দৈনিক বার্তা: অর্থনৈতিক উন্নয়নে বাংলাদেশ এখন বিশ্বের সামনে রোল মডেল হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। পরিকল্পিত উন্নয়নের মাধ্যমে দক্ষিণ এশিয়ায় শান্তির জনপদে পরিণত করা হবে এদেশকে উল্লেখ করে এক্ষেত্রে সকলকে একসঙ্গে কাজ করার আহ্বান জানান তিনি।
বুধবার রাজধানীর কাকরাইলে ইনস্টিটিউশন অব ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স, বাংলাদেশ (আইডিইবি)’র ২০তম জাতীয় সম্মেলন ও ৩৮তম কাউন্সিল অধিবেশনের উদ্বোধন অনুষ্ঠানে শেখ হাসিনা প্রধান অতিথির ভাষণে এ কথা বলেন।উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন আইডিইবি’র সভাপতি একেএমএ হামিদ। আইডিইবি’র সাধারণ সম্পাদক শামসুল আলম ‘আমাদের কথা’ শিরোনামে সাধারণ সম্পাদকের রিপোর্ট উপ¯’াপন করেন।
রাষ্ট্র পরিচালনায় দক্ষতা আছে বলেই বিএনপি-জামাতের তাণ্ডব সত্ত্বেও দেশের উন্নয়নের গতিধারা আওয়ামী লীগ সরকার অব্যাহত রেখেছে বলে জানান শেখ হাসিনা।পরনির্ভরশীলতা ভুলে বাংলাদেশ নিজের পায়ে দাঁড়িয়েছে এ মন্তব্য করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সুষ্ঠু পরিকল্পনার মাধ্যমে সীমিত সম্পদ দিয়ে দেশকে কাঙ্খিত উন্নয়নের পথে এগিয়ে নেয়া সম্ভব।
এ সময় শিক্ষা ও অর্থনীতিসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে তার সরকারের উন্নয়নমূলক কাজের কথা তুলে ধরে তিনি আরো বলেন, আওয়ামীল লীগ সরকার দেশের বিপর্যস্ত অর্থনীতিকে শক্তিশালী অবকাঠামোতে দাঁড় করিয়েছে।সুষ্ঠু পরিকল্পনার মাধ্যমে সীমিত সম্পদ দিয়ে দেশকে কাঙ্খিত উন্নয়নের পথে এগিয়ে নেয়া সম্ভব বলেও এ সময় দাবি করেন তিনি।
তিনি বলেন, হরতাল অবরোধের নামে বিএনপি-জামাত দেশে সহিংসতা চালিয়েছে। আর তাদের তাণ্ডবলীলা সরকার শক্ত হাতে প্রতিহত করতে সক্ষম হওয়ায় দেশের অগ্রযাত্রা থেমে যায়নি।
২০৪০ সালের মধ্যে বাংলাদেশ বিশ্বের বুকে আরো উন্নত দেশ হিসেবে মাথা উঁচু করে দাঁড়াবে বলেও মনে করেন তিনি। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, পরবর্তী প্রজন্মের ভবিষ্যৎ আত্ম-কর্মসংস্থানের জন্য ৬ষ্ঠ শ্রেণী থেকে ছেলেমেয়েদের অন্তত একটি বিষয়ে ভোকেশনাল ট্রেনিং প্রদান করা হবে। এ ব্যাপারে নীতিগত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়েছে।
তিনি বলেন, ছেলেমেয়েদের এমনভাবে ট্রেনিংটি দেয়া হবে, যাতে কর্মক্ষেত্রে গিয়ে তারা নিজেরাই কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করতে পারে।তিনি আরো বলেন, সরকার দেশে বৃত্তিমূলক শিক্ষা প্রসারিত করতে প্রতিটি উপজেলায় একটি করে কারিগরি স্কুল স্থাপনের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে।
শেখ হাসিনা একটি আত্মনির্ভরশীল দেশ গড়তে সকলের সমর্থন চেয়ে বলেন, ২০১৩ সালের জানুয়ারি থেকে দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনকালীন বিএনপি-জামায়াতের মানুষ হত্যা ও জ্বালাও-পোড়াওসহ ধ্বংসাত্মক কার্যকলাপে অনেক মানুষ মনে করেছিল দেশের অর্থনীতি ভেঙ্গে পড়বে।তিনি বলেন, ‘কিন্তু আমরা বিএনপি-জামায়াতের নৈরাজ্যের মোকাবেলা করেছি এবং দেশকে সঠিক পথে এগিয়ে নিয়ে যেতেও কাজ করেছি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, অনেকে আবার আমাদের অগ্রগতি পছন্দ করেন না। তারা জাতিকে পরনির্ভর করে রাখতে চান। কিন্তু আমরা অরাজকতা ও সহিংসতা মুক্ত একটি সমৃদ্ধ ও শান্তিপূর্ণ জাতি গঠন করতে চাই।তিনি বলেন, দেশের দ্রুত উন্নয়নের জন্য তাঁর সরকার জনগণের মৌলিক চাহিদা পূরণ করার উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। একটি সরকার সঠিক পরিকল্পনার সঙ্গে আন্তরিকভাবে কাজ করলে দেশের উন্নয়ন সম্ভব বলেও তিনি উল্লেখ করেন।
অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে আইডিইবি’র সদস্য পদ প্রদান করা হয়। তাঁর হাতে সদস্য পদের সনদপত্র তুলে দেন আইডিইবি’র সভাপতি একেএমএ হামিদ।প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আইডিইবি’র সদস্যপদ গ্রহণ করে সংগঠনের নেতৃবৃন্দকে কৃতজ্ঞতা জানিয়ে বলেন, জাতির পিতার কন্যা হিসেবে আজ আমাকে আপনাদের প্রতিষ্ঠানের সম্মানি সদস্যপদ অর্পণ করে কৃতজ্ঞতার বন্ধনে আবদ্ধ করেছেন। ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার, মূলত যারা দেশের সকল উন্নয়ন কমর্কান্ডের মূল চালিকা শক্তি তাদের পরিবারের একজন গর্বিত সদস্য হতে পেরে আমি আনন্দিত। এ সম্মানের জন্য আপনাদের জানাচ্ছি আন্তরিক ধন্যবাদ।
তিনি বলেন, কিন্তু আমি ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের কিছুই বুঝি না। তবে আমার সন্তান কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ার এবং আপনারা জানেন আমার স্বামী ছিলেন নিউক্লিয়ার সায়েন্টিস্ট। তবে আজকের অনুষ্ঠানে আপনাদের নেতৃবৃন্দ তাদের বক্তৃতায় সাহিত্যের যে উদ্ধৃতি দিচিছলেন, সাহিত্যের ছাত্রী হিসেবে তা শুনতে আমার বেশ ভাল লেগেছে।
শেখ হাসিনা বলেন, আপনারা জানেন যে, ১৯৫৪ সালে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান শিল্প ও বাণিজ্যমন্ত্রী থাকাকালে ২টি পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট স্থাপনের পরিকল্পনা গ্রহণ করেছিলেন। তাঁর প্রচেষ্টায় তেজগাঁওয়ে ইস্ট পাকিস্তান (বর্তমান ঢাকা পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট) পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট প্রতিষ্ঠিত হয় এবং ১৯৫৫ সালে ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারিং কোর্সে প্রথম ব্যাচে ছাত্র ভর্তি হয়। ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারদের সাথে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ ও বঙ্গবন্ধুর আত্মিক সম্পর্ক ছিল অবিচেছদ্য। যা এখনও অব্যাহত রয়েছে।
তিনি বলেল, আপনাদের এবারের সম্মেলনের মূল প্রতিপাদ্য জীবন-জীবিকা সমৃদ্ধির জন্য দক্ষতাভিত্তিক শিক্ষা। আমি মনে করি এই প্রতিপাদ্যটি যথার্থ এবং সময়োপযোগী হয়েছে। শুধুমাত্র শিক্ষার জন্য শিক্ষা নয়, বরং দক্ষতাভিত্তিক সুশিক্ষার বিষয়টি গুরুত্বসহকারে বিবেচনা করতে হবে।প্রধানমন্ত্রী জাতির পিতার উদ্ধৃতি সোনার বাংলা গড়ার জন্য সোনার মানুষ চাই বাক্যটি উল্লেখ করে বলেন, সোনার মানুষ গড়তে হলে আমাদের নৈতিক মূল্যবোধসম্পন্ন দক্ষ মানুষ গড়ে তুলতে হবে। এ কাজটি শুধুমাত্র সরকারি উদ্যোগে সম্ভব নয়।
তিনি বলেন, জাতীয় দায়বদ্ধতা ও চেতনা থেকে দক্ষ জনশক্তি সৃষ্টির কাজে সরকারের পাশাপাশি প্রতিটি পেশাজীবী, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনকে এগিয়ে আসতে হবে।তিনি বলেন, বর্তমান বিশ্ব চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় দক্ষতার কোন বিকল্প নেই। জনসংখ্যাকে দক্ষ জনশক্তি হিসাবে গড়ে তুলতে পারলে তারাই হতে পারে আমাদের শ্রেষ্ঠ সম্পদ। এ লক্ষ্যে সরকার নানামুখী পরিকল্পনা গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করে চলেছে।
শেখ হাসিনা বলেন,আইডিইবি’র স্টাডি ও রিসার্চ সেলের মাধ্যমে আপনারা দেশের জনগুরুত্বপূর্ণ কিছু বিষয়ে স্টাডি করে সরকারের নিকট বেশ কিছু সুপারিশ পেশ করেছেন। বিদ্যুৎ সাশ্রয়ে এবং নবায়নযোগ্য জ্বালানি ব্যবহারে, রেল ব্যবস্থার উন্নয়নে, নদী খনন ও নদী পথের গুরুত্ব, আবাসন সমস্যার সমাধানে, দুর্নীতি রোধে, জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণে সুপারিশসহ বিভিন্ন জনগুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে আপনারা বেশ কয়েকটি সুপারিশ সরকারের নিকট পেশ করেছেন। আমরা এই প্রস্তাবগুলো গুরুত্বের সাথে বিবেচনা করবো।
তিনি বলেন, আপনারা জানেন ইতোমধ্যে আমরা অনেকগুলো বিষয়ে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করেছি। রেল ও নদী পথে সব থেকে স্বল্প খরচে ও সহজভাবে পণ্য পরিবহন ও মানুষের যোগাযোগের সুযোগ ছিল, এক কথায় বলা যায় তা ধ্বংস করা হয়েছে।
তিনি বলেন, সাধারণ মানুষের কথা বিবেচনা করে আমরা রেলের উন্ননের জন্য পৃথক মন্ত্রণালয় করে দিয়েছি। নৌরিবহনের ক্ষেত্রে নদীর নাব্যতা ফিরিয়ে আনতে নদী ডেজিংয়ের কাজ করে চলেছি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ১৯৭১ সালে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে আমরা স্বাধীনতা অর্জন করেছি। কঙ্গবন্ধু যদি আজ বেচেঁ থাকতেন তাহলে আমারে বাংলাদেশ অনেক উন্নত ও সমৃদ্ধহতে পারত। আমাদের দুর্ভাগ্য জাতির পিতাকে হারিয়ে আমরা অনেক পিছিয়ে গেছি, এগুতে পারিনি। আমাদের মুক্তিযুদ্ধের চেতনা, গৌরবের ইতিহাস সব কিছুতে আমরা পিছিয়ে গেছি।
শখ হাসিনা বলেন, ১৯৯৬ সপালে সরকার গঠনের পর উদ্যোগ নিয়েছিলাম যে কিভাবে এদেশের আর্থ সামাজিক উন্নয় ঘটানো যায়। বিশেষ করে আমাদের প্রতিটি নীতি ও পরিকল্পনায় গ্রামীন জনগণ ও সাধারণ খেটে খাওয়া মানুষের উন্নয়ন ও শিক্ষার দিকে গুরুত্ব দিয়েছি।
তিনি বলেন, শিক্ষার ব্যাপারে আমাদের সরকারই সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিয়েছে। কারণ শিক্ষাই জাতি ও দেশকে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারে। আমরা সেদিকে লক্ষ্য রেখে আমাদের জনশক্তিকে সুদক্ষভাবে গড়ে তুলতে বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করেছি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের সরকারই সর্বপ্রথম সারাদেশে প্রায় ১৮০০টি বেসরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ে এসএসসি (ভোকেশনাল) কোর্স প্রবর্তন করেছে। আমরা সরকারি উদ্যোগে ৩টি মহিলা পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটসহ ৫১টি পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট এবং বেসরকারি পর্যায়ে ৪ শতাধিক পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট এর মাধ্যমে ৪ বছর মেয়াদি ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারিং কোর্স পরিচালনা করে মধ্যম স্তরের দক্ষ প্রকৌশলী তৈরি করার ব্যবস্থা গ্রহণ করেছি।
