V Doctorদৈনিক বার্তা: বনানীর ১০ নং রোডের ২৫ নং বাড়ীর তিন তলায় স্টার কিউর মেডিকেল সেন্টারে র‌্যাব-১ এর অভিযানে বিদেশগামীদের স্বাস্থ্য পরীক্ষায় নানা অনিয়মের অভিযোগে মালিকসহ ৫ জনকে জেল জরিমানা (বিস্তারিত নিুের ছকে বর্ণিত) করা হয়। মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করেন র‌্যাবের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট এ এইচ এম আনোয়ার পাশা।
অভিযানের সময় উক্ত প্রতিষ্ঠানের নানা ধরণের অনিয়ম উদঘাটিত হয়।
১। যারা স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা হবে তাকে ছাড়াই তার রক্ত, মলমত্রসহ সকল পরীক্ষার রিপোর্ট ও ফিটনেস সার্টিফিকেট প্রদান করা হচ্ছিল। আল-আমিন, শরিঢফুল আলম, আহম্মেদ আলীর নামে তিনটি ফিটনেস সার্টিফিকেট তৈরীর সময় প্রতিষ্ঠানের ম্যানেজার মনিরুজ্জামানকে হাতে নাতে ধরা হয়। এই তিন ব্যক্তি হাজির না থাকলেও পরীক্ষা ছাড়াই ফিটনেস সার্টিফিকেট প্রদান করা হচ্ছিল।
২। ডাক্তারের সিলমেরে মনিরুজ্জামান নিজেই জাল সই করে ফিটনেস সার্টিফিকেট দেন। সার্বক্ষণিক ডাক্তার হাজির থাকার বিধান থাকলেও উক্ত প্রতিষ্ঠানে কোন ডাক্তার পাওয়া যায় নাই। মালিক আবুল বাশার স্বীকার করেন, ডাক্তার নাহিদ সপ্তাহে তিন দিন এক/দুই ঘন্টার জন্য আসেন। তখন উপস্থিত কিছু রোগী দেখেন। বাকি সময় ও বাকি দিন গুলোতে তিনি নিজেই এবং ম্যানেজার মনির রোগী দেখেন। কিছু কার্ড বাড়িতে পাঠিয়ে দিয়ে স্বাক্ষর করা হয় এবং বাকি গুলো মনির জাল সই করে দেয়।
৩। উক্ত প্রতিষ্ঠানের প্রদত্ত মেডিকেল ফিটনেস কার্ডে ৩৫ ধরণের পরীক্ষার ফলাফল দেয়া থাকলেও অধিকাংশ ক্ষত্রে ২/১ টি পরীক্ষা করা হয় বাকিগুলো অনুমানের উপর রিপোর্ট বানিয়ে দেন। মালিক বাশার স্বীকার করেন মেডিকেল করতে আসা ব্যক্তিদের মলমূত্রসহ সকল নমুনা সংগ্রহ করা হলেও তা গোপনে ফেলে দেয়া হয়।
৪। ফিটনেস কার্ডে চক্ষু, শ্রবণক্ষমতা, হৃদযন্ত্র, মল, মূত্র, রক্ত, ইসিজি, এক্স-রে বিষয়ে মোট ৩৫টি টেস্ট এর রিপোর্ট দেয়া হয়। মালিক বাশার জানান রিক্রটিং এজেন্সীগুলো মেডিকেল করাতে বিদেশগামী লোকদের কাছ থেকে ২/৩ হাজার টাকা নিয়ে তাদের কাছে পাঠায়। কিন্তু এ টাকার একটা সামান্য অংশ তাদের দেয়া হয় মাত্র আড়াইশ থেকে চারশত টাকা তাদের দেয়া হয়। টাকার পরিমানের উপর নির্ভর করে দু চারটা টেস্ট করা হলেও অধিকাংশ টেস্ট কখনই করা হয় না। যেমন রোগীর মলমূত্র, চক্ষ, শ্রবণক্ষমতা, এইডস এগুলো মালিক ও ম্যানেজার চোখে দেখেই বুঝতে পারেন বলে দাবী করেন। মেডিকেল পরীক্ষার পুরো টাকা তাদের হাতে পৌছে না বলে সব পরীক্ষা তারা করতে পারে না বলে অসহায়ত্বের কথা জানান।
৫। একটি পুরোনো এক্স-রে মেশিনে ম্যানেজার নিজেই এক্স-রে করার কাজ করেন। আনবিক শক্তি কমিশনের ছাড়পত্র ছাড়া পুরোনো মেশিনে অদক্ষ ব্যক্তি দ্বারা ঝুকিপূর্ণভাবে এক্স-রে করার কাজ চলছিল।
