1দৈনিক বার্তা: বৈশাখের তীব্র তাপদাহে সারা দেশ শুকিয়ে কাঠ হয়ে গেছে। বৃষ্টি না হওয়া এবং মৃদু তাপপ্রবাহ বয়ে যাওয়ার কারণে হাহাকার পড়ে গেছে সাধারণ মানুষের মধ্যে। এ অবস্থায় ভোগান্তি আরো বাড়িয়ে তুলতেই যেন গরমের সঙ্গে রীতিমতো পাল্লা দিয়ে শুরু হয়েছে বিদ্যুৎ বিভ্রাটও।

বাংলা নতুন বছরের প্রথম মাস বৈশাখ শুরু হয়েছে গত ১৪ এপ্রিল, বৈশাখের তীব্র গরম এবার ঠিকমতই দেখা দিলেও এখনো পর্যন্ত দেখা মেলেনি বৃষ্টির। আবহাওয়া অধিদফতর সূত্রে জানা গেছে, আগামী তিন-চার দিনেও বৃষ্টির দেখা পাওয়ার সম্ভাবনা খুবই কম, এমনকি তাপমাত্রা আরো বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কাই বেশি।

আবহাওয়াবিদ আব্দুর রহমান জানিয়েছেন, গত কয়েকদিন ধরে বৃষ্টি না হওয়ার কারণেই তাপমাত্রা বেড়ে গেলেও এটা অস্বাভাবিক কিছু নয়।

অবশ্য, গত মাসে দেশে যতটুকুও বৃষ্টি হয়েছে তাও গড় বৃষ্টিপাতের প্রায় ৬৬ শতাংশ কম ছিল। যেখানে রাজধানীতে এপ্রিলের গড় বৃষ্টিপাতের পরিমাণ ১৪৭ মিলিমিটার হওয়ার কথা, সেখানে গত ১৮ দিনে ঢাকায় বৃষ্টিপাতের পরিমাণ ৬১ মিলিমিটারের কাছাকাছি।

আবহাওয়া অধিদফতর সূত্রে জানা গেছে, চলতি মাসে বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট একটি বা দুটি লঘুচাপের কারণে ঘূর্ণিঝড়ের সম্ভাবনা রয়েছে। ফলে আগামী সপ্তাহে কিছুটা বৃষ্টি হতে পারে।

গত বছরের এই এপ্রিল মাসেই ঢাকায় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছিল ৩৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস। অথচ গতকালের তাপমাত্রা ছিল ৩৭.৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস, যা এখনো পর্যন্ত এই মাসের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা।

ভ্যাপসা গরম আর গুমোট এই আবহাওয়া প্রভাব ফেলেছে বিদ্যুৎ সরবরাহেও। যদিও বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড পিডিবি’র দাবি করছে- সব ধরনের চাহিদা পূরণের জন্য যথেষ্ট পরিমাণ বিদ্যুৎ উৎপাদিত হয়েছে, কিন্তু প্রকৃত অবস্থা হলো দেশের বিভিন্ন এলাকার মানুষ নিরবিচ্ছিন্নভাবেই দীর্ঘ সময় ধরে বিদ্যুতের দেখা পাচ্ছেন না।

পিডিবি’র এক কর্মকর্তা দাবি করেন- অধিক চাহিদা মেটানোর জন্য টানা বিদ্যুৎ সরবরাহের ফলে স্থানীয়ভাবে বিদ্যুৎ বণ্টনের জন্য যন্ত্রপাতি অতিরিক্ত গরম হয়ে যায় বলে সেগুলোকে ঠাণ্ডা করতে কিছু সময় বন্ধ করে রাখতে হয়।

পিডিবি’র একজন পরিচালক বলেন, “মাত্র এক মাস আগেও দিনের বেলায় অফ-পিক সময়ে বিদ্যুতের চাহিদা ছিল সাড়ে চার হাজার মেগাওয়াট এবং সন্ধ্যার পর থেকে অর্থাৎ পিক আওয়ারে এই চাহিদার পরিমাণ বেড়ে দাঁড়াতো সাত হাজার মেগাওয়াট পর্যন্ত। পর্যাপ্ত পরিমাণ বিদ্যুৎ সরবরাহের মাধ্যমে আমরা এই পুরো চাহিদাই মিটিয়েছি।”

