মোস্তাফিজুর রহমান টিটু/দৈনিক বার্তা: অজ্ঞাত কোনো রোগে নয়, বরং প্রয়োজনের তুলনায় সাত গুণ বেশি ছত্রাকনাশক ব্যবহারের মূল কারণেই বোরো ধানের ৮০ ভাগ শীষ নষ্ট হয়েছে। বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইন্সটিটিউট’র (ব্রি) বিজ্ঞানীরা এমনটাই দাবী করেছেন। এ ধরনের সমস্যা প্রতিরোধের জন্য বিজ্ঞানীরা সংশ্লিষ্টদের সঠিক মাত্রায় সার, কীটনাশক ও ছত্রাকনাশক প্রয়োগ করার পরামর্শ দিয়েছেন।
সম্প্রতি সংবাদ মাধ্যমে চাঁদপুরের ফরিদগঞ্জে ‘অজ্ঞাত রোগে পুড়ে যাচ্ছে বোরো ধান’ শীর্ষক সংবাদের প্রেক্ষিতে বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইন্সটিটিউট’র (ব্রি) বিজ্ঞানীরা সরেজমিন প্রতিবেদন দাখিল করেন। প্রতিবেদনে জমিতে আবাদকৃত বোরো ধান নষ্ট হওয়ার কারণ চিহ্নিত করে সেগুলো প্রতিরোধের পদ্ধতি উল্লেখ করে সংশ্লিষ্টদের পরামর্শ দেয়া হয়েছে।
ব্রি’র বিজ্ঞানীদের সরেজমিন প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, চাঁদপুর জেলার ফরিদগঞ্জের ওই এলাকায় একজন চাষির দুই একর জমিতে আবাদ করা ব্রি ধান২৮ এর শতকরা ৮০ ভাগ ধানের শিষ চিটায় পরিণত হয়েছে। ধান গাছের পাতা ঝলসে গেছে। ধানের প্রতি গোছায় গড়ে ৪০-৫০টি কুশি ছিল। ধানে কাইচথোড় অবস্থায় ইঁদুরের আক্রমণ রোধ করার জন্য সাউন্ড প্রডিউসিং ডিভাইস স্থাপন করা হয়েছিল। উক্ত জমিতে ধান রোপণের আগে মাছ চাষ করা হয়েছিল এবং সে সময় পর্যাপ্ত পরিমাণ খৈল ও মাছের খাদ্য ব্যবহার করা হয়েছিল। রোপণের সময় একরে ২৫ কেজি এমওপি ছাড়া অন্য কোন সার ব্যবহার করা হয়নি। মাজরা পোকা দমনের জন্য দু’ বার ভির্তাকো ব্যবহার করা হয়েছিল।
বিজ্ঞানীদের পর্যবেক্ষণ থেকে আরো জানা যায়, ওই জমিতে শতকরা ৫০-৬০ ভাগ ফুল বের হওয়ার সময় রোগের আক্রমণ না থাকা সত্ত্বেও বিভিন্ন ওষুধ কোম্পানির বিক্রয় প্রতিনিধির পরামর্শ অনুযায়ী কনজা ৫ ইসি (হেক্সাকোনাজল) ও একমকোজিম ৫০ ডব্লিউপি (কারবেনেডাজিম) নামের ছত্রাকনাশক দুটির প্রথমটির ৫০০ মিলি ও দ্বিতীয়টির ৫০০ গ্রাম দুই লিটার পানিতে মিশিয়ে দ্রবণ তৈরি করে ২৫০ মিলি দ্রবণ ১৬ লিটার ধারণ ক্ষমতা সম্পন্ন স্প্রেয়ার মেশিনে ১৫ লিটার পানিতে মিশিয়ে পুরো দুই একর জমিতে মোট ১০ স্প্রে মেশিন প্রয়োগ করা হয়েছিল। প্রতি স্প্রে মেশিনে ৫০ মিলি কনজা ও ৫০ গ্রাম এমকোজিম একই সঙ্গে মিশিয়ে স্প্রে করা হয় যা অনুমোদিত মাত্রার (১৫ মিলি কনজা অথবা ১৫ মিলি এমকোজিম) তুলনায় প্রায় সাত গুণ বেশি হারে প্রয়োগ করা হয়েছিল।
এ বিষয়ে ব্রি’র বিজ্ঞানীদের মতামত হচ্ছে, ছত্রাকনাশকগুলো জমিতে প্রয়োগ করার সময় রোগের তেমন আক্রমণ ছিল না। অগ্রীম ব্যবস্থা হিসেবে অতিরিক্ত মাত্রায় (প্রায় সাত গুণ) দু’টি ভিন্ন গ্রুপের ছত্রাকনাশক একসঙ্গে মিশ্রিত করে জমিতে ঠিক ফুল আসার সময় সকাল ১০টায় প্রয়োগ করা হয়েছিল যার মাত্রাতিরিক্ত বিষক্রিয়ায় ধানের ফুলের পুং ও স্ত্রী অংশগুলো বন্ধ্যা হওয়ার কারণে পরাগায়ন না হয়ে পুরো শিষ চিটায় পরিণত হয়। এমনকি উপরের পাতাগুলো ঝলসে যায়। এর কোনো প্রতিকার না থাকলেও প্রতিরোধের জন্য প্রয়োজন ধানের জমিতে সঠিক মাত্রায় অনুমোদিত হারে সার, কীটনাশক ও ছত্রাকনাশক প্রয়োগ করা। বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইন্সটিটিউট’র (ব্রি) প্রকাশনা ও জনসংযোগ বিভাগের সম্পাদক ও প্রধান এম এ কাসেম স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে।