‘সব কোর্টই মুজিব কোটের পকেটে বন্দী’ বক্তব্যের ব্যাখ্যা দিয়েছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়। আজ রোববার জাতীয় প্রেসক্লাবে প্রয়াত সাংবাদিক এবিএম মূসার স্মরণসভায় তিনি এই ব্যাখ্যা দেন।
গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, ‘আমি এটা ডকুমেন্টস দিয়ে প্রমাণ করতে পারব না কোর্ট মুক্ত না বন্দী। যাহা নথি দ্বারা প্রমাণ করতে পারব না, সব সময়ই যে তা মিথ্যা হবে তা নয়। সেটা বললাম কেন? এর উত্তরে বলব—ভগবান বা আল্লাহকে কি নথি দ্বারা প্রমাণ সম্ভব? কিন্তু আমরা তাঁকে কেউ অবিশ্বাস করি না।’
গয়েশ্বর চন্দ্র বলেন, ‘“বিচারপতি তোমার বিচার করবে যারা, আজ জেগেছে এই জনতা”—এই গান আমরা বহু বছর ধরে শুনে আসছি। বর্তমান পরিস্থিতিতে ওই গানের সুরে যদি সুর মিলাই, তাহলে কি আমাদের খারাপ বলা হবে? আর সমালোচনা মানে তো শুধু বিরুদ্ধে বলা না। সে আপনাদের বন্ধুও হতে পারে, শত্রু নয়।’
গত ৬ এপ্রিল জাতীয় প্রেসক্লাবে এক অনুষ্ঠানে গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেছিলেন ‘জজ কোর্ট, হাইকোর্ট, সুপ্রিম কোর্ট—সব কোর্টই এখন মুজিব কোটের পকেটে বন্দী। এই পকেট ছিঁড়তে না পারলে কেউ ন্যায় বিচার পাবে না।’ আদালত নিয়ে বিরূপ মন্তব্য করায় পরের দিন সোমবার গয়েশ্বর চন্দ্র রায়সহ তিন জনের বিরুদ্ধে রুল দেয় আদালত। বিচারপতি কাজী রেজাউল হক ও বিচারপতি এ বি এম আলতাফ হোসেন সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ স্বতঃপ্রণোদিত ওই রুলে আগামী দুই সপ্তাহের মধ্যে তাদের জবাব দিতে বলেন।
গয়েশ্বর চন্দ্র রায় আরও বলেন, ‘মূসা ভাই মুজিব কোট পরা কাউকে দেখলেই “তুই চোর!” বলতে বলেছিলেন। আমরা বলব, ওই চোরদের আমরা ধরব।’ তিনি বলেন, ‘আওয়ামী লীগ নিজেরটা বোঝে, অন্যেরটা বোঝে না। এমনকি নিজের দলের কেউ সমালোচনা করলেও তাকে তারা ছাড়ে না। এই যে ইমরান এইচ সরকারকে ফেলে দিল; কালকেই যদি ইমরান সরকারকে গ্রেপ্তার করা হয় তাহলে অবাক হওয়ার কিছু থাকবে না।’
সংসদ ভবনের দক্ষিণ প্লাজায় এবিএম মূসার জানাজা না করা এবং সংসদে শোক প্রস্তাবে তাঁর নাম না ওঠায় সরকারের কঠোর সমালোচনা করেন বিএনপির এই নেতা। তিনি বলেন, মানুষ মরণোত্তর পুরস্কার পায়। আর মূসা সাহেব এই সরকারের কাছে মরণোত্তর তিরস্কার পেলেন।
স্মরণসভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তারেক রহমান প্রসঙ্গে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য এমাজউদ্দীন আহমদ বলেন, ‘সংসদে একজন অনুপস্থিত ব্যক্তি, যাঁর সংসদে উত্তর দেওয়ার ক্ষমতা নেই; কোন বিধি অনুসরণ করে তাঁকে গালিগালাজ করা হলো? বিষোদগার করা হলো?’ তিনি ব্যাখা দেন, ‘২৬ মার্চ নিজেকে রাষ্ট্রপতি হিসেবে জিয়াউর রহমান স্বাধীনতার ঘোষণা দেন। কিন্তু পরে বুঝতে পারেন, মানুষ এটা সামরিক রীতি মনে করতে পারে। তাই তিনি ২৭, ২৮ ও ২৯ মার্চ শেখ মুজিবুর রহমানের নামে ঘোষণা দেন। ’৭১ সালের ১১ এপ্রিল তাজউদ্দীন আহমদ একটি বক্তব্যে বলেন—বাংলাদেশের চট্টগ্রাম ও নোয়াখালী জেলায় একটি প্রশাসনিক ব্যবস্থা গড়ে উঠেছে। পরে ১৭ এপ্রিল অস্থায়ী সরকার গঠিত হলে শেখ মুজিব অনুপস্থিত থেকে রাষ্ট্রপতি হন।’
ডেমোক্রেটিক মুভমেন্ট নামের একটি সংগঠনের আয়োজনে স্মরণসভা আরও বক্তব্য দেন এলডিপির যুগ্ম সম্পাদক শাহাদাত হোসেন ওরফে সেলিম, জাতীয় প্রেস ক্লাবের সভাপতি কামালউদ্দিন সবুজ, বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের (একাংশ) সভাপতি রুহুল আমিন গাজী প্রমুখ।