দৈনিক বার্তা: কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ে আবারো রক্তাক্ত হলো বাংলা বিভাগের ছাত্রী মাহমুদা খাতুন লাভলী। রক্তাক্ত হলো সেই প্রেম প্রত্যাখাত এবং এর আগে একবার ঐ ছাত্রীকে ছুরিকাঘাতের দায়ে আজীবন বহিষ্কৃত ছাত্রলীগ নেতা নুরুল আমিন সবুজের হাতে। শনিবার পরীক্ষার পূর্বে বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসে ঢুকে ঐ ছাত্রীকে ঘুষি মেরে ঠোঁটের নিচের অংশে কেটে ফেলে সে। এতে ঐ ছাত্রীকে ঠোঁটের নিচে তিনটি সেলাই দিতে হয়েছে। বর্তমানে সে কুমিল্লা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। হামলার পর বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ বাংলা বিভাগের ৪র্থ বর্ষের প্রথম সেমিষ্টার চূড়ান্ত পরীক্ষা স্থগিত করেছে।
বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা যায়, শনিবার কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের ৪র্থ বর্ষ প্রথম সেমিস্টারের চূড়ান্ত পরীক্ষা শুরুর বিশ মিনিট পূর্বে পরীক্ষার ক্যাম্পাসে প্রবেশ করে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আজীবনের জন্য বহিষ্কৃত সবুজ। এ সময় পরীক্ষা দিতে যাওয়া মাহমুদা খাতুন লাভলীর সাথে সে দস্তাদস্তি শুরু করে। এক পর্যায়ে সে লাভলীকে ঘুষি মারে। এতে তার ঠোঁটের নিচের অংশে কেটে যায়। রক্তাক্ত লাভলীকে দেখে শিক্ষকরা বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিষ্টার মুজিবুর রহমান মজুমদারকে জানান। তিনি ঘটনাস্থলে পৌঁছে ঐ ছাত্রীকে তাৎক্ষণিকভাবে অ্যাম্বুলেন্সে করে কুমিল্লা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে প্রেরণ করেন। লাভলীকে সেখানে ভর্তি করার পর চিকিৎসা চলছে। তার ঠোঁটের নিচের অংশে তিনটি সেলাই দিতে হয়েছে। কুমিল্লা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগের কর্মী জানান, মাহমুদা খাতুন লাভলী নামে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন ছাত্রী ভর্তি আছে। তার স্বামীর নাম নজরুল ইসলাম, বাড়ি চৌদ্দগ্রামের চকলক্ষিপুর বাগবাড়িতে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিষ্টার মুজিবুর রহমান মজুমদার ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, প্রথমে কেউ বলতে না চাইলেও পড়ে জেনেছি ঐ ছাত্রের ঘুষিতে ছাত্রীটির ঠোঁটের নিচের অংশ কেটে রক্ত বের হতে থাকে। এ ব্যাপারে ছাত্রীটির পিতা-মাতা কোন আইনগত ব্যবস্থা না নিলে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে ঘটনাটি ঘটায় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।
এ দিকে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন লাভলীর বাবা ও মায়ের সাথে কথা বলার জন্য মোবাইলে ফোন করলেও তারা এ বিষয়ে কথা বলে অপারগতা প্রকাশ করেন। এ ঘটনার পর পুলিশ প্রক্টরিয়াল বডির সহায়তায় সবুজকে খুঁজতে হলে তল্লাশি চালায়, তবে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ও পুলিশ আসার পূর্বেই সে পালিয়ে যায়।
উল্লেখ্য, লাভলীকে বারবার প্রেমের প্রস্তাব দিয়ে প্রত্যাখ্যত হয়ে ২০১১ সালে বিভাগের ২য় সেমিস্টার পরীক্ষা চলাকালে সবুজ লাভলীকে ছুরিকাঘাত করে। লাভলীর অভিযোগের প্রেক্ষিতে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন তদন্তের পর তাকে আজীবনের জন্য বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বহিষ্কার করে। এ বহিষ্কারাদেশের বিরুদ্ধে সবুজ হাইকোর্টে রিট করে। হাইকোর্টে রিট চলমান অবস্থায় সবুজ শনিবার ক্যাম্পাসে এই ঘটনা ঘটায়।
অপরদিকে প্রথমবার ছুরিকাঘাতের ঘটনার পর লাভলীর পিতা-মাতা তাকে বিয়ে দিয়ে দেন।
এ বিষয়ে প্রক্টর মো. আইনুল হক বলেন, ‘প্রশাসন এ বিষয়ে কঠোর ব্যবস্থা নিবে। তাকে পুলিশে ধরিয়ে দিতে আমরা চেষ্টা করছি।’