দৈনিক বার্তা: বাঙালির প্রাণের উৎসবের দিন আজ। আজ ১৪২১ সালের প্রথম দিন : পহেলা বৈশাখ। শুভ নববর্ষ! বছরের প্রথম দিনটি বাঙালিরই শুধু নয়- বাংলা ভাষাভাষী আদিবাসী ও নৃতাত্ত্বিক জনগোষ্ঠী, ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে প্রতিটি মানুষের জীবন-জগতে স্বপ্নময় নতুন বছরের শুভ সূচনা ঘটায়। তারা উদ্দীপ্ত হয় শ্রুত-অশ্রুত উচ্চারণে। জাতীয় কবি নজরুলের ভাষায়- ‘ওই নতুনের কেতন ওড়ে/কালবোশেখির ঝড়/তোরা সব জয়ধ্বনি কর…।’ নতুনের কেতন ওড়ে এ বৈশাখেই। বৈশাখের প্রথম দিবসটি আবহমানকাল থেকেই আমাদের সত্তায়, চেতনায় ও অনুভবের জগতে এক গভীরতর মধুর সম্পর্ক নিয়ে বিরাজ করছে। পহেলা বৈশাখ পুরনো জীর্ণকে ঝেড়ে ফেলে আমাদের যাপিত জীবনে নতুন সম্ভাবনা ও নতুন প্রত্যাশা জাগিয়ে তুলতেই শুধু নয়, অন্যায়ের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে এবং সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতিতে একাকার হওয়ার প্রেরণাও জোগায়। তাই পহেলা বৈশাখই হচ্ছে বাঙালির জীবনে সবচেয়ে বড় অসাম্প্রদায়িক সর্বজনীন উৎসব। বাংলা ও বাঙালির লোকজ সংস্কৃতির মূল বিষয়টি হল, উৎসবের মধ্য দিয়ে আনন্দের বহিঃপ্রকাশ। সে উৎসবের মধ্য দিয়েই প্রকাশ পায় বাঙালি জাতির হাজার হাজার বছরের ইতিহাস, লোকজ ঐতিহ্য ও গৌরব।
ভাষাভিত্তিক অহংবোধে বাঙালি জাতি তার জন্মভূমি, মাতৃভাষা ও বাঙালি সংস্কৃতির চিরায়ত ধারাবাহিকতাতেই বৈশাখে প্রাণের উৎসবে মেতে ওঠে। শত দুঃখ, কষ্ট, অভাব, অস্থিরতা, রাজনৈতিক ডামাডোল আর বিপর্যয়কে পায়ে ঠেলে বাঙালি তার ঐতিহ্যের স্মারক হিসেবে প্রতিটি বৈশাখে নানা রূপে আনন্দের বহিঃপ্রকাশ ঘটায়।
এদিন তারা শুভকর বিষয়গুলো অর্জনের শপথ নেয়। যা কিছু অমানবিক তার বিনাশ কামনায় বৈশাখকে বলে- ‘জাগ্রত করো, উদ্যত করো, নির্ভয় করো হে।’ নববর্ষের প্রথমদিনে গ্রামে গ্রামে বসে মেলা, হয় পুতুল নাচ। মেলায় বাজে বাঁশের অথবা পাতার বাঁশি, বাজে ঢোলক, একতারা। বিক্রি হয় পুতির মালা, রঙিন চুড়ি, ঝিনুক ও মাটির গহনা, তালের পাখা, মাটির পুতুল ও দৃষ্টিনন্দন পটারি। মেলায় পাওয়া যায় জিলাপি, খৈ, মোয়া, মুড়কি, বাতাসা আরও কত কি। দোকানে দোকানে উদযাপিত হয় হালখাতার নানা অনুষ্ঠান। প্রাচীন লোক সংস্কৃতির সঙ্গে ইদানীং এই বৈশাখী উৎসবে যোগ হয়েছে নানা আধুনিকতা ও বৈচিত্র্যময় জিনিসপত্র। আয়োজন করা হয় মঙ্গলশোভাযাত্রাসহ বিচিত্র ও বর্ণাঢ্য সব অনুষ্ঠানের। নাচ, গান, ভাওয়াইয়া, ভাটিয়ালি, জারি, সারি, পল্লীগীতি, লোকনৃত্য, নৃত্যনাট্য, আবৃত্তি, আলোচনা, প্রদর্শনী আর ইলিশ-পান্তা খাওয়ার ধুমসহ কত কি-ই না হয় এই বৈশাখে। চৈত্রের প্রখর খরতাপে ঝলসানো আর লু হাওয়ার মতো উথাল-পাথাল বাউলা বাতাসে মহা ত্যক্তবিরক্ত মানুষের মধ্যে আনন্দের বহিঃপ্রকাশ যে কতভাবে হতে পারে, বৈশাখ তার জ্বলন্ত উদাহরণ।
