দৈনিক বার্তা: চাঞ্চল্যকর ১০ ট্রাক অস্ত্র মামলায় চার আসামির আপিল শুনানির জন্য গ্রহণ করেছেন হাইকোর্ট।ওই চার আসামি হলেন সাবেক শিল্পমন্ত্রী ও জামায়াতে ইসলামীর আমির মতিউর রহমান নিজামী, প্রতিরক্ষা গোয়েন্দা মহাপরিদপ্তরের (ডিজিএফআই) সাবেক মহাপরিচালক মেজর জেনারেল (অব.) রেজ্জাকুল হায়দার চৌধুরী, জাতীয় নিরাপত্তা গোয়েন্দা সংস্থার (এনএসআই) সাবেক মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) মো. আবদুর রহীম ও উপপরিচালক মেজর (অব.) লিয়াকত হোসেন।
বুধবার বিচারপতি মো.রেজাউল হক ও বিচারপতি গোবিন্দ চন্দ্র ঠাকুরের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ আপিল শুনানির জন্য গ্রহণ করেন।আদালতে মতিউর রহমান নিজামী পক্ষে ছিলেন আইনজীবী খন্দকার মাহবুব হোসেন ও ইমরান এ সিদ্দিকী। অপর তিনজনের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী মো. আহসান।
ইমরান এ সিদ্দিকী বলেন, বিশেষ ক্ষমতা আইনে ও অস্ত্র আইনে মতিউর রহমান নিজামীর বিরুদ্ধে রায় দিয়েছিলেন নিম্ন আদালত। অস্ত্র আইনের মামলায় তাঁকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছিল এবং বিশেষ ক্ষমতা আইনে তাঁকে মৃত্যুদণ্ড ও পাঁচ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়েছিল। হাইকোর্ট দুই মামলায় করা আপিল শুনানির জন্য গ্রহণ করেছেন। একই সঙ্গে জরিমানার আদেশ স্থগিত করেছেন।
গত ৩০ জানুয়ারি চট্টগ্রামে ১০ ট্রাক অস্ত্র চোরাচালান মামলায় সাবেক শিল্পমন্ত্রী ও জামায়াতে ইসলামীর আমির মতিউর রহমান নিজামী, সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুত্ফুজ্জামান বাবরসহ ১৪ জনকে ফাঁসির আদেশ দেন আদালত। মৃত্যুদণ্ডের পাশাপাশি প্রত্যেক আসামিকে পাঁচ লাখ টাকা করে জরিমানা করা হয়েছে। এ ছাড়া অস্ত্র আটক মামলার দুটি ধারায় এই ১৪ জনকে যাবজ্জীবন ও সাত বছর কারাদণ্ডের আদেশ দেওয়া হয়েছে। ঘটনার প্রায় পৌনে ১০ বছর পর এ মামলার রায় ঘোষণা করা হয়।
অস্ত্র চোরাচালান মামলায় মৃত্যুদণ্ডাদেশ পাওয়া অন্য আসামিরা হলেন ভারতের বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠন উলফার সামরিক কমান্ডার পরেশ বড়ুয়া,সাবেক শিল্পসচিব নুরুল আমিন, প্রতিরক্ষাগোয়েন্দা মহাপরিদপ্তরের ডিজিএফআইয়ের সাবেক মহাপরিচালক মেজর জেনারেল (অব.) রেজ্জাকুল হায়দার চৌধুরী, এনএসআইয়ের সাবেক মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) মো. আবদুর রহীম, পরিচালক উইং কমান্ডার (অব.) সাহাবউদ্দিন আহাম্মদ, উপপরিচালক মেজর (অব.) লিয়াকত হোসেন, এনএসআইয়ের মাঠ কর্মকর্তা আকবর হোসেন খান, সিইউএফএলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মহসিন উদ্দিন তালুকদার, মহাব্যবস্থাপক (প্রশাসন) কে এম এনামুল হক, হাফিজুর রহমান, দীন মোহাম্মদ ও হাজি আবদুস সোবহান। এঁদের মধ্যে পরেশ বড়ুয়া ও নুরুল আমিন পলাতক। হাজি আবদুস সোবহান জামিন ছিলেন। তবে বুধবার আদালতে হাজির ছিলেন। অস্ত্র চোরাচালান মামলায় ৩৮ জন খালাস পেয়েছেন। আসামি ছিলেন ৫২ জন।
অস্ত্র আইনের মামলায় একই ১৪ আসামিকে ১৯(এ) ধারায় যাবজ্জীবন এবং ১৯(সি) ধারায় সাত বছর কারাদণ্ডের আদেশ দেওয়া হয়েছে। এই মামলায় খালাস পেয়েছেন ৩৬ জন। আসামি ছিলেন ৫০ জন।
আদালত রায়ে উল্লেখ করেন,অস্ত্র আটক মামলায় যাবজ্জীবন কারাদণ্ড ও সাত বছরের কারাদণ্ড একইসঙ্গে কার্যকর হবে। আর আসামিদের হাজতবাস তাদের শাস্তির মেয়াদ থেকে বাদ যাবে।আর চোরাচালান মামলার রায়ে হাইকোর্টের অনুমোদন সাপেক্ষে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হবে বলে মন্তব্য করেন আদালত।
গত ৪ ফেব্র“য়ারি পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশের পর ৬ ফেব্র“য়ারি পূর্ণাঙ্গ রায়ের নথি ও ডেথ রেফারেন্স বই হাইকোর্টে পাঠানো হয়েছে। দুই মামলার রায়ের ৫১৪ পৃষ্ঠার পূর্ণাঙ্গ নথি ও ডেথ রেফারেন্স বই পাওয়ার কথা উল্লেখ করে সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্ট্রার এ কে এম শামসুল আলম জানিয়েছেন, নথিপত্র ডেথ রেফারেন্স শাখায় পাঠানো হয়েছে। পেপারবুক তৈরি করার পর এ বিষয়ে শুনানি শুরু হবে।
২০০৪ সালের ১ এপ্রিল নগরের চট্টগ্রাম ইউরিয়া সার কারখানার (সিইউএফএল)জেটিঘাটে খালাসের সময় দেশের ইতিহাসে অস্ত্রের সবচেয়ে বড় চালান আটক হয়।