দৈনিক বার্তা: দশম সংসদের সরকারদলীয় সিংহভাগ প্রভাবশালী মন্ত্রী ও সংসদ সদস্য সাড়ে তিন মাসেও নির্বাচনী ব্যয় বিবরণী জমা দিতে ব্যর্থ হওয়ায় তারা ইসির মামলার জালে আটকা পড়তে যাচ্ছেন। গত মঙ্গলবার রিটার্নিং কর্মকর্তাদের কাছে পাঠানো এক চিঠির মাধ্যমে তাদের বিরুদ্ধে মামলা করার নির্দেশ দিয়েছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)।
এ বিষয়ে বৃহস্পতিবার নির্বাচন কমিশনার মোহাম্মদ আবু হাফিজ বলেন, যারা সময় মতো সংশ্লিষ্ট রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে নির্বাচনের ব্যয় বিবরণী জমা দেননি, তাদের বিরুদ্ধে মামলার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। মামলার অগ্রগতি জানাতে রিটার্নিং কর্মকর্তাদের সময় বেঁধে দেওয়া হয়েছে।
ইসি সূত্র জানায়, ২৩ এপ্রিলের মধ্যে কারা হিসাব জমা দেননি, তার তালিকা ও ৩০ এপ্রিলের মধ্যে কাদের বিরুদ্ধে মামলা করা হচ্ছে তার তালিকাও জমা দিতে রিটার্নিং কর্মকর্তাদের নির্দেশ দিয়েছে ইসি।
সূত্র মতে, সরকারি দলের একাধিক প্রভাবশালী নেতা ও মন্ত্রী ব্যয় বিবরণী জমা না দেওয়ার তালিকায় রয়েছেন। অন্যদিকে নির্বাচনী আইন অনুযায়ী নির্বাচনী ব্যয়ের হিসাব ইসির ওয়েবসাইটে প্রকাশের বাধ্যবাধকতা থাকা সত্ত্বেও তা দেরি করে প্রকাশ করায় ইসি সচিবালয়ের ওপর ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন নির্বাচন কমিশনার মোহাম্মদ আবদুল মোবারক। কেন দেরি হলো সংশ্লিষ্ট বিভাগকে দ্রুত এ বিষয়ে পদক্ষেপ নেওয়ারও নির্দেশ দিয়েছেন তিনি।
কমিশন তথ্যানুসারে র্নিদিষ্ট সময়ে হিসাব জমা দেওয়ার তালিকায় রয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি দশম সংসদ নির্বাচনে রংপুর-৬ ও গোপালগঞ্জ-৩ আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে প্রায় ১০ লাখ টাকা নির্বাচনী ব্যয় করেছেন।
ইসির সিনিয়র সহকারী সচিব মিজানুর রহমান স্বাক্ষরিত চিঠিতে বলা হয়েছে, আরপিওর ৪৪ এর সি ধারা অনুযায়ী নির্বাচিত ব্যক্তিদের নামে গেজেট প্রকাশের ৩০ দিনের মধ্যে প্রার্থী বা তার এজেন্ট নির্ধারিত ফরমে ব্যয়ের রিটার্ন জমা না দিয়ে থাকলে সে সব প্রার্থীদের বিরুদ্ধে মামলা করে দ্রুত কমিশনকে অবহিত করতে হবে। একইসঙ্গে যে সব প্রার্থী সঠিক সময়ে ব্যয়ের হিসাব দাখিল করেছেন তাদের সম্পূর্ণ তথ্য পাঠানোর নির্দেশ দিয়েছে ইসি।
ওই চিঠিতে নির্দিষ্ট সময়ে কতোজন এমপি তাদের ব্যয়ের রিটার্ন জমা দিয়েছেন, কারা দেননি এবং আইন অমান্য করায় কতোজনের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে তারও তথ্য চাওয়া হয়েছে। গেজেট প্রকাশের হিসাব অনুযায়ী, গত ৭ ফেব্র“য়ারি দশম সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণ করা প্রার্থীর নির্বাচনী ব্যয়ের রিটার্ন জমা দেওয়ার শেষ দিন ছিল। নির্বাচনের পরপরই সব প্রার্থীকে নোটিশ দিয়ে ব্যয়ের হিসাব জমা দিতে বলা হয়েছে।
এ বিষয়ে ইসি সচিবালয়ের উপ-সচিব মিহির সারওয়ার মোর্শেদ জানান, ৮ জানুয়ারি নির্বাচিতদের গেজেট প্রকাশ করায় ৭ ফেব্র“য়ারির মধ্যেই প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীদের ব্যয় রিটার্ন রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে ও ইসিতে এফিডেভিটের অনুলিপি জমা দেওয়ার বাধ্যবাধকতা ছিল।
তিনি জানান, নির্বাচনে জয়ী, পরাজিত ও বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিতদেরও হিসাব দেওয়ার বাধ্যবাধকতা ছিল। নির্ধারিত সময় এক মাসের মধ্যে ব্যয়ের হিসাব দাখিল করতে ব্যর্থ প্রার্থীদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে। গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ অনুযায়ী, এ সংক্রান্ত বিধান লঙ্ঘনে ২ থেকে ৭ বছরের কারাদণ্ড, জরিমানা বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হবেন সংশ্লিষ্টরা
এদিকে, দেশের ৪৪টি জেলার ৯৭টি ইউনিয়ন পরিষদের শূন্য ঘোষিত ৯৯টি চেয়ারম্যান, সংরক্ষিত মহিলা সদস্য ও সাধারণ সদস্য পদে উপনির্বাচন অনুষ্ঠানের সিদ্ধান্ত নিয়েছে নির্বাচন কমিশন(ইসি)। ইসির সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ওইসব ইউনিয়ন পরিষদের ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে ২৭ মে।
বৃহস্পতিবার নির্বাচন কমিশন (ইসি) সচিবালয় এ সংক্রান্ত একটি পরিপত্র জারি করেছে।ইসির সিনিয়র সহকারী সচিব মো. ফরহাদ হোসেন স্বাক্ষরিত একটি চিঠিতে সংশ্লিষ্ট জেলা নির্বাচন কর্মকর্তাকে এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিয়ে রিটার্নিং কর্মকর্তা নিয়োগ করে ইসিকে অবগত করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
এছাড়া চিঠিতে স্থানীয় সরকার (ইউনিয়ন পরিষদ) নির্বাচন বিধিমালা, ২০১০’ এর ৫ বিধি অনুযায়ী ইতোপূর্বে অনুষ্ঠিত ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন উপলক্ষে জারিকৃত পরিপত্রের নির্দেশনা অনুসরণ করতে বলা হয়।৪৬টি জেলার মোট ৯৭টি ইউনিয়নে এসব উপনির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। পদগুলোর মধ্যে ২২টি চেয়ারম্যান, ১৪টি সংরক্ষিত মহিলা সদস্য এবং ৬৩টি সাধারণ সদস্য পদ।