যাচ্ছে না। ফলে একেক সময় এক একটি লাইন দুর্ঘটনার কবলে পড়তে হয়। অপর দিকে ভোলার অভ্যন্তরে ৩৩ কেভি লাইন গাছপালার মধ্য দিয়ে যাওয়ায় প্রতিনিয়ত আর্থ ফল্ট হয়ে লাইন বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে। ভোলার বিদ্যুৎ লাইন সরাসরি জাতীয় গ্রীডের সাথে সংযোগ না থাকায় লাইনের এ ক্রটি প্লান্টে সঞ্চালিত হয়ে প্লানটি ট্রিপ করে। ফল্টের পরিমাণ বেশি হলে ট্রান্সপরমার, জেনারেটরসহ মূল্যবান যন্ত্রপাতি পুড়ে যায়। সে কারণে আর্থিক ক্ষতিসহ ভেঞ্চার ব্যবসায়ীক সুনাম ক্ষুন্ন হচ্ছে।
শুক্রবার ২৪ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ প্লান্ট উদ্বোধন করে বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ ভোলাবাসীকে আশ্বস্ত করে বলেন, আগামী মে মাস থেকে ভোলার বিদ্যুৎ জনগণের চাহিদা মিটিয়ে অন্য জেলায় সরবরাহ হবে। তখন ভোলার মানুষকে আর বিদ্যুতের জন্য কষ্ট করতে হবে না। এছাড়া এ বছরের শেষ নাগাদ জেলার বোরহানউদ্দিন উপজেলায় ২২৫ মেগাওয়াট ক্ষমতা সম্পন্ন আরো একটি বিদ্যুৎ কেন্দ্র চালু হতে যাচ্ছে। এই বিদুৎ কেন্দ্রটি চালু হলে গোটা দক্ষিণ বঙ্গে আর বিদ্যুতের ঘাটতি থাকবে না।
এদিকে লালমোহন জোনের পল্লী বিদ্যুৎ অফিসের ডিজিএম সঞ্জিত কুমার মন্ডল জানান, শুক্রবার রাত সোয়া ১টায় পটুয়াখালীর ৩৩ কেভি লাইনে ত্রুটি দেখা দিয়েছে। তাই বিদ্যুৎ সরবরাহ করা যায়নি। অন্যদিকে ভোলার বিদ্যুৎ প্লান্ট উদ্বোধন করা হলেও সেটি এখনো ২৪ মেগাওয়াট পুরোদমে চালু করতে আরো কয়েকদিন সময় লাগবে বলে জানিয়েছেন তারা। সেক্ষেত্রে এ মাসের শেষের দিকেও হতে পারে আবার আগামী মে মাসের প্রথম দিকেও হতে পারে।