দৈনিক বার্তা: পরিবেশবাদী সংগঠন বেলার নির্বাহী পরিচালক এডভোকেট সৈয়দা রেজওয়ানা হাসানের স্বামী আবু বক্কর সিদ্দিকীকে অপরহরন করেছে দুবৃত্তরা। বুধবার বিকেল তিনটায় ঢাকা-নারায়নগঞ্জ লিংক রোডের দেলপাড়া এলাকার একটি পেট্রোল পাম্পের সামনে থেকে তাকে অপহরন করা হয়েছে।এসময় অপহৃত আবু বক্কর সিদ্দিক তারি ব্যাক্তিগত গাড়ীতে নারায়নগঞ্জ থেকে ঢাকায় ফিরছিলেন। দেলপাড়া এলাকায় তার গাড়িটি পৌছার পর ৮/৯জনের অপহরনকারী একটি দল নীল রংয়ের মাইক্রোবাস পেছন থেকে এসে তার গাড়ীতে ধাক্কা মারে।
এসময় গাড়ীর ড্রাইবার রিপন গাড়ীটি থামিয়ে অপহরনকারীদের কাছে গাড়ীতে ধাক্কা মারার কারন জানতে চাইলে তারা তাকে পিস্তল ঠেকিয়ে ও চোখে মলম লাগিয়ে অজ্ঞান করে ফেলে। এসময় অপহরনকারীরা পিস্তল ঠেকিয়ে গাড়ী থেকে আবু বক্কর সিদ্দিককে নামিয়ে নিয়ে তারা সাথে নিয়ে আসা গাড়ীতে তুলে ঢাকার দিকে নিয়ে যায়। এদিকে খবর পেয়ে পুলিশ সুপার সৈয়দ নুরুল ইসলাম এবং বেলার নির্বাহী পরিচালক সৈয়দ রেজওয়ানা হাসান ঘটনা স্থলে উপস্থিত হয়। পুলিশ সুপার সৈয়দ নুরুল ইসলাম জানান, তারা অপহরনের কারন এখনও জানতে পারেনি। তারা তাকে উদ্ধারের চেষ্ঠা চালাচ্ছে।
এদিকে, বেলার নির্বাহী পরিচালক সৈয়দ রেজওয়ানা হাসান জানান পুলিশ প্রশাসনের কাছে তার দাবী তিনি তার স্বামীকে ফেরৎ চান। সৈয়দা রিজওয়ানা জানান, তাঁর স্বামী নারায়ণগঞ্জে অবস্থিত রপ্তানিমুখী পোশাক কারখানার একজন উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা। তিনি বেলা আড়াইটার দিকে প্রাইভেট কারে করে নারায়ণগঞ্জ থেকে ঢাকায় ফিরছিলেন। পথে ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ লিংক রোডে ফতুল্লার ভূঁইয়া ফিলিং স্টেশনের সামনে একটি মাইক্রোবাস পেছন থেকে প্রাইভেট কারটিকে ধাক্কা দেয়। এ সময় আবু বকর সিদ্দিক গাড়ি থেকে নামলে দুর্বৃত্তরা তাঁকে মাইক্রোবাসে উঠিয়ে নিয়ে যায়।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে ফতুল্লা মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আখতার হোসেন জানান, খবর পেয়ে তাঁরা ঢাকা-সিলেট ও ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের প্রতিটি পুলিশ ফাঁড়িতে সতর্ক থাকার জন্য ওয়্যারলেস বার্তা পাঠিয়েছেন। কী কারণে আবু বকর সিদ্দিককে অপহরণ করা হয়েছে, পুলিশ তা বলতে পারছে না।
প্রাইভেট কারটির চালক রিপন জানান, নোয়াহ ব্র্যান্ডের নীল রঙের মাইক্রোবাসে করে সাত-আটজন অস্ত্রধারী ব্যক্তি আবু বকর সিদ্দিককে অস্ত্রের মুখে নিয়ে যায়। ওই ব্যক্তিদের চুল ছোট ও পরনে টি-শার্ট ছিল। আমাকে বাঁচান, আমাকে বাঁচান’ বলে আবু বকর চিত্কার করলেও অস্ত্রধারীদের ভয়ে কেউ সামনে আসার সাহস করেনি।
সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বিকেল সোয়া চারটার দিকে নারায়ণগঞ্জ পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে যান। সাংবাদিকদের তিনি বলেন, তাঁর জানা মতে তাঁর স্বামীর কোনো শত্রু নেই। তিনি বলেন, তাঁদের এমন কোনো অর্থবিত্ত নেই যে কেউ মুক্তিপণের জন্য তাঁকে অপহরণ করবে। তিনি বলেন, আমার ধারণা, আমার পেশাগত কারণে ক্ষুব্ধ কোনো গোষ্ঠী অপহরণ করতে পারে।
বাংলাদেশ পরিবেশ আইনজীবী সমিতির (বেলা)নির্বাহী পরিচালক রিজওয়ানার স্বামীর পোশাক কারখানা রয়েছে ফতুল্লায়।
বেলার আইনজীবী সাইদ আহমেদ সৌরভ বলেন,পৌনে ৩ দিকে জালকুড়ি এলাকায় আবু বকর সিদ্দিকের গাড়িকে নীল রংয়ের একটি মাইক্রোবাস আঘাত করে। কী ক্ষতি হয়েছে দেখার জন্য চালক রিপন এবং তিনি গাড়ি থেকে নামামাত্রই ওই মাইক্রোবাসে থাকা দুর্বৃরা চালকের মাথায় পিস্তল দিয়ে আঘাত করে এবং চোখে মরিচের গুঁড়া ছিটিয়ে আবু বকর সিদ্দিককে মাইক্রোবাসে উঠিয়ে নিয়ে দ্রুত চলে যায়।
বেলার আরেক আইনজীবী ইকবাল কবির জানান, রিপনের কাছে খবর পেয়ে তারা ঘটনাস্থলে ছুটে যান।রিপনকে উদ্ধৃত করে তিনি বলেন, অপহরণকারীরা ৭/৮জন ছিল এবং তারা আবু বকর গাড়িতে তুলে ঢাকার দিকে চলে যায়।বিষয়টি স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী, পুলিশের মহাপরিদর্শক, র্যাবের মহাপরিচালককে জানানো হয়েছে বলে সাঈদ জানান।কী কারণে এই অপরহরণ ঘটেছে, তাৎক্ষণিকভাবে তা জানা যায়নি।ম্যাগসেসে পুরস্কাজয়ী রিজওয়ানা পরিবেশ ধ্বংসের বিভিন্ন কার্যক্রমের বিরুদ্ধে সক্রিয়।