দৈনিক বার্তা: বিএনপির নেতা সাজিদুল ইসলাম সুমনসহ নিখোঁজ ব্যক্তিদের সন্ধান দিতে সরকার ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর প্রতি দাবি জানিয়ে আইন ও সালিশ কেন্দ্রের নির্বাহী পরিচালক সুলতানা কামাল বলেছেন, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী কোনো দলের নয়, কোনো পক্ষেরও নয়। দলমত-নির্বিশেষে যারাই নিখোঁজ হন না কেন, তাদের খুঁজে দেয়ার দায়িত্ব আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর।তিনি বলেন, বিচারহীনতার পথ ধরে দেশের উন্নয়ন অগ্রগতি সম্ভব নয়। গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র হলে নাগরিকদের কথা শুনতে হবে।
বৃহস্পতিবার বেলা ১১টায় জাতীয় প্রেসক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলনে সুলতানা কামাল এ কথা বলেন। সাজিদুল ইসলাম সুমন রাজধানীর তেজগাঁও থানার শাহীনবাগের বাসিন্দা ও ৩৮ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির সাধারণ সম্পাদক। নিখোঁজ ব্যক্তিদের পরিবার সংবাদ সম্মেলনটির আয়োজন করে।
বিএনপির নেতা সাজিদুল ইসলাম সুমনসহ নিখোঁজ ব্যক্তিদের সন্ধান দিতে সরকার ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর প্রতি দাবি জানিয়েছেন আইন ও সালিশ কেন্দ্রের নির্বাহী পরিচালক সুলতানা কামাল।
আইন ও সালিশ কেন্দ্রের নির্বাহী পরিচালক বলেন, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী যদি তাদের দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ হয়, তাহলে এ জন্য তাদের জবাবদিহি করতে হবে। তিনি বলেন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী দায়িত্ব পালন না করে পার পেয়ে যায় বলে দায়িত্বের প্রতি তারা শ্রদ্ধাশীলও হয় না।
এই আইনজীবী বলেন, যদি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পরিচয়ে কেউ কাউকে তুলে নিয়ে যায়, তাহলে তাদের খুঁজে বের করা এবং কারা তুলে নিয়ে গেল, তাদেরও আইনের মুখোমুখি করাই আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর দায়িত্ব।পুলিশের উদ্দেশে তিনি বলেন, দেশের নাগরিকদের দেয়া টাকায় পুলিশের বেতন ভাতা হয়, তাই পুলিশ প্রশাসনকে দেশের নাগরিকদের কথা চিন্তা করতে হবে। কোনো নাগরিক গুম হয়েছে এ ধরনের কথা যাতে আর শুনতে না হয়।
সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত আইনজীবী শাহদীন মালিক বলেন, সংবিধান ও আইনে বলা আছে, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী যদি কাউকে গ্রেপ্তার করে, তবে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে তাকে আদালতে সোপর্দ করতে হবে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর প্রতি আমার অনুরোধ, তারা যেন আইনের প্রতি ন্যূনতম শ্রদ্ধা রাখে এবং তা পালন করে।
তিনি আরও বলেন, যদি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পরিচয়ে কেউ কাউকে তুলে নিয়ে যায়, তাহলে তাদের খুঁজে বের করা এবং কারা তুলে নিয়ে গেল, তাদেরও আইনের মুখোমুখি করাই আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর দায়িত্ব।
গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা জাফরউল্লাহ চৌধুরী বলেন, এ ধরনের নিখোঁজ হওয়ার যে ঘটনা, এগুলোকে প্রতিহত করতে জনগণকেও প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে। বিচারপতিদের এ ক্ষেত্রে সাহসী ভূমিকা পালন করতে হবে।
পুলিশের উদ্দেশে তিনি বলেন, এমন কর্মকাণ্ড চলতে থাকলে আপনাদেরকে একদিন বিচারের সম্মুখীন হতে হবে। তিনি আরো বলেন, আমার জানামতে র্যাবের ক্রসফায়ারের মাধ্যমে যেসব হত্যাকাণ্ড ঘটছে তার কোনো বিচার হয়নি।
গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেন, পাড়ায় পাড়ায় প্রতিরোধ সেল গড়ে তুলতে হবে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী পরিচয়ে যদি কেউ কোনো নাগরিককে তুলে আনতে যায়, তাহলে ঘণ্টা বাজিয়ে সমস্ত পাড়া বা মহল্লার লোকজন এক হয়ে তাদের ছবি তুলে রাখতে হবে। তাহলে গুম রোধ করা সম্ভব হবে।
সংবাদ সম্মেলনে নিখোঁজ ব্যক্তিদের অবিলম্বে ফিরিয়ে দেওয়ার দাবি জানিয়েছেন তাঁদের পরিবারের সদস্যরা।গত বছরের ৪ ডিসেম্বর পৃথক সময়ে প্রশাসনের লোক পরিচয় দিয়ে সাজিদুলসহ আটজনকে তুলে নিয়ে যাওয়া হয়। বাকি সাতজন হলেন শাহীনবাগের বাসিন্দা কাওসার আহমেদ, পূর্ব নাখালপাড়ার আবদুল কাদের ভূঁইয়া মাসুম, পশ্চিম নাখালপাড়ার মাজহারুল ইসলাম রাসেল, মুগদা এলাকার আসাদুজ্জামান, উত্তর বাড্ডার আল আমীন, শাহীনবাগের এ এম আদনান চৌধুরী ও সাজিদুলের খালাতো ভাই বসুন্ধরা আবাসিক এলাকার বাসিন্দা জাহিদুল করিম তানভীর।
নিখোঁজ ব্যক্তিদের পরিবারের অভিযোগ, র্যাব পরিচয়ে তাঁদের তুলে নেওয়া হলেও র্যাবের পক্ষ থেকে তা অস্বীকার করা হয়েছে। কিন্তু বারবার র্যাব ও বিভিন্ন থানায় যোগাযোগ করেও নিখোঁজ ব্যক্তিদের এখনো কোনো সন্ধান মেলেনি।সংবাদ সম্মেলনে গুমের শিকারদের পরিবারের সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।