বিদ্যুৎ বিভ্রাটের কারণ ব্যাখ্যা করতে গিয়ে তিনি বলেন, “কিন্তু গত কয়েকদিন ধরে দিনের বেলাতেই বিদ্যুতের চাহিদা প্রায় সাড়ে ছয় হাজার মেগাওয়াট হয়ে গেছে, মাত্র এক মাসের ব্যবধানে চাহিদা বেড়েছে প্রায় দুই হাজার মেগাওয়াট। সবাই তাদের ফ্যান আর এসি চালিয়ে রাখছে বলেই এই অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে।”

বিদ্যুতের মূল্য ক্রমাগত বাড়ানোর পরেও চাহিদা অনুযায়ী বিদ্যুৎ সরবরাহ করতে না পারায় স্থানীয় বিদ্যুৎ সরবরাহ কেন্দ্রগুলো বর্তমানে বেশ চাপের মুখে রয়েছে। তাই ঢাকা বিদ্যুৎ সরবরাহ কোম্পানি ডেসকো, পিডিবি এবং পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড আরইবি’র আওতাধীন উপ বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলোর পরিচালকরা নিজ নিজ এলাকায় বিদ্যুৎ সরবরাহে কোনোরকম বিঘ্ন এড়ানোর উদ্দেশ্যে সাময়িকভাবে কেন্দ্রগুলো বন্ধ রাখেন।

সার শিল্পের আওতাধীন কারখানাগুলোকে গ্যাসভিত্তিক কারখানায় পরিণত করে সেখানে প্রাকৃতিক গ্যাস সরবরাহ করা এবং ভারত থেকে পাঁচশ’ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমদানিসহ সরকারের গৃহীত বেশ কিছু স্টপ-গ্যাপ পদক্ষেপের কারণে পিডিবি মার্চ মাসে সাত হাজার মেগাওয়াটেরও বেশি বিদ্যুৎ সরবরাহ করতে পেরেছে।

গত বছরের জুলাই মাসে ছয় হাজার ৬৭৫ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ সরবরাহ করার মাধ্যমে পিডিবি ‘জিরো লোডশেডিং’-এর কৃতিত্ব অর্জন করেছিল।

পিডিবি’র পরিচালক বলেন, “সার কারখানাগুলোতে গ্যাস সরবরাহ করার এই পরিকল্পনাটি অন্তত আগামী রমজান মাস অবধি বহাল রাখবো আমরা।”

আবহাওয়া অধিদফতর সূত্রে জানা গেছে, বর্তমানে মৃদু থেকে নাতিশীতোষ্ণ একটি তাপপ্রবাহ ঢাকা, রাজশাহী, রংপুর ও খুলনা বিভাগ এবং রাঙামাটি, সিলেট, বরিশাল ও পটুয়াখালীর কিছু নির্দিষ্ট অঞ্চলের ওপর দিয়ে বয়ে যাচ্ছে এবং আরো কয়েকদিন তাপপ্রবাহটি অব্যাহত থাকতে পারে।

তবে আজ রাতে অথবা আগামীকাল দেশের ময়মনসিংহ, সিলেট ও কুমিল্লায় বৃষ্টি হতে পারে বলেও জানা গেছে।

গত বছরের এপ্রিল মাসে দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছিল চুয়াডাঙ্গা জেলায় ৪১.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস, যেখানে চলতি বছরে এখন পর্যন্ত সর্বোচ্চ তাপমাত্রা হিসেবে গতকাল রাঙামাটিতে ৪০.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে।

এই উচ্চ তাপমাত্রা এবং স্বল্প বৃষ্টিপাতের কারণে দেশের কৃষিখাতে বেশ নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে এবং ইতিমধ্যেই দেশের বিভিন্ন জেলায় খরার মতো পরিস্থিতিও সৃষ্টি হয়েছে।