দৈনিক বার্তা: রাঙামাটি পার্বত্য জেলায় স্ট্রবেরি চাষে উজ্জ্বল সম্ভাবনা রয়েছে। কৃষিবিদরাও স্ট্রবেরি চাষ নিয়ে বেশ আশাবাদী। স্ট্রবেরি চাষে স্থানীয়রা আর্থিকভাবে লাভবান হওয়ায় চাষিরা উৎসাহিত হয়ে উঠছেন।ভেদভেদীর নতুন পুলিশ লাইন সুখী নীলগঞ্জ এলাকায় গড়ে তুলেছে নানা রকম ফলদ, বনজ,ঔষধী গাছের বাগান। বিভিন্ন জাতের গাছের পাশ্ববর্তী জায়গায় স্ট্রবেরি ফলের চাষ করা হয়েছে।
রাঙামাটির পুলিশ পরিদর্শক মোঃ আবুল কালাম জানান, প্রথমে ছোট পরিসরে স্ট্রবেরি ফলের চাষ করেছেন। স্ট্রবেরির ভাল ফলন পাওয়ায় আরো বড় করে চাষ করা হবে। রাঙামাটি কৃষি বিভাগ থেকে স্ট্রবেরি চাষ পদ্ধতি সম্পর্কে প্রয়োজনীয় পরামর্শ দিয়েছেন। রাঙামাটি জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক নরেশ চন্দ্র বারই জানান, রাঙামাটিতে স্ট্রবেরি চাষে উজ্জ্বল সম্ভাবনা রয়েছে। কম খরচে একটু যত নিলে ভাল ফল পাওয়া সম্ভব।
স্ট্রবেরি চাষ সম্পর্কে রাঙামাটি উপ-সহকারী কৃষি অফিসার মোঃ হারুনুর রশীদ ভূঁইয়া জানায়, রাঙামাটির সুখী নীলগঞ্জ এলাকায় করা স্ট্রবেরির চাষ এর রোগ বালাই দমন সহ বিভিন্ন বিষয়ে পরামর্শ দিয়েছেন। রাঙামাটির পাহাড়ের মাটি স্ট্রবেরি চাষের জন্য ভাল ও উপযোগী। একটু যতœ নিয়ে স্ট্রবেরি চাষ করলে কৃষকরা কম পুঁজিতে অধিক লাভ করতে পারবে।
রাঙামাটি সদরের উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা শান্তিময় চাকমা জানান,স্ট্রবেরি আকর্ষণীয় বর্ণ ও পুষ্টিমানের জন্য সমাদৃত। কম খরচে এর চাষ করা সম্ভব হলেও এটি ভালো মূল্যে বিক্রি করা যায়। পাকা ফল দেখতে লাল স্বাদে ও গন্ধে অতুলনীয়। স্ট্রবেরি রাঙামাটির পাহাড়ে চাষোপযোগী উচ্চফলনশীল জাত।
বনরূপা বাজারে আসা বিক্রেতা জানায়, পাকা লাল স্ট্রবেরি বিক্রি করে লাভবান হয়েছেন। এই ফল বিক্রি করে পরিবারের আয় করে ভূমিকা রাখা সম্ভব হচ্ছে। স্ট্রবেরি ফল খেতে রসালো ও সুস্বাদু। প্যাকেট আকারে ফল বিক্রি করতে দেখা যায়।
সাপছড়ি ইউনিয়নের শুক্কুরছড়ি ব¬কে রাঙামাটি সদরের উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা শান্তিময় চাকমা আরো জানায় তাঁর পরামর্শে পরীক্ষামূলকভাবে সোনামনি চাকমা, রূপায়ন চাকমা, সোনামনি চাকমা, রূপান্তর চাকমাসহ কয়েকজনে প্রায় আট শতক জায়গায় স্ট্রবেরি চাষ করেছে। স্ট্রবেরি চাষ করে তারা ভাল ফল পেয়েছে। সোনামনি চাকমা স্ট্রবেরি সম্পর্কে জানায়, এবছর বাণিজ্যিকভাবে চারা উৎপাদনে আগ্রহী। পলি ব্যাগে স্ট্রবেরির চারা সংগ্রহ শুরু করবে। এছাড়া আরো বড় পরিসরে স্ট্রবেরি চাষের ব্যাপারে জানান।
কৃষি অফিসের তথ্য মতে, বারি স্ট্রবেরি-১ বাংলাদেশের সর্বত্র চাষোপযোগী একটি উচ্চফলনশীল জাত। সেপ্টেম্বরের প্রথম সপ্তাহে রোপণ করা হলে নভেম্বরের মাঝামাঝি সময়ে গাছে ফুল আসতে শুরু করে এবং ডিসেম্বর থেকে মার্চ পর্যন্ত ফল আহরণ করা যায়। গাছপ্রতি গড়ে ৩২টি ফল হয়, যার গড় ওজন ৪৫০ গ্রাম। রবি মৌসুম স্ট্রবেরি চাষের উপযোগী।
বৃষ্টির পানি জমে না এ ধরনের সুনিষ্কাশিত উর্বর দো-আঁশ থেকে বেলে দো-আঁশ মাটি স্ট্রবেরি চাষের জন্য উত্তম। আগের বছরের লাগানো গাছ নষ্ট না করে জমি থেকে তুলে জৈব পদার্থ সমৃদ্ধ হালকা ছায়াযুক্ত স্থানে রোপণ করতে হবে। গোবর মাটি দিয়ে ভরা পলিথিন ব্যাগে গাছ লাগাতে হবে। স্ট্রবেরি চাষে পর্যাপ্ত পানি সেচ দেয়া লাগে। জলাবদ্ধতা আছে এমন জায়গায় এই গাছ লাগানো যায় না। স্ট্রবেরির গাছ প্রখর সৌর তাপ এবং ভারি বর্ষণ সহ্য করতে পারে না। এজন্য মার্চ-এপ্রিল মাসে হালকা ছায়ার ব্যবস্থা করতে হবে। নতুবা ফল আহরণের পর মাতৃগাছ তুলে টবে রোপণ করে ছায়ায় রাখতে হবে। ফল আহরণ শেষ হওয়ার পর সুস্থ-সবল গাছ তুলে পলিথিন ছাউনির নিচে রোপণ করলে মাতৃ গাছকে খরতাপ ও ভারি বর্ষণের ক্ষতি থেকে রক্ষা করা যাবে।
কৃষি তথ্য সার্ভিস এর তথ্য মতে, সেপ্টেম্বরের প্রথম সপ্তাহে রোপণকৃত বারি স্ট্রবেরি-১ এর ফল সংগ্রহ শুরু হয়ে ডিসেম্বর থেকে মার্চ পর্যন্ত চলে। ফল পেকে লাল বর্ণ ধারণ করলে ফল সংগ্রহ করতে হয়। সরাসরি মাটির সংস্পর্শে থাকলে স্ট্রবেরির ফল নষ্ট হয়ে যায়। তার জন্য চারা রোপনের ২০-২৫ দিন পর স্ট্রবেরির বেড খড় দিয়ে ঢেকে দিতে হবে। জমি সব সময় আগাছামুক্ত রাখতে হবে। বারি স্ট্রবেরি-১ এ রোগবালাই কম। ফুল আসার পর সম্পূর্ণ বেড জাল দ্বারা ঢেকে দিতে হবে।