দৈনিক বার্তা: সন্ত্রাসীদের হাতে জিম্মি হয়ে পড়েছে নড়াইল সদর উপজেলার শেখহাটি ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রামের সংখ্যালঘু মানুষ। চাঁদাবজি,ছিনতাই,মারামারি,মাদকসেবন ও জুয়ার আসর বসানোসহ নানা অপরাধমূলক কর্মকান্ডে এলাকার মানুষ অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছে।
শেখহাটি ইউনিয়নের কয়েকজন গ্রামবাসী জানান,স্থানীয় চিহ্নিত সন্ত্রাসী পঁচিশা গ্রামের আব্দুর রবের ছেলে নাজমুল হোসেন ওরফে গামার নেতৃত্বে এলাকার কিছু উঠতি সন্ত্রাসীর চাঁদাবাজি ছিনতাইসহ নানা অপকর্মে এলাকার পরিবেশ নষ্ট হচ্ছে। নাজমুল হোসেন গামা অবশ্য এসব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। তিনি বলেন,আমি ফকিরের ছেলে নই। আমার কিনে খাওয়া লাগে না। এক পর্যায়ে তিনি বলেন,যশোরে তিনবার জেল খেটেছি। বর্তমানে কোনো মামলা নেই।
শেখহাটি পুলিশ ফাঁড়ি ইনচার্জ এ এস আই মোঃ জাকারিয়া বলেন,লোকমুখে শুনেছি ওই এলাকায় গামা বাহিনী আছে। তার অত্যাচারে এলাকার মানুষ অতিষ্ঠ। কিন্তু এ পর্যন্ত কেউ কোনো অভিযোগ নিয়ে ফাঁড়িতে আসেনি। শুনেছি গামা কয়েকবার জেল খেটেছে।
পঁচিশা গ্রামের বাসিন্দা অভিমান্য রায় (৭০) জানান,রাতে আমরা (স্বামী-স্ত্রী) বারান্দায় ঘুমাই। কয়েক দিন আগে ( ২৮ মার্চ) মেলা রাত হলি (গভীর রাতে) ১০ থেকে ১২ জন পার্টির লোক কোয়ে (পরিচয় দিয়ে) আমাগে বুয়ির (বুকের) ওপর বন্দুক আর গলায় গাছি দা ধরে দুই লাখ টাকায় চাঁন্দা চায়। তাগে মুখ বান্দা ছেলো। চান্দা দিতি না পারলি পরের দিন সয়ালে পাশের কাইজদাহ গ্রামের হালিম ব্যাপারী গুয়ালঘর থেয়ে আমার ধামড়া গরুডা খুলে নিয়ে যায়। গামার ভয়ে আমার ছলডা বাড়ি ছাড়ে চলে গেছে। জানতে চাইলে হালিম ব্যাপারী দাবি করেন,অভিমান্যর ছেলে শ্যামলের কাছ থেকে ৩০ হাজার টাকা দিয়ে গরুটি কিনেছেন। বিক্রি করে দুই হাজার টাকা লাভও করেছেন।
রবীন রায় (৪৫) বলেন,গত মাসের মাঝামাঝি সময়ে(মার্চ মাসে) গামা আমার কাছে ২০ হাজার টাকা চাঁদা চায়। চাঁদা দিতে অস্বীকার করলে সে কোমর থেকে মেশিন (অস্ত্র) বের করে। ভয়ে বাড়ি ছেড়ে পালিয়ে যাই। একই গ্রামের বৈশিষ্ট্য রায়ের কাছে এক লাখ টাকা চাঁদা দাবি করে। তিনি ইতোমধ্যে ২২ হাজার ৫০০ টাকা দিয়েছেন। তিনি বলেন,ভাই এ কথা কাগজে লিখলি গামা আমাগে মারে ফেলবেনে। জানা গেছে,সোনা বকশির কাছে ৫০ হাজার টাকা দাবি করায় তিনি ভারতে চলে গেছেন।
স্থানীয় পঁচিশা বাজারের মুদি ব্যবসায়ী তৌহিদুর রহমান বলেন,গামার নিজের একটি সন্ত্রাসী বাহিনী আছে। কিছুদিন আগে তারা চাঁদা চেয়ে গ্রামের বিত্তশালীদের কাছে চিঠি দিয়েছে। গামার চাচা শামীম মোল্যা ইউনিয়নের ৮ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য। তার জোরেই সে নানা অপকর্ম করে থাকে। তিনি বলেন,আশপাশের কয়েকটি গ্রামের মানুষ বিশেষ করে হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষ গামা বাহিনীর অত্যাচারে অতিষ্ঠ।
সরেজমিন বিভিন্ন শ্রেণী পেশার মানুষের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে,গামা প্রতিদিন সন্ধ্যায় বাজারের হুমায়ূন কবিরের দোকানে বসে। তার সঙ্গে যোগ দেয় পঁচিশা গ্রামের সবুর শেখের ছেলে মিলন শেখ,ইব্রাহিম শেখের ছেলে দলিল শেখ,ছত্তার শেখের ছেলে আলাউদ্দীন শেখ,হুজুর আলীর ছেলে রিপন শেখ,আলাউদ্দীন শেখের ছেলে হুমায়ূন শেখ এবং কাইজদহ গ্রামের হালিম ব্যাপারী। তারা এই দোকানে বসে নানা পরিকল্পনা করে থাকে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে এলাকাবাসী জানান,চাঁদা না দেওয়ায় সন্ত্রাসী গামা তপনভাগ গ্রামের ইমরান মোল্যা এবং অমর দত্তের পানের বরজ আগুন ধরিয়ে দেয়। চাঁদা না দিলে গ্রামের হিন্দুদের ঝাড় থেকে বাঁশ কেটে নেয়। নাজিম শেখের জমি জোর করে দখল নিয়ে গামা ঘের করিছে। শেখহাটি বাজারে একটি পুলিশ ফাঁড়ি থাকলেও পঁচিশা গ্রামটি ফাঁড়ি থেকে দূরে হওয়ায় গামা দিনের বেলায় প্রকাশ্যে অস্ত্র নিয়ে ঘুরে বেড়ায়।
ইউপি সদস্য শামীম মোল্যা বলেন,গামা তার দূর সর্ম্পকীয় আত্মীয়। তিনি গামার অপকর্মের সঙ্গে জড়িত নন।
শেখহাটি ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক গোলক বিশ্বাস জানান,আওয়ামী লীগের কথিত কিছু নেতার ছত্রছায়ায় থেকে উঠতি সন্ত্রাসীরা এলাকার পরিবেশ নষ্ট করছে। ইউপি চেয়ারম্যান সেলিম গাজী বলেন,পঁচিশা,তপনভাগসহ বেশ কয়েকটি গ্রাম নড়াইল সদর উপজেলার শেষ এবং যশোর অভয়নগর উপজেলার সীমান্তবর্তী। শেখহাটি পুলিশ ফাঁড়ি ওই সকল এলাকা থেকে বেশ দূরে হওয়ায় সন্ত্রাসীরা প্রকাশ্যে ওই এলাকায় নানা অপকর্ম করে থাকে।
সদর খানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা তৈমুর ইলি বলেন,এলাকার লোকজন শুধু থানায় এসে অভিযোগ করুক। অভিযোগ পেলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।