মনির/দৈনিক বার্তা: ২০ এপ্রিল বীরশ্রেষ্ঠ মুন্সী আব্দুর রউফ এর ৪৩তম শাহাদাত বার্র্ষিকী। ফরিদপুর জেলার মধুখালী উপজেলার সালামতপুর গ্রামের এ সাহসী বীর সেনানী ১৯৭১ সালের ২০ এপ্রিল রাঙ্গামাটি জেলার মহালছড়িতে নৌপথে বুড়িঘাটা এলাকায় শত্র“র সাথে জীবন বাজি রেখে লড়াইয়ের এক পর্যায়ে শত্র“র গোলার আঘাতে শহীদ হন। বীর শ্রেষ্ট উপাধিতে ভূষিত এ যোদ্ধার জন্মস্থানকে ঘিরে স্থানীয়দের চাওয়া পাওয়ার অনেকটাই এখনো পূরণ হয়নি। এমনকি এ বীরশ্রেষ্ট জাতীয়ভাবেও উপেক্ষিত বলে মনে করছেন অনেকেই। অপরদিকে একমাত্র ছেলের হাজারো স্মৃতি নিয়ে বিডিআরের তৈরি করে দেয়া বাড়িতে দিন কাটাচ্ছেন শতবর্ষী বীরমাতা মকিদুননেছা। মৃত্যুর আগে সন্তান হত্যাকারী স্বাধীনতা বিরোধীদের বিচার দেখে যেতে চান বীরমাতা বেগম মকিদুন্নেছা।
ফরিদপুর জেলার মধুখালী উপজেলার অবহেলিত এক জনপদ সালামতপুর গ্রাম। মধুমতি নদীর কোল ঘেঁষে কামারখালী থেকে সামনের দিকে এগুলেই গ্রামটির অবস্থান। ১৯৪৩ সালের মে মাসে এ গ্রামেই জন্মগ্রহন করেছিলেন মহান স্বাধীনতা যুদ্ধে নিহত শহীদ ল্যান্স নায়েক মুন্সী আব্দুর রউফ। তার পিতার নাম মুন্সী মেহেদী হোসেন আর মা মকিদুননেছা। তিন ভাই বোনের মধ্যে রউফ ছিলেন সবার বড়। বাবা মেহেদী হোসেন স্থানীয় একটি মসজিদে ইমামতি করতেন। আর্থিক অসচ্ছলতার কারণে ছেলের লেখাপড়া বেশী দুর এগিয়ে নিয়ে যেতে পারেনি দরিদ্র পিতা। ফলে কামারখালী হাইস্কুলে নবম শ্রেণীতে পড়া অবস্থায় আব্দুর রউফ ১৯৬৩ সালে তৎকারীন ইপিআর যা পরবর্তীতে বাংলাদেশ রাইফেলস বর্তমানে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশে যোগ দেন। মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে তিনি অষ্টম ইষ্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের সঙ্গে যুক্ত হয়ে মুক্তিযুদ্ধে অংশ গ্রহন করেন।
১৯৭১ সালে ২০ এপ্রিল রাঙ্গামাটি জেলার মহালছড়ি নৌপথে বুড়িঘাটা এলাকায় পাকিস্থানী বাহিনীর সঙ্গে সংর্ঘষকালে শক্রর প্রচন্ড গোলাবর্ষনে মুখেও আব্দুর রউফ নিজের মেশিনগান দিয়ে মুহুমুহু গোলাবর্ষন করতে থাকেন, তার প্রচন্ড গোলাবর্ষনে মুহুত্বেই দুই প্লাটুন শক্র সৈন্য সম্পর্ন্ন ধ্বংস হয়। শক্রর প্রবল গোলাবর্ষনের মুখেও শহীদ ল্যান্স নায়েক মুন্সী আব্দুর রউফ পিছপা হননি। মেশিনগান নিয়ে তিনি তার অবস্থানে স্থির ছিলেন। কিন্তু হঠাৎ করেই পাকিস্থানী সেনাদের মর্টারের গোলা তার অবস্থানে আঘাত করলে তিনি শাহাদাত বরণ করেন। রাঙ্গামাটি জেলার নানিয়ার চর উপজেলার চিংড়ীখালের পাড়ে এই বীর সন্তানকে সমাধিস্থ করা হয়। মুক্তিযুদ্ধে বিরোচিত ভূমিকা ও আত্মত্যাগের স্বীকৃতি সরূপ তাকে সর্বোচ্চ সনম্মনা বীরশ্রেষ্ট খেতাবে ভুষিত করা হয়।