তিনি বলেন, সরকারি ৫১টি পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটে দ্বিতীয় শিফ্ট চালু করা হয়েছে। এছাড়া মেয়েদের জন্য আরো ৩টি সহ মোট ২৫টি পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট স্থাপনের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়েছে। সরকার প্রতি উপজেলায় ১টি করে টেকনিক্যাল স্কুল স্থাপনের মাধ্যমে বৃত্তিমূলক শিক্ষার সম্প্রসারণের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে।প্রধানমন্ত্রী বলেন, দক্ষ মানবসম্পদ তৈরির জন্য ৩৭টি টেকনিক্যাল ট্রেনিং সেন্টারের (টিটিসি) মাধ্যমে দক্ষ জনশক্তি তৈরি এবং বিদেশে জনবল পাঠানোর পূর্বে প্রশিক্ষণ দেয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে। আরো ৩০টি টিটিসি স্থাপন করে জনবল নিয়োগ দিয়ে চালুর অপেক্ষায় রয়েছে।
তিনি বলেন, আমরা গত পাঁচ বছরে সরকারি ও বেসরকারি খাতে প্রায় এক কোটি মানুষের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করেছি। ২৫ লাখ লোক বিদেশে চাকুরি পেয়েছে। আমাদের উদ্যোগের ফলে মালয়েশিয়া ও মধ্যপ্রাচ্যে স্বল্প খরচে শ্রমিক রপ্তানি শুরু হয়েছে। বিকল্প শ্রমবাজার অনুসন্ধান চলছে। আমরা বাংলাদেশ ব্যাংকের মাধ্যমে স্বল্প সুদে ও সহজ লভ্যে ঋণ প্রদানের মাধ্যমে উদ্যোক্তা সৃষ্টির উদ্যোগ নিয়েছি।
শেখ হাসিনা বলেন, ঢাকায় টেক্সটাইল কলেজকে বিশ্ববিদ্যালয় করা হয়েছে। ৬টি টেক্সটাইল ইনস্টিটিউট আধুনিকায়ন করেছি।বেসরকারি পর্যায়ে পলিটেকনিক শিক্ষার বিস্তারে উৎসাহ দেয়া হচ্ছে। পুরাতন জেলা সদরে একটি করে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন ইতিমধ্যে সম্পন্ন হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমি জেনে আনন্দিত হয়েছি যে, বাংলাদেশ ব্যাংকের সহায়তায় ৫ শত ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার নতুন উদ্যোক্তা সৃষ্টির লক্ষ্যে আপনারা ঢাকা চেম্বার এন্ড কমার্স ইন্ডাস্ট্রিজর সাথে সমঝোতা চুক্তি সম্পন্ন করে অব্যাহত প্রশিক্ষণ দিয়ে যাচ্ছেন।
তিনি বলেন, আপনাদের মূল ভবনে ইলেকট্রো মেডিক্যাল ল্যাব প্রতিষ্ঠা করছেন, এটি জেনেও আমি আনন্দিত হয়েছি। একই সাথে আপনারা আইডিইবি ভবনে ইলেকট্রিক্যাল, ইলেকট্রনিক্স এন্ড আইটি ল্যাব এবং সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং ল্যাব প্রতিষ্ঠার জন্য সরকারি সহায়তা চেয়েছেন। আপনারা যখনই যা চেয়েছেন, আমরা বিমুখ করিনি। এবারও আমাদের সহযোগিতা আপনারা পাবেন।
তিনি আরো বলেন,আপনারা আইডিইবি’র উদ্যোগে একটি এনার্জি পার্ক এবং উদ্যোক্তা প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউট স্থাপনে প্রয়োজনীয় ভূমি বরাদ্দের জন্য সরকারকে অনুরোধ জানিয়েছেন। জমিটি আপনারা পদ্মার পাড়ে চাওয়ায় আমি খুশি হলাম। আমরা এই বিষয়ে আপনাদের সহযোগিতার চেষ্টা করবো।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আপনাদের বেতন বৈষম্য নিরসনসহ কয়েকটি পেশাগত সমস্যা সমাধান ও পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের ছাত্র শিক্ষকদের সমস্যা সমাধানের লক্ষ্যে ২টি আন্ত:মন্ত্রণালয় কমিটি গঠন করা হয়েছিল। কমিটি সরকারের নিকট সুপারিশ প্রদান করেছে। আন্ত:মন্ত্রণালয় কমিটির সুপারিশের বিষয়ে পদক্ষেপ নেয়ার জন্য ইতিমধ্যে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়কে নির্দেশনা প্রদান করা হয়েছে।তিনি বলেন, এ সমস্যাটির সমাধান অনেক আগেই হয়ে যাওয়ার কথা ছিল, কিন্তু কেন হয়নি, কোথায় ঠেকে আছে আমি দেখব।