৬। শরীর থেকে রক্ত সংগ্রহের কাজ করেন রুনা খানম। মাহফুজা ইসলাম রেনু দালালের কাজ করেন এবং ম্যানেজারের মাধ্যমে ভূয়া হেলথ কার্ড তৈরী করেন। মালিক ও ম্যানেজারসহ এই চারজনের কারোরই মেডিকেল বিষয়ে শিক্ষাগত যোগ্যতা না থাকলেও মালিক বাশার দাবী করেন তিনি তিন বৎসর যাবৎ মেডিকেল বিষয়ে ব্যবসা করে এসব শিখে গেছেন। তাই ডাক্তার না থাকলেও তিনিই চালিয়ে নিচ্ছেন। ম্যানেজারকে এপ্রোন পরিয়ে রাখেন যাতে মনে হবে ডাক্তার রয়েছে।
৭। রাজধানীর বনানী, পল্টন, ফকিরাপুল প্রভৃতি এলাকায় এধরণের কিছু অসাধু প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেছে তাদের অসাধু, অপতৎপরতায় এদেশের মেডিকেল রিপোর্টের বিষয়ে বিদেশে আমাদের সুনাম নষ্ট হচ্ছে। মেডিকেল ফিটনেস সার্টিফিকেট নিয়ে বিদেশে যেয়ে আনফিট প্রমাণিত হয়ে ফেরৎ এসে সর্বশান্ত হয়েছে এধরণের অনেক নজির রয়েছে। ধামরাই এর আমির উদ্দিন অভিযোগ জানান যে, তিনি সাড়ে ছয় লক্ষ টাকা খরচ করে সিংগাপুরে যান। যাওয়ার আগে অপর একটি প্রতিষ্ঠান থেকে মেডিকেল ফিটনেস কার্ড সংগ্রহ করেন। সিংগাপুরের কর্তৃপক্ষ রিপোর্টের বিষয়ে সন্দেহ প্রকাশ করে পৌছানোর পরদিন পুনরায় পরীক্ষা করে দেখেন যে, তার ফুসফুসে পানি রয়েছে(যা দীর্ঘদিনের সমস্যা ছিল)। ফলে তাৎক্ষনিকভাবে তাকে দেশে ফেরৎ পাঠানো হয়। দেশে ফিরে সাড়ে ছয় লক্ষ টাকা দেনা পরিশোধ করতে না পেরে তিনি পালিয়ে বেড়াচ্ছেন বলে অভিযোগ করেন।
র‌্যাব-১ এর অভিযান পরিচালনা করেন এএসপি আজমিলা নাছরিন চৌধুরী। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের প্রতিনিধি ডাঃ যোগেশ চন্দ্র রায় উপস্থিত ছিলেন।

দন্ডপ্রাপ্ত ব্যক্তিদের বিস্তারিত বিবরণ ঃ
ক্রমিক     আসামীর নাম ও ঠিকানা।    দন্ড
১।    মোঃ আবুল বাশার(৩০), পিতা-মৃত আব্দুস সাত্তার, সাং-হস্তিশুন্ড, থানা-উজিরপুর, জেলা-বরিশাল।    ০৬(ছয়) মাস কারাদন্ড এবং দুই লক্ষ পাঁচ হাজার টাকা জরিমানা, অনাদায়ে আরো তিন মাসের কারাদন্ড।
২।    মোঃ মনিরুজ্জামান(৩২), পিতা-মোঃ আব্দুল হক, সাং-পিলজংগ থানা-ফকিরহাট, জেলা-বাগেরহাট।    ০৬(ছয়) মাস কারাদন্ড এবং দুই লক্ষ টাকা জরিমানা, অনাদায়ে আরো তিন মাসের কারাদন্ড।
৩।    মাহফুজা ইসলাম রেণু(৩০), স্বামী-মোঃ আমির হোসেন, সাং-দেয়াড়া, থানা-রূপসা, জেলা-খুলনা।    এক লক্ষ টাকা জরিমানা, অনাদায়ে তিন মাস কারাদন্ড।
৪।    মোছাঃ রুনা খানম(১৮), পিতা-মোঃ কাইয়ুম মোল্যা, সাং-গাড়লগাতী, থানা-মোকছেদপুর, জেলা-গোপালগঞ্জ।    পঞ্চাশ হাজার টাকা জরিমানা, অনাদায়ে দুই মাস কারাদন্ড।
৫।    বিবি খাদিজা(২৪), পিতা-গোলাম মাওলা, সাং-আব্দুল্লাহপুর, থানা-বেগমগঞ্জ, জেলা-নোয়াখালী।সর্ব বর্তমান ঠিকানা- ষ্টার কিউর মেডিকেল সেন্টার, বাসা-২৫, রোড-১০, ব্লক-ই, বনানী, ঢাকা।    পঞ্চাশ হাজার টাকা জরিমানা, অনাদায়ে দুই মাস কারাদন্ড।