মুক্তিযোদ্ধা ও কামারখালী বাজার বনিক সমিতির সভাপতি কাজী মতিউল ইসলাম মুরাদ বলেন, বীরশ্রেষ্ট মুন্সী আব্দুর রউফের স্মৃতিকে অম্লান রাখতে স্থানীয় জনসাধারণের অনেক চাওয়াই পূরণ হয়নি। একমাত্র কামারখালীতে স্থাপিত বীর শ্রেষ্ট আব্দুর রউফ ডিগ্রি কলেজের নামকরণ করা ছাড়া আর কোন গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা তার নামে নামকরণ করা হয়নি বলে তার অভিযোগ। তিনি জানান, বীরমাতা প্রধানমন্ত্রীর সাথে সাক্ষাত করে কামারখালীকে বীরশ্রেষ্টের নামে আলাদা উপজেলা গঠনের দাবী জানালে প্রধানমন্ত্রী তা বিবেচনায় নিলেও এখনো তা কাগজপত্র চালাচালির মধ্যেই সীমাবদ্ধ রয়ে গেছে।
কামারখালী ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মোঃ লুৎফর রহমান বলেন, আধুনিক সভ্যতার যুগে এখনো বীরশ্রেষ্টে গ্রাম সালামতপুরে আজো পৌছেনি বিদ্যুৎ কিংবা পাঁকা সড়ক। পাঠাগারে যাতায়াতের রাস্তার একটি অংশ নদীভাঙ্গনের মুখে পড়েছে। একই সাথে নদী যেভাবে স্মৃতি যাদুঘরটির দিকে ধেয়ে আসছে তাতে যে কোন সময় তা নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যাওয়ার আশংকা রয়েছে। তিনি জানান, সালামতপুর গ্রামে সরকারীভাবে গড়ে তোলা বীরশ্রেষ্ঠ আব্দুর রউফ স্মৃতি যাদুঘর ও পাঠাগারটিতে বিদ্যুৎ না থাকায় পাঠক আকৃষ্ট করতে পারছেনা।
সরকারী বীর শ্রেষ্ট আব্দুর রউফ ডিগ্রী কলেজের প্রভাষক মোঃ সাদিকুর রহমান জোয়ারদার বলেন, বীরশ্রেষ্ট মুন্সী আাব্দুর রউফ জাতীয়ভাবে উপেক্ষিত। তার জন্ম ও মৃত্যু দিবস স্বল্পপরিষরে পালন করা হয়। যা আমাদের কাম্য নয়। এদিবস ও তার কর্মকান্ড যথাযতভাবে উপস্থাপিত হলে নতুন প্রজন্ম শিক্ষা পেত।
অপরদিকে বীরমাতা মকিদুন্নেছা সারাক্ষন তসবিহ পড়ে পড়ে সন্তান হত্যাকারী তথা যুদ্ধাপরাধীদের বিচার প্রার্থনা করে সময় কাটাচ্ছেন শতবর্ষী বীরমাতা মকিদুন্নেছা। বয়সের ভারে নুয্য এ বীর মাতা মৃত্যুর আগে অপরাধীদের বিচার দেখে যেতে চান।
ফরিদপুরের জেলা প্রশাসক আবু হেনা মোরশেদ জামান জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে বীরশ্রেষ্ট আব্দুর রউফের মৃত্যুবার্ষিকী যথাযোগ্য মর্যাদায় পালন করার প্রত্যয় ব্যক্ত করেছেন। তিনি আরো বলেন, বীরশ্রেষ্টের ইউনিয়নকে উপজেলায় রুপান্তরের বিষয়টি পুনরায় বিবেচনা করা যেতে পারে।
বীরশ্রেষ্ঠ আব্দুর রউফ এর ৪৩তম শাহাদাত বার্ষিকী উপলক্ষে ফরিদপুরে সরকারীভাবে কোনো কর্মসূচী না থাকলেও নিজ বাড়ীর আঙ্গিনায় তার মায়ের আয়োজনে সাদামাটাভাবে আয়োজন করা হয়েছে মিলাদ মাহফিলের। এক্ষেত্রেও এজাতীয় বীর জাতীয়ভাবে উপেক্ষিত বলে মনে করছেন অনেকেই। বীর শ্রেষ্টের জন্ম ও মৃত্যুবার্ষিকী জাতীয়ভাবে সম্মানের সাথে পালনের দাবী স্থানীয় সুশীল সমাজের।