প্রধানমস্ত্রী বলেন, ২০০৮ সালের ঢাকা মহানগর ইমারত বিধিমালা আপনাদের অনুরোধেআন্ত :মন্ত্রণালয় কমিটির সুপারিশ অনুসারে সংশোধন করা হয়েছে। বেতন বৈষম্য নিরসনের জন্য অর্থ মন্ত্রণালয়কে ব্যব¯’া নিতে বলা হয়েছে। তবে ইতোমধ্যে পে-কমিশন গঠন হয়ে যাওয়ায় আপনাদের বিষয়টি পে-কমিশনে পাঠানো হয়েছে। তারা বেতন বৈষম্যের এ ষিয়টি দেখবে এবং সমাধান করা হবে।
শেখ হাসিনা বলেন, দেশের পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটসমূহে শিক্ষকের শূন্য পদ পূরণসহ ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারিং শিক্ষা ব্যবস্থা উন্নয়নে পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। ছাত্রদের বৃত্তি ও অর্থের পরিমাণ বৃদ্ধি এবং ইন্ডাস্ট্রিয়াল ট্রেনিং ভাতা বৃদ্ধির বিষয়গুলি সরকারের সক্রিয় বিবেচনায় রয়েছে।
তিনি বলেন, কারিগরি শিক্ষায় মেয়েদের আকৃষ্ট করা এবং চাকরিতে তাদের অগ্রাধিকার দেয়ার বিষয়টি সরকার গুরুত্বের সাথে দেখবে।শেখ হাসিনা বলেন, বিশ্ব অর্থনৈতিক মন্দা সত্ত্বেও দেশের অর্থনীতি আজ খুব দৃঢ় অবস্থানে আছে। সামষ্টিক অর্থনীতির প্রতিটি সূচক ইতিবাচক ধারায় এগুচ্ছে। নানান প্রতিকূলতা সত্বেও দেশে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ২০ বিলিয়ন ডলার অতিক্রম করেছে। জাতিসংঘসহ আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানগুলো বাংলাদেশের আর্থ-সামাজিক অগ্রগতির ভূয়সী প্রশংসা করেছে।
তিনি বলেন, আমরা বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতা ১১ হাজার মেগাওয়াটে উন্নীত করেছি। ১৫ হাজার কমিউনিটি ক্লিনিক ও ইউনিয়ন স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্রের মাধ্যমে গ্রামীণ জনগোষ্ঠীকে চিকিৎসা সেবা দেয়া হচ্ছে। হাসপাতালগুলোতে শয্যা সংখ্যা বাড়ানো হয়েছে। মাথাপিছু গড় আয় ১০৪৪ ডলার। দারিদ্র্য কমে এখন ২৬ শতাংশের নীচে নেমে এসেছে। ৫ কোটি মানুষ নি¤œ আয় থেকে মধ্য আয়ের স্তরে উন্নীত হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ৫ বছরে প্রাথমিক থেকে মাধ্যমিক স্তর পর্যন্ত বিনামূল্যে ২১১ কোটি ৩৯ লাখ পাঠ্যবই প্রদান করা হয়েছে। একটি বাড়ি একটি খামার, বয়স্ক ভাতা, বিধবা ভাতা, মাতৃত্বকালীন ভাতা, মুক্তিযোদ্ধা ভাতা, প্রতিবন্ধী ভাতা, ভিজিডি, ভিজিএফ, টেস্ট রিলিফ, কাজের বিনিময়ে খাদ্য কর্মসূচীর মাধ্যমে সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনী সৃষ্টি করা হয়েছে। ডিজিটাল বাংলাদেশ বিনির্মাণের লক্ষ্যে প্রতিটি ইউনিয়নে তথ্যসেবা কেন্দ্র নির্মাণ করা হয়েছে।
শেখ হাসিনা বলেন, আসুন, উন্নয়নের এই ধারাকে এগিয়ে নিয়ে যাই। একুশ শতকের সকল চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করে বিশ্বের বুকে বাংলাদেশকে একটি উন্নত, সমৃদ্ধ দেশ হিসাবে প্রতিষ্ঠিত করি। ক্ষুধা-দারিদ্র্য-নিরক্ষরতামুক্ত জাতির পিতার স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়ে তুলি।
অনুষ্ঠানে কাজের স্বীকৃতিস্বরূপ ৫ আইডিইবি সদস্যকে আইডিইবি সম্মাননা পদক প্রদান করা হয়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এ পদক তুলে দেন। পদকপ্রাপ্তরা হলেন বিশিষ্ট রাজনীতিক এ্যাডভোকেট রহমত আলী এমপি, সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব হাসান ইমাম, আইডিইবি’র সাবেক সভাপতি শফিউদ্দিন সরকার, বিশিষ্ট চলচ্চিত্র নির্মাতা আব্দুল জাব্বার খান ও রমানন্দ মল্লিক।