বিষয় ২ ঃ ২৩/৪/২০১৪ তারিখ রাতে রাজধানীর কলাবাগানে দুইজন ভূয়া মহিলা দন্ত চিকিৎসকের কারাদন্ড। চেম্বার সিলগালা।
V Doctor 1
এছাড়া ২৩/৪/২০১৪ তারিখ রাতে র‌্যাব-২ এর অভিযানে ১৯ নং কাঁঠালবাগান, নাসির কমপ্লেক্সের নিচতলায় স্থাপিত হ্যাভেন ডেন্টাল কেয়ার থেকে ডাঃ শিউলী আক্তার(৩৫) এবং কান্তা সরকার(২৭) নামে দুজন ভূয়া দন্ত চিকিৎসককে দাঁতের চিকিৎসা প্রদানের সময় হাতে নাতে ধৃত করে যথাক্রমে এক বছর এবং ছয় মাসের কারাদন্ড দিয়েছে র‌্যাবের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট এ এইচ এম আনোয়ার পাশা।
অভিযানের সময় কালাম নামে একজন রোগী চিকিৎসা নিচ্ছিলেন। কালাম গত ২৫/৩/২০১৪ তারিখ থেকে তার কাছে দাঁত ব্যাথার চিকিৎসা নিচ্ছেন। সুস্থ্য না হওয়ায় তিনি আজকে আবারও তার কাছেই চিকিৎসা নিতে এসেছেন। কালামের কাছে ভূয়া ডাক্তার শিউলির লিখা একটি পেসক্রিপশন পাওয়া গেছে। সেখানে তিনি বিভিন্ন এলোপ্যাথি ঔষধ লিখেছেন। কান্তা রোগীদের স্কেলিং ও ফিলিং এর কাজ করেন এবং মাঝে মাঝে প্রেসক্রিপশনও প্রদান করেন বলে স্বীকার করেন। বাংলাদেশ মেডিকেল এন্ড ডেন্টাল কাউন্সিল এক্ট, ২০১০ অনুযায়ী নুন্যতম বি ডি এস (বেচেলর অফ ডেন্টাল এন্ড সার্জারী) ডিগ্রী না থাকলে দাঁতের চিকিৎসা করতে পারে না বা এলোপ্যাথি ঔষধের ব্যবস্থাপত্র লিখতে পারেন না।
ভূয়া ডাক্তার শিউলী জানান তিনি মাধ্যমিক পর্যন্ত পড়াশুনা করেছেন। একজন দন্ত চিকিৎসকের সাহায্যকারী হিসেবে কিছুদিন কাজ করার সময় এ বিষয়ে ধারণা হয়। এরপর দু’বছর যাবৎ তিনি নিজেই ডাক্তারী শুরু করেন। কাঠালবাগানে একটি চেম্বার ভাড়া নিয়ে ডাক্তার হয়ে যান। ‘ডাক্তার শিউলী আক্তার ডি ডি এস, বি ডি এ’ নামে ভিজিটিং কার্ড ও প্রেসক্রিপশন ছাপিয়ে রোগী দেখা শুরু করেন। কান্তা সরকার তার সাথে থেকে ডাক্তার হয়ে যান। তাদের ভিজিট ছিল ২০০ টাকা তবে দাঁতের কাজ করালে ভিজিট নেয়া হয়না মর্মে দেয়ালে নোটিশ ঝুলানো রয়েছে। তাদের দন্ত চিকিৎসার কোন রকম প্রাতিষ্ঠানিক কোন ডিগ্রী ছিল না। র‌্যাব-২ এর অভিযান পরিচালনা করেন এএসপি মোঃ কামরুল ইসলাম। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের প্রতিনিধি ডাঃ স্বপন কুমার তপাদার উপস্থিত ছিলেন।
দন্ডপ্রাপ্ত ব্যক্তিদের বিস্তারিত বিবরণ ঃ
ক্রমিক নং    আসামীর নাম ও ঠিকানা।    দন্ড
১।    শিউলী আক্তার, স্বামী-মোঃ তাহসিন উদ্দীন আকন, বাসা-৫৭ কাঁঠালবাগান, ফ্রি স্কুল স্টীস্ট, থানা-কলাবাগান, জেলা-ঢাকা।    ০১(এক) বছর কারাদন্ড এবং এক লক্ষ টাকা জরিমানা, অনাদায়ে আরো তিন মাসের কারাদন্ড।
২।    কান্তা সরকার(২৫), পিতা-পরেশ সরকার, বাসা-১২৯ আছিয়া খাতুন ভিলা, পূর্ব রাজা বাজার, থানা-তেজগাঁও, জেলা-ঢাকা।    ০৬(ছয়) মাস কারাদন্ড এবং এক লক্ষ টাকা জরিমানা, অনাদায়ে আরো তিন মাসের কারাদন্ড।

র‌্যাবের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট এ এইচ এম আনোয়ার পাশা।