5দৈনিক বার্তা:ধ্বসোন্মুখ ভবনে ডেকে নিয়ে গিয়ে শ্রমিক গণহত্যার এক বছর আজ। হাজারো শ্রমিকের মৃত্যু এবং হাজারো শ্রমিকের স্বপ্ন খুনের এক বছরকে স্মরণ করে আজ সকাল ৮:৪৫ মিনিটে বাংলাদেশ গার্মেন্ট শ্রমিক সংহতির উদ্যোগে কাফনের সাদা কাপড় পড়ে ও ফুল হাতে প্রতিবাদী মিছিল অনুষ্ঠিত হয়। প্রতিবাদী মিছিলটি সাভার বাসস্ট্যান্ড অঞ্চল প্রদক্ষিণ করে রানা প্লাজার ধ্বংসস্তুপের সামনে শেষ হয় এবং সেখানে নিহতদের স্মরণ করে শহীদ বেদীতে সকলের হাতের ফুল ও শ্রদ্ধাঞ্জলি অর্পণ করা হয়। শ্রদ্ধাঞ্জলি অর্পণ শেষে একটি বিক্ষোভ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। বাংলাদেশ গার্মেন্ট শ্রমিক সংহতির সমন্বয়ক তাসলিমা আখ্তারের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এই সমাবেশে ক্ষতিগ্রস্ত শ্রমিক পরিবারের সদস্য, আহত শ্রমিক, উদ্ধারকর্মীসহ সংগঠনের বিভিন্ন স্তরের নেতৃত্ব বক্তব্য রাখেন। সমাবেশে উপস্থিত ছিলেন সংগঠনের কেন্দ্রীয় সদস্য সচিব জুলহাসনাইন বাবু; কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য হারুনুর রশীদ মাহমুদ, দীপক রায়, আমিনুল ইসলাম শামা, মাহবুব ইরান প্রমুখ।
সমাবেশে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের সদস্য ও আহত শ্রমিকরা বলেন, স্বজনদের হারিয়ে আজকে তারা মরার মত বেঁচে আছেন। এতদিন যাবৎ নিখোঁজ তালিকা প্রকাশ ও সকল ক্ষতিগ্রস্তদের ক্ষতিপূরণ প্রদানসহ বিভিন্ন দাবি বারে বারে জানিয়ে এসেছেন, দ্বারে দ্বারে ঘুরে হয়রান হয়েছেন অথচ সরকার ও মালিকপক্ষ কোন পাত্তাই দেয়নি। তাদের কাছে আমরা মরা মানুষ, যাদের কোন জীবন নাই, ভবিষ্যৎ নাই, স্বপ্ন নাই। তাই আমরা আজ মরার কাফন গায়ে দিয়ে প্রতিবাদ করেছি।   4
উদ্ধারকর্মীরা ও স্বেচ্ছাসেবকরা সে সময়কার অভিজ্ঞতা ও স্মৃতিচারণ করে তৎপরবর্তীতে তাদের দুঃসহনীয় মানসিক যন্ত্রণার কথা উল্লেখ করেন এবং বলেন সরকার তখনও যেমন যথাযথ উদ্যোগ নেয়নি, গত এক বছর ধরেও তারা ন্যাক্কারজনক ও অমার্জনীয় ঔদাসীন্য দেখিয়েছেন।
নেতৃবৃন্দ বলেন, মালিক ও সরকার ২৪ এপ্রিলের ঘটনা মুছে দিতে চায়। দেশীয় মালিকরা কেবল ১৪ কোটি টাকা খরচ করে তাদের দায় শেষ করেছেন, সরকার এখন পর্যন্ত ক্ষতিগ্রস্তদের একটি সম্পূর্ণ তালিকা প্রকাশ করতে পারেনি, তাদের হয়রানি দুর করতে পারেনি, একবছরেও দোষীদের বিরুদ্ধে চার্জশীট দিতে পারেনি, সর্বোপরি শ্রমিক স্বার্থে কোন কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করতে পারেনি অথচ গত একবছরেই শ্রমিকদের অবাধ ট্রেড ইউনিয়নের দাবি উপেক্ষা করে অগণতান্ত্রিক শ্রম আইন প্রণয়ন করেছে, ন্যূনতম ৮০০০ টাকা মজুরীর জোরালো ও বাস্তবসম্মত দাবির বিপরীতে সর্বনি¤œ মূল মজুরী ৩০০০ টাকা