দৈনিক বার্তা: মমতার সঙ্গে মঞ্চে থাকার কথা ছিল মিঠুন চক্রবর্তীর। কিন্তু মিঠুনের বদলে শুক্রবারের সভায় মমতার হাত ধরে মঞ্চে এলেন দুই বোন রাইমা সেন ও রিয়া সেন। ফারাক্কা কলেজ মাঠে মিঠুন না আসার ক্ষোভ নিমেষে পরিণত হল উল্লাসে। কেউ বললেন, “ওরে, এরাই তাহলে আমাদের সুচিত্রা সেনের নাতনি! টিভিতে মাঝে মধ্যে দেখেছি বটে। কিন্তু এত কাছ থেকে যে ওদের দেখতে পাব তা কোনওদিন ভাবিইনি।” কেউ বললেন, “দ্যাখ, দ্যাখ, ছোটটির সঙ্গে দিদিমার অনেক মিল আছে।” কেউ আবার পাশ থেকে বলে উঠল, “মুনমুনদি থাকলে আরও ভাল হত।”
কয়েকদিন থেকেই মাইকে প্রচার চলছিল জনসভায় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে উপস্থিত থাকবেন মিঠুন চক্রবর্তীও। কিন্তু কাজের চাপে গতকালের সভায় হাজির হতে পারেননি গুরুজি। কিন্তু উপস্থিত জনতার ক্ষোভ নিমিষেই পানি করে দিল রিয়া-রাইমার উপস্থিতি। জনতার এই উচ্ছ্বাসে বাদ সাধেননি মমতাও। মঞ্চে উঠে মমতাই প্রথমে রাইমার হাতে ও পরে রিয়ার হাতে তুলে দিয়েছেন মাইক। নিমেষে চুপ গোটা মাঠ। রাইমা মাইক হাতে বললেন, “নমস্কার, আমি রাইমা সেন। বাঁকুড়ায় মা মমতাদির জন্য লড়াই করছেন। আমরা মমতাদিকে খুব বিশ্বাস করি। আপনারাও তাঁকে বিশ্বাস করুন। তাঁকে ভোট দিয়ে জয়ী করুন।”
রিয়া বলেলন, “নমস্কার, আমি রিয়া সেন। আমি আজ এখানে দাঁড়িয়ে খুব খুশি। আজ বাঁকুড়ায় মায়ের জন্য প্রচারে খুব ঘুরেছি। আপনারা উনার জন্য ভোট করবেন। যাতে ভোটে উনি জিততে পারেন।” ব্যাস, দুই বোনের কথা বলতে এইটুকুই। দু’জনেই বাংলায় বলেছেন। তবে রিয়ার কথায় একটু হিন্দির টান রয়েছে। কিন্তু তাতে কী? দু’জনের কথা শেষ হতেই হাততালিতে ফেটে পড়ল গোটা মাঠ।
‘গুরু’ মিঠুনকে দেখতে না পাওয়ার আক্ষেপ যে রিয়া-রাইমা পুষিয়ে দিয়েছে সে কথা অবশ্য খোলাখুলি জানিয়ে দিয়েছেন অনেকেই। বেনিয়াগ্রামের হেনা খাতুন বললেন, “মিঠুনকে দেখতেই এসেছিলাম। কিন্তু এসে যখন শুনলাম মিঠুন আসবে না তখন মনখারাপ হয়ে গিয়েছিল। কিন্তু রিয়া-রাইমাকে দেখার পর সব মনখারাপ উধাও হয়ে গেছে। খুব ইচ্ছে ছিল রিয়া-রাইমাকে একেবারে মঞ্চের সামনে থেকে দেখব। কিন্তু ভিড়ের ঠেলায় মঞ্চের কাছে যেতেই তো পারলাম না।”
বাহাদুরপুর থেকে রোদ-গরম উপেক্ষা করে ফারাক্কা কলেজ মাঠে জনা দশেক প্রতিবেশীকে নিয়ে এসেছিলেন শিক্কা মুর্মু। রিয়া, রাইমার মাত্র মিনিট চারেকের বক্তব্যের ঘোর তখনও যেন কাটেনি। রিয়া, রাইমার গল্প যেন তাদের মুখে থেকে সরতেই চায় না। শিক্কা বলেন, “মিঠুন আসেনি তো কী হয়েছে? পরেরবার না হয় দেখতে পাব। কিন্তু সুচিত্রার নাতনিদের কি কোনওদিন দেখতে পেতাম? ভোট কাকে দেব আর কাকে দেব না সে তো পরের কথা। কিন্তু এটাও তো ঠিক যে মমতা দিদির জন্য এদের দেখতে পেলাম।”
মাঠের এই নানা গল্পের মধ্যেই বক্তব্য শুরু করে দেন মমতা। মমতা বলেন, “রাইমা, রিয়ারা আমার খুব প্রিয়। গত পরশু সুতিতে মিঠুনদা এসেছিলেন।” এদিন ফের কংগ্রেসকে এক হাত নিয়ে মমতা বলেন, “আপনাদের জেলা মুর্শিদাবাদ থেকে আমাদের কোনও এমপি নেই। কংগ্রেসের সঙ্গে জোট থাকার জন্য আগে এখানে আমরা কোনও প্রার্থী দিতে পারতাম না। ফারাক্কায় কাজ করার অনেক সুযোগ আছে। অথচ ৬৬ বছর কংগ্রেস কিছু করেনি। ৩৫ বছর কিছু করেনি বামেরাও। আমরা কংগ্রেস করতাম। যখন দেখলাম কংগ্রেস সিপিএমের হাতে দলের পতাকাটা বিক্রি করে দিয়েছে তখন কংগ্রেস ছেড়ে তৃণমূল তৈরি করলাম। কংগ্রেস থাকলে সিপিএমকে হটানো যেত না। ২০১১ সালে কংগ্রেসের সঙ্গে জোট করেছিলাম। কিন্তু এ জেলায় নির্দল দাঁড় করিয়ে হারিয়ে দিয়ে বিশ্বাসঘাতকতা করেছিল কংগ্রেস। এই বিশ্বাসঘাতক, মিরজাফর কংগ্রেসকে কেউ ক্ষমা করবেন না।” মমতা বলেন, “সিপিএম এ রাজ্যে ছিল কারণ কংগ্রেস ওদের বন্ধু।”
মমতা বলেন, “ফারাক্কার জল শুকিয়ে গেছে প্রায়। হঠাৎ দেখলাম ফারাক্কার গেট ভেঙে জল সব চলে যাচ্ছে। পানীয় জলের সঙ্কট হচ্ছে। শিল্প মার খাচ্ছে। আমি প্রধানমন্ত্রীকে চিঠি দিয়ে প্রতিবাদ করেছিলাম তিস্তা ও গঙ্গার এই অবস্থা নিয়ে। বাংলাকে ভাতে মারার চেষ্টা হচ্ছে বারবার। বাংলা এগিয়ে যাক তা কেউ চাই না।”