দৈনিক বার্তা: আমেরিকার বাজারে বাংলাদেশী পণ্যের বিশেষ সুবিধা বা জিএসপি স্থগিত হয়ে আছে প্রায় ১০ মাস ধরে। এর ফলে ক্ষতির শিকার হচ্ছে সিরামিক এবং প্লাস্টিকসহ অন্তত এক ডজন শিল্প। আমেরিকার বাজারে এসব পণ্য এখন অনেক বেশি প্রতিযোগিতার মধ্যে পড়েছে।
আর বাংলাদেশ সরকারের বাণিজ্যমন্ত্রী বলছেন, আমেরিকার বাজারে জিএসপি সুবিধা ফিরে পেতে আগামী মঙ্গলবারের তারা একটি প্রতিবেদন সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে দেবেন।
ঢাকার পুরনো অংশের লালবাগ এলাকা। রাস্তার দু পাশে গড়ে উঠেছে অনেক শিল্প কারখানা। এখানে উৎপাদিত অধিকাংশ প্লাস্টিক পণ্যেরেই বাজার স্থানীয় পর্যায়ে।
তবে এর মধ্যে প্লাস্টিকের প্যাকেট বা হ্যাঙ্গারের মতো জিনিস, যেগুলো তৈরি পোশাকের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট, সেসব পণ্য বিদেশে রপ্তানি হয়, যার একটা বড় অংশই যায় আমেরিকায়। জিএসপি সুবিধার আওতায় এসব পণ্য আমেরিকার বাজারে কোনো ধরনের শুল্ক ছাড়াই রপ্তানি হত।
কিন্তু গত বছরের ২৪শে এপ্রিল বহুল আলোচিত রানা প্লাজা ভবন ধসের প্রেক্ষাপটে আমেরিকা সরকার ওই বছরের ২৭শে জুন এই সুবিধা স্থগিত করে। ফলে এখন আমেরিকার বাজারে সিরামিক, প্লাস্টিক, মাছ, জুতা, সবজি ও ফল থেকে প্রক্রিয়াজত পণ্যসহ অন্তত এক ডজন পণ্য রপ্তানি করতে শুল্ক দিতে হচ্ছে। যা অন্যান্য উন্নয়নশীল দেশগুলোর সঙ্গে বাংলাদেশের টিকে থাকা কঠিন করে দিচ্ছে।বাংলাদেশ প্লাস্টিক দ্রব্য প্রস্তুতকারক ও রপ্তানিকারক সমিতির সভাপতি জসিমউদ্দিন জানান, জিএসপি সুবিধা স্থগিতের কারণে আমেরিকায় আমাদের প্রায় ৩.৫ মিলিয়ন ডলারের রপ্তানি কমেছে।
”আমাদের জন্য আমেরিকার মার্কেট অত বড় না। সেখানে মূলত চীন ডমিনেট করে। তবে আমরা জিএসপির সুবিধা নিয়ে আমেরিকার বাজারটা ধরছিলাম, এগোচ্ছিলাম। কিন্তু জিএসপি স্থগিতের কারণে আমাদের সেই গ্রোথ কমে গেছে। আমরা অনেক বেশি প্রতিদ্বন্দ্বিতার মুখে পড়েছি। এতে অনেক কারখানা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। অনেক কারখানায় উৎপাদন কমে গেছে। এসব কারণে আমরা এখন নতুন বাজার খুঁজছি।”
একই অবস্থা সিরামিক শিল্পেরও। আমেরিকায় বছরে প্রায় ৮০ কোটি টাকার সিরামিক পণ্য রপ্তানি হলেও এবার ৩০ থেকে ৪০ কোটি টাকার বেশি রপ্তানি হবে না বলে জানালেন সিরামিক কারখানা মালিকদের সংগঠন-বিসিডাব্লিউএমএর মহাসচিব রিজভি-উল-কবির।
তার দাবি, সিরামিক পণ্যে লাভ কম। তাই উৎপাদন খরচের সঙ্গে অতিরিক্ত ২৫% শুল্ক যোগ করার পরে পণ্যের যা দাম দাঁড়ায়, তা যে কোনো কোম্পানির জন্যই বহন করা কঠিন।
এ অবস্থায় আমেরিকায় চীন ও ইন্দোনেশিয়ার মতো দেশগুলোর কারণে বাংলাদেশের বাজার হাতছাড়া হয়ে যাচ্ছে।
মি. কবির বলেন, ”সিরামিক খুব লাভজনক পণ্য নয়। তারউপরে ২৫ শতাংশ ডিউটি দিয়ে, দাম কমিয়ে অন্য কোম্পানির সঙ্গে প্রতিযোগিতা করে ঢোকা খুবই কঠিন। আসলে ইউরোপে অর্থনৈতিক মন্দার কারণে বাংলাদেশের ব্যবসায়ীরা আমেরিকার দিকে ঝুঁকছিলেন।”
”কিন্তু এখন আমরা দেখছি দামের কারণে অনেক কোম্পানিই আমাদের সঙ্গে চুক্তি হাফ ডান অবস্থায় রেখে দিচ্ছে। দাম দর মিলছে না।”
বাংলাদেশী পণ্যের জিএসপি সুবিধা ফিরিয়ে দিতে আমেরিকা যে ১৬টি শর্ত দিয়েছিল, এরই মধ্যে তার অধিকাংশই পূরণ করা হয়েছে বলে জানালেন সরকারের বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ।
আগামী ১৫ এপ্রিল অর্থাৎ মঙ্গলবারেই জিএসপি ফিরে পাবার ব্যাপারে একটা প্রতিবেদন আমেরিকার সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে দেয়া হবে বলে তিনি জানান।
মি. আহমেদ জানান, ”আজকেই আমরা মন্ত্রণালয়ে উচ্চপর্যায়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করেছি। ২০১৩ সালের এ্যাকশন প্ল্যান অুনযায়ী আমেরিকা যে ১৬টি শর্ত দিয়েছিল, তার অধিকাংশই আমরা পূরণ করেছি। এর মধ্যে কিছু শর্ত আছে দীর্ঘমেয়াদী, যেগুলো পূরণ করতে সময় লাগবে। আমরা আগামী ১৫ তারিখেই রিপোর্ট দিয়ে দেব এবং আমরা মনে করি এই রিপোর্ট পাঠাবার পরে আমাদের জিএসপি না দেবার আর কোনো কারণ থাকতে পারে না।”
বাংলাদেশ রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর তথ্য মতে, আমেরিকায় প্রতি বছর প্রায় ৫০০ কোটি ডলারের পণ্য রফতানি হয়। তবে সবচেয়ে বড় রপ্তানি পণ্য পোশাক শিল্পে জিএসপি সুবিধা নেই।
ফলে আমেরিকার বাজারে জিএসপি স্থগিতের কারণে দেশের রপ্তানি আয়ের যে ক্ষতি হচ্ছে, টাকার হিসাবে তা হয়তো খুব বেশি নয়। কিন্তু জিএসপি সুবিধা স্থগিত করায় সবচেয়ে বেশি হুমকিতে পড়েছে বিদেশে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি।
কারণ আমেরিকার দেখাদেখি ইউরোপের দেশগুলোও যদি বাংলাদেশী পণ্যের জিএসপি সুবিধা স্থগিত করে, সেটি অনেক বড় সমস্যার সৃষ্টি করবে, আর ব্যবসায়ীদের ভয়টা সেখানেই।
বিবিসি বাংলা