মোস্তাফিজুর রহমান টিটু/দৈনিক বার্তা: গাজীপুরের শ্রীপুরে তিতাস গ্যাসের পাইপ লাইনে অগ্নিকান্ডের ঘটনায় অগ্নিদ্বগ্ধ এক গার্মেন্টস কর্মী শুক্রবার মারা গেছে। অগ্নিদ্বগ্ধ গার্মেন্টস কর্মীর মৃত্যুর খবরে বিক্ষুদ্ধ এলাকাবাসি অগ্নিকান্ডের ঘটনায় ক্ষতিপূরণের দাবীতে বিক্ষোভ ও মহাসড়ক অবরোধ করেছে। এসময় তারা কয়েকটি গাড়িও ভাংচুর করেছে। এদিকে ওই ঘটনায় অগ্নিদ্বগ্ধদের মধ্যে অপর দু’জনের অবস্থাও আশংকাজনক। অগ্নিদ্বগ্ধ নিহত গার্মেন্টস কর্মীর নাম আনোয়ার হোসেন (৩৮)।
এলাকাবাসি ও ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা জানায়, গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলার গড়গড়িয়া মাস্টারবাড়ী বাজার এলাকায় ভেক্যু দিয়ে মাটি খনন করে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক চারলেন সম্প্রসারণ কাজ করার সময় বৃহস্পতিবার রাত পৌণে ৭টার দিকে মাটির নিচের তিতাস গ্যাসের বিতরণ লাইনের বড় পাইপ ফেটে গেলে বিপুল পরিমান গ্যাস বের হতে থাকে এবং বাতাসে ছড়িয়ে পড়ে। মুহুর্তেই নির্গত গ্যাসে আগুন ধরে ভয়াবহ আকার ধারন করে। ফায়ার সার্ভিসের চারটি ইউনিট প্রায় দু’ঘন্টা চেষ্টার পর আগুন নেভায়। আগুনে ওই বাজারের হকার্স মার্কেটের অর্ধশতাধিক দোকানপাট, বাজার জামে মসজিদ ও কয়েকটি বাড়ি-ঘর পুড়ে যায়। এসময় অন্তত: ৫জন অগ্নিদ্বগ্ধ হয়। এদের মধ্যে আশংকাজনক অবস্থায় গার্মেন্টস কর্মী আনোয়ার হোসেন (৩৮), ওই বাজারের বিউটি ফার্মেসীর মালিক পল্লী চিকিৎসক মোস্তফা জামান (৪২) ও ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী নয়নকে (৩০) রাতেই ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ণ ইউনিটে পাঠানো হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শুক্রবার ভোরে আনোয়ার হোসেন (৩৮) মারা যায়। এছাড়াও আগুনে দ্বগ্ধ দম্পতি গার্মেন্টস কর্মী নাসির (৩১) ও তার স্ত্রী সীমাকে (২২) শ্রীপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে। স্থানীয় ক্লিনিকের ডাক্তার জানায় আগুনে পল্লী চিকিৎসক মোস্তফা জামানের শরীরের ৮০ শতাংশ, ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী নয়নের ৪০ শতাংশ পুড়ে গেছে। এ দু’জনের অবস্থাও আশংকা জনক।
নিহত আনোয়ার হোসেন (৩৮) ঢাকা জেলার দোহার উপজেলার মৌরা গ্রামের আলী মাঝির ছেলে। সে স্থানীয় মাস্টারবাড়ী বাজার এলাকার মিতা টেক্সটাইল কারখানার ইলেক্ট্রিশিয়ান পদে চাকুরির পাশাপাশি ওই বাজারের বিউটি ফার্মেসীতে পার্ট টাইম কাজ করতো।
এদিকে আনোয়ার হোসেনের মৃত্যুর সংবাদ ছড়িয়ে পড়লে ওই এলাকার লোকজন ও গার্মেন্টস কর্মীরা বিক্ষুদ্ধ হয়ে উঠে। তারা অগ্নিকান্ডের ওই ঘটনায় ক্ষতিপূরণ দেয়ার দাবীতে বিক্ষোভ শুরু করে। একপর্যায়ে বিক্ষুদ্ধ লোকজন শুক্রবার সকাল ৭টার দিকে পার্শ্ববর্তী ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের ওপর এসে সড়ক অবরোধ করে। এসময় তারা ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে কয়েকটি যানবাহনের গ্লাস ভাংচুর করে। খবর পেয়ে শ্রীপুর থানা, মাওনা হাইওয়ে থানা ও শ্রীপুর উপজেলা প্রশাসনের কর্মকর্তারা ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করে। অগ্নিকান্ডের ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্থদের ক্ষতিপূরণের আশ্বাস দিলে এলাকাবাসি অবরোধ তুলে নিলে যানবাহন চলাচল শুরু করে। অবরোধের কারণে সড়কের উভয়দিকে দীর্ঘ যানজটের সৃষ্টি হয়।
শ্রীপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার আজীজ হায়দার ভুঁইয়া জানান, এসময় অগ্নিকান্ডের ঘটনায় আগামী তিনদিনের মধ্যে উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার মাধ্যমে ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকা করে ক্ষতিপূরণ দেয়ার আশ্বাস দিলে সকাল ৯টার দিকে এলাকাবাসী অবরোধ তুলে নেয়।
এব্যপারে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক সম্প্রসারণ কাজে নিয়োজিত ইনফ্রাটেক কনস্ট্রাকশন কোম্পানীর মহা ব্যবস্থাপক অলক বড়–য়া জানান, নিহতের পরিবার ও ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীদেরকে ক্ষতিপূরণ দেওয়া হবে। আহতদের চিকিৎসার ব্যায় আমরাই চালাবো।
শ্রীপুর ফায়ার সার্ভিস এন্ড সিভিল ডিফেন্স স্টেশনের স্টেশন অফিসার তাশারফ হোসেন জানান, আগুনে কিছু সব্জী দোকানসহ প্রায় ৮০টি ক্ষুদ্র দোকানপাট, একটি ছাপড়া মসজিদ ও ঘর পুড়ে গেছে। এতে প্রাথমিকভাবে ক্ষয়-ক্ষতি ধরা হয়েছে ২০ লাখ টাকা। শ্রীপুর ও গাজীপুর ফায়ার সার্ভিসের চারটি ইউনিট দুই ঘন্টা চেষ্টা করে রাতেই ওই আগুন নেভাতে সক্ষম হয়।