টিপু সুলতান/দৈনিক বার্তা : ঝিনাইদহের মহেশপুরে মৃত মুক্তিযোদ্ধা ও তাঁদের স্ত্রীদের জীবিত দেখিয়ে ভাতা উত্তোলন করে সেই টাকা আত্মসাত করা হচ্ছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা ইউনিটের সাবেক কমান্ডার নুরুল ইসলামসহ একটি চক্র এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত বলেও অভিযোগ পাওয়া যায়। তবে সাবেক কমান্ডার নুরুল ইসলাম অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।
মহেশপুরের সাবেক মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার আবু তালেব অভিযোগ করে জানান, মৃত মুক্তিযোদ্ধা ও তাঁদের স্ত্রীর স্বাক্ষর জাল করে এসব ভাতার টাকা উত্তোলন করা হচ্ছে। যার সত্যতা স্থানীয় সোনালী ব্যাংকের রেকর্ড থেকে পাওয়া গেছে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, উপজেলার বৈচিতলা গ্রামের মুক্তিযোদ্ধা চাঁদ আলী ছয় বছর আগে মারা যান। এরপর তাঁর স্ত্রী সুফিয়া খাতুন স্বামীর ভাতার টাকা উত্তোলন করে আসছিলেন। তিনিও এক বছর আগে মারা যান।ফলে বিধি অনুযায়ী তাঁর ভাতা বন্ধ হয়ে যাওয়ার কথা। কিন্তু তা না হয়ে এখনো ভাতা চালু রয়েছে। তাঁকে জীবিত দেখিয়ে সেই ভাতার টাকা উত্তোলন করে আত্মসাত করা হচ্ছে।এ বিষয়ে মৃত মুক্তিযোদ্ধা চাঁদ আলী বিশ্বাসের ছেলে লাল্টু বিশ্বাস বলেন, আমার বাবা মুক্তিযোদ্ধা চাঁদ আলী বিশ্বাস প্রায় ছয় বছর আগে মারা গেছেন। এক বছর আগে আমার মা মারা গেছেন। আমার মা মারা যাওয়ার পর সাবেক কমান্ডার নুরুল ইসলাম আমার মায়ের ভাতা বই নিয়ে যান। পরে আমি জানতে পারি আমার মাকে জীবিত দেখিয়ে ভাতার টাকা উত্তোলন করা হচ্ছে। গত বুধবার নুরুল ইসলাম আমার বাড়িতে ভাতার টাকা দিতে এসেছিলেন। আমি মরা মায়ের টাকা নেইনি। এদিকে মহেশপুরের আলামপুর গ্রামের মুক্তিযোদ্ধা আবদুর রশিদ দেড় বছর আগে মারা গেছেন। তাঁর ভাতার টাকা ভোগ করে আসছিলেন স্ত্রী জহুরা খাতুন। তিনিও ছয় মাস আগে মারা যান। কিন্তু তাঁকে কাগজে-কলমে জীবিত দেখিয়ে একটি চক্র ভাতার টাকা নিয়মিত উত্তোলন করছে। একই গ্রামের মুক্তিযোদ্ধা আবদুর রউফের মেয়ে তাসলিমা খাতুন বলেন, আমার বাবার মৃত্যুর পর আমার মা জহুরা খাতুন ভাতার টাকা ভোগ করতেন। কিন্তু আমার মা মারা যাওয়ার পরও ভাতার টাকা এখনো উত্তোলন করা হচ্ছে। গত বুধবার মুক্তিযোদ্ধা সাবেক কমান্ডার নুরুল ইসলাম এক হাজার টাকা বাড়িতে দিয়ে গেছেন। অন্যদিকে উপজেলার শ্যামকুড় গ্রামের মুক্তিযোদ্ধা আসমত আলী দীর্ঘদিন নিরুদ্দেশ হয়েছেন। তাঁর স্ত্রী সুফিয়া খাতুন কয়েক দফা ভাতার টাকা উত্তোলন করেছেন। এরপর সুফিয়া খাতুন দ্বিতীয় বিয়ে করেন। ফলে তাঁর ভাতা বন্ধ হওয়ার কথা। কিন্তু মুক্তিযোদ্ধা ইউনিট কমান্ড থেকে তাঁর ভাতার বই বন্ধ করা হয়নি। সাবেক মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার নুরুল ইসলাম অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, কে বা কারা মৃত মুক্তিযোদ্ধাদের ভাতার টাকা উত্তোলন করে আত্মসাত করছে তা আমার জানা নেই। আমার বিরুদ্ধে কিছু লোক ষড়যন্ত্র করে মিথ্যা অপবাদ দিচ্ছে। আমি এসব কর্মকা-ের সঙ্গে জড়িত নই। নুরুল ইসলাম আরো বলেন, মুক্তিযোদ্ধা ও তাঁদের স্ত্রীরা মারা গেলেও তাঁরা এক কিস্তির টাকা পান। গত ২৩ এপ্রিল সেই টাকা তাঁদের বাড়িতে দিতে গিয়েছিলাম। শ্যামকুড় গ্রামের মুক্তিযোদ্ধা আসমত আলী দীর্ঘদিন ধরে নিরুদ্দেশ হয়েছেন। তাঁর স্ত্রী সুফিয়া খাতুন কয়েক দফা ভাতার টাকা উত্তোলন করেছেন। এরপর তিনি দ্বিতীয় বিয়ে করেন। কিন্তু তাঁর ভাতা বই মুক্তিযোদ্ধা ইউনিট কমান্ড থেকে এখনো চালু রাখা হয়েছে।