করেছে। নেতৃবৃন্দ বলেন, গার্মেন্ট খাতে সকল কাঠামোগত হত্যাকা- বন্ধ করতে হবে। এ শিল্পে সকল ষড়যন্ত্র ও নৈরাজ্যের দায় মালিকপক্ষ ও রাষ্ট্রকেই নিতে হবে কেননা স্পেকট্রাম থেকে রানা প্লাজায় সৃষ্ট পরিস্থিতি মোটকথা জাতীয় অর্থনীতির যে  বেহাল দশা ও কারখানাগুলোতে বিদ্যমান নিরাপত্তাহীনতা, মজুরী বৈষম্য শ্রমিকদের ওপর চেপে আছে তা তাদেরই অবদান। নেতৃবৃন্দ বলেন, গত ২৪ মার্চ ২০১৪ তারিখে রানা প্লাজার সামনে অনুষ্ঠিত সমাবেশ থেকে বাংলাদেশ গার্মেন্ট শ্রমিক সংহতি প্রতিবছর ২৪ এপ্রিল সকল কারখানায় ছুটি ঘোষণার দাবি জানিয়েছে। ২৯ মার্চ সংবাদ সম্মেলন করে এবং ৩ এপ্রিল শ্রম প্রতিমন্ত্রীর সাথে সাক্ষাৎ করে একই দাবি জানানো হয়েছে। এর পর অন্যান্য শ্রমিক সংগঠনও ছুটি ঘোষণার দাবি জানিয়েছে। আজ কারখানায় শ্রমিকদের জোর করে কাজ করানো হচ্ছে। বরং সরকার সব ভুলিয়ে দিয়ে রানা প্লাজার মতো বিপর্যয়কে স্বাগত জানাচ্ছে।
নেতৃবৃন্দ আরো বলেন , ইতিপূর্বে ৭দফা দাবিতে শ্রমমন্ত্রণালয়ে স্মারকলিপি প্রদানসহ আমরা আন্দোলন অব্যাহত রেখেছি। সোহেল রানা একটি মামলায় জামিনও পেয়েছে। এ জামিন বাতিল করতে হবে এবং আমাদের আন্দোলন অব্যাহত থাকবে। আমাদের ৭ দফা হলো :

১.    ২৪ এপ্রিলকে শ্রমিক নিরাপত্তা ও শোক দিবস হিসেবে ঘোষণা করে সকল কারখানায় ঐদিন ছুটি ঘোষণা দিতে হবে।
২.    সকল তালিকার অসঙ্গতি দূর করতে হবে। প্রকৃত তালিকা সকলের কাছে পৌছে দিতে হবে। সকল কারখানা শ্রমিকদের পূর্ণাঙ্গ তথ্যসহ তালিকা শ্রমমন্ত্রণালয়ে থাকতে হবে। প্রতিনিয়ত তা হালনাগাদ করতে হবে।
৩.    অবিলম্বে সকল ক্ষতিগ্রস্ত আহত-নিহত-নিখোঁজদের ক্ষতিপূরণ দিতে হবে। শারিরীক ও মানসিকভাবে অসুস্থ পঙ্গুদের ক্ষতিপূরণ প্রদানসহ চিকিৎসার দায়ভার মালিক-সরকার এবং বিদেশি বায়ারদের গ্রহণ করতে হবে।
৪.    ডিএনএ শনাক্তকারীদের কবর বুঝিয়ে দিতে হবে। রানা প্লাজায় ধ্বংসাবশেষে পাওয়া সকল হাড়-কঙ্কালের ডিএনএ পরীক্ষা বরতে হবে এবং দ্রুত ডিএনএ রিপোর্ট দিতে হবে।
৫.    সকল নিখোঁজদের প্রয়োজনীয় তথ্যের ভিত্তিতে নিহত ঘোষণা করতে হবে এবং নিখোঁজদের সন্ধানে ডিএনএ পরীক্ষাই একমাত্র পদ্ধতি হিসাবে ধরা যাবে না।
৬.    সোহেল রানার জামিন বাতিলসহ সকল দোষীদের জামিন প্রদানের বদলে দ্রুত যথাযথ শাস্তি প্রদান করতে হবে।
৭.    জমি বা অনুদান প্রদানের নামে যারা ক্ষতিগ্রস্ত শ্রমিকদের নানাভাবে প্রতারিত করছে তাদেও বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নিতে হবে।

সমাবেশ থেকে আগামীকাল ২৫ এপ্রিল ২০১৪, শুক্রবার, বিকাল ৪টায় ঢাকায় জাতীয় জাদুঘরের সামনে সর্বস্তরের সংহতি সমাবেশ এবং প্রতিবাদী গান ও নাটকের কর্মসূচীতে সকলকে অংশগ্রহণ করার আহবান জানানো হয়।