চৈত্রসংক্রান্তির ইতিহাস প্রায় দেড় হাজার বছরের পুরনো। কিন্তু বাংলা সন বা পহেলা বৈশাখ উদযাপনের ইতিহাস তত প্রাচীন নয়। মোগল সম্রাট মহামতি আকবরই ফসল কাটার মৌসুমে খাজনা আদায়ের সুবিধার্থে বাংলা সনের প্রবর্তন করেছিলেন। আর এই দুরূহ কাজটি সম্পাদনের দায়িত্ব দিয়েছিলেন তৎকালীন সময়ের সাহিত্য ও সংস্কৃতির সুপণ্ডিত, বিশিষ্ট জ্যোতির্বিজ্ঞানী, সম্রাট আকবরের অন্যতম অমাত্য আমির ফতেহউল্লাহ সিরাজীকে। তিনিই তৎকালীন বাংলার কৃষক সমাজের কৃষি উৎপাদনের মৌসুম তথা ফসল ঘরে তোলার সময়টাকে গুরুত্ব দিয়ে হিজরি সন ও শকাব্দের সঙ্গে সৌর সন তথা খ্রিস্টাব্দের সমন্বয় করে বঙ্গাব্দের প্রবর্তন করেন। সেই হিসাবে ইংরেজি ১৫৫৬ সালের ১১ এপ্রিল বাংলা সনের সূচনা। ওই সময় এই বাংলা সনকে বলা হতো ‘ফসলি সন’। এতে মোগল সম্রাটদের খাজনা আদায়ের সুবিধার পাশাপাশি বাঙালি পেয়ে যায় নিজস্ব বর্ষপঞ্জিও। পরবর্তী সময়ে চান্দ্রমাস অনুযায়ী হিজরি সন ও গ্রেগরিয়ান ক্যালেন্ডার অনুযায়ী ইংরেজি সনসহ নানা হিসাব-নিকাশ করে ১৪ এপ্রিল থেকেই পহেলা বৈশাখ উদযাপনের ধারা সূচিত হয়। তখন হাতে লেখা পঞ্জিকার প্রচলন থাকলেও প্রথম বাংলা মুদ্রিত পঞ্জিকা প্রকাশিত হয় ১৮১৮ সালে। ১৩৫ পৃষ্ঠার এই পঞ্জিকার প্রকাশক ছিলেন শ্রী রামহরি।
ইউরোপে প্রথম ১৪৫৭ সালে এবং ইংল্যান্ডে ১৪৯৭ সালে পঞ্জিকা মুদ্রিত হয়। ইংরেজরা ভারতবর্ষ দখলের পর তাদের মুদ্রিত এবং ভারতে হাতে লেখা পঞ্জিকার সমন্বয় করে নদীয়ার রাজা কৃষ্ণচন্দ্র তার সভাসদ ও পণ্ডিতদের ডেকে পঞ্জিকার সংস্কার করেন। পরবর্তীকালে হিজরি সনের আদলে মুসলমানরাও ১৮৯৯ সালে মোঃ রেয়াজউদ্দিনের সম্পাদনায় ২৭২ পৃষ্ঠার একটি মুসলমানি পঞ্জিকা প্রকাশ করেন। সে সময়কার বাংলা পঞ্জিকার প্রথম সংস্কার করেছিলেন ভাষা বিশেষজ্ঞ ও সুপণ্ডিত অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ শহীদুল্লাহ ১৯৬০ সালে। যা পরবর্তীকালে ১৯৯৪-৯৫ সালে বাংলা একাডেমি আরও সংস্কার ও সংকলিত করে। এখন বাংলাদেশে সেটাই সর্বত্র ব্যবহার হচ্ছে।
ব্রিটিশ শাসনামলে বাংলা নববর্ষ উদযাপনে কোনো সমস্যা না হলেও পাকিস্তান আমলে বাঙালির এই প্রাণের উৎসবে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছিল স্বৈরশাসক আইয়ুব সরকার। আইয়ুব খান ও মোনেম খানরা এ সময় রবীন্দ্রসঙ্গীত চর্চাকে হিন্দুয়ানি ও মুসলিমবিদ্বেষী বলে প্রচারণা চালায়। এরই একপর্যায়ে তখন রবীন্দ্র চর্চা প্রায় নিষিদ্ধ হয়ে যায়। নিষিদ্ধ হয়ে যায় বেতার ও পরবর্তীকালে টেলিভিশনে রবীন্দ্রসঙ্গীতও। ওই সময় ঘরোয়া অনুষ্ঠান ছাড়া কোথাও রবীন্দ্রসঙ্গীত শোনা যেত না। সুস্থ সংস্কৃতি চর্চার এমনই এক শোচনীয় ও কঠিন মুহূর্তে সে সময়কার সাহসী সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব ওয়াহিদুল হক ও সানজিদা খাতুনের নেতৃত্বে সমমনারা মিলিত হয়ে বৈশাখ উদযাপনের সিদ্ধান্ত নেন। ওই সিদ্ধান্তের পরিপ্রেক্ষিতেই ইংরেজি ১৯৬৭ সালের পহেলা বৈশাখ রমনা বটমূলে ছায়ানটের বর্ষবরণ অনুষ্ঠান আয়োজন করা হয়। সামরিক শাসকের রক্তচক্ষু উপেক্ষা করে ছায়ানট সেই যে শুরু করেছিল পহেলা বৈশাখের অনুষ্ঠান- সূর্যোদয়ে এসো এসো/তাপস নিঃশ্বাস বায়ে/মুমূর্ষুরে দাও উড়ায়ে/বছরের আবর্জনা/দূর হয়ে যাক যাক/এসো এসো-’।
স্বাগত ১৪২১! এই নতুন বছর জাতির রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, সামাজিক ও জাতীয় জীবনের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ সুফল বয়ে আনবে- এটাই হবে সমগ্র দেশবাসীর আশা-আকাক্সক্ষা। আমরা এখনও পারিনি সর্বস্তরে বাংলা ভাষা ও বাংলা সনের প্রবর্তন করতে। রাষ্ট্রীয় আচার-অনুষ্ঠান এবং সরকারি-বেসরকারি প্রতিটি অনুষ্ঠানে আমরা বাংলা সনের ব্যবহার নিশ্চিত করতে চাই। নতুন বছরের আগমনের সময়েও দেশজুড়ে চলছে নানা সংকটের ঘনঘটা। অসাম্প্রদায়িক অশুভ শক্তি আবারও মাথাচাড়া দিয়ে ওঠার চেষ্টা করছে। মুক্তিযুদ্ধের প্রকৃত ইতিহাস বিকৃত করে জনমনে বিভ্রান্তি ছড়িয়ে একটি স্বার্থান্বেষী মহল হীন উদ্দেশ্য চরিতার্থ করতে চায়। প্রকৃতির রুদ্ররূপের ঝলকানিতে প্রচণ্ড তাপদাহে গোটা দেশ জ্বলছে। তপ্ত চারদিক, তপ্ত মানুষের মনও। চারদিকেই চলছে নানা সমস্যা, সংকট আর হাহাকার। নানা নাটকীয়তা, চড়াই-উৎরাই পেরিয়ে শেষ পর্যন্ত মন্দের ভালো যে জাতীয় সংসদ নির্বাচন হয়েছে, তার মধ্য দিয়ে গোটা দেশ একটি মহাবিপর্যয় ও মহাসংকটের হাত থেকে রক্ষা পেয়েছে। উগ্র মৌলবাদ ও সাম্প্রদায়িকতার বিষবাষ্প যেভাবে ছড়িয়ে পড়েছিল, শ্বাপদেরা বিষাক্ত ফণা তুলে চারদিকে যে ভয়ংকর পরিস্থিতির সৃষ্টি করেছিল এবং দেখা দিয়েছিল চরম অস্থিতিশীলতা, তার অবসান হয়ে দেশে দৃশ্যমান শান্তি ফিরে এসেছে। এতে তৃপ্তজনরা অনেকেই আজ উচ্চারণ করবে- ‘যারা আমার আজন্ম লালিত/স্বপ্নের শেকড় উপড়ে ফেলতে চায়/আমার চেতনায়, ফসলের উৎসবে/বুনে দিতে চায় বিষবৃক্ষ/হে বৈশাখ রুখো, তাদের রুখো…’।
এরই মধ্যে পিছিয়ে পড়া ও মহাক্ষতিগ্রস্ত অর্থনীতিকে চাঙ্গা করার জন্য সরকারি-বেসরকারি সব পর্যায়েই চলছে জোর প্রচেষ্টা। সম্প্রতি অনুষ্ঠিত উপজেলা নির্বাচন নিয়েও সৃষ্টি হয়েছে নানা জোর-জবরদস্তি, জালিয়াতি ও দখলের সংস্কৃতি। নানা সমস্যা ও সংকটে শিল্প-কারখানায় উৎপাদন মারাত্মকভাবে হ্রাস পেয়েছে। বিনিয়োগ বলতে গেলে শূন্যের কোঠায়। ভাটা পড়েছে জনশক্তি রফতানিতেও। খাদ্য নিরাপত্তা কিছুটা নিশ্চিত হওয়া গেলেও কৃষক পাচ্ছে না তাদের পণ্যের ন্যায্যমূল্য। আবহাওয়ার বৈরী আচরণে গোটা দেশ ওলট-পালট হওয়ার অবস্থা। চলছে টেন্ডারবাজি, চাঁদাবাজি ও দলবাজি। ছাত্রলীগ আবারও বেপরোয়া হয়ে ওঠায় শিক্ষাঙ্গন এরই মধ্যে উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে। ক্ষতির মুখোমুখি হয়েছে শিক্ষার্থীরা। এসব সমস্যা সমাধানে সরকারের আন্তরিকতা দেখতে চায় দেশের মানুষ। নতুন বছরে এসব অশুভ শক্তির পাপ-তাপ ধুয়ে-মুছে পরিষ্কার হয়ে নবপ্রভাতের সূর্য উদিত হোক, বর্ণিল আলোকচ্ছটায় নিঃশেষ হয়ে যাক সব গ্লানি- এটাই সবার কামনা।
অসাম্প্রদায়িক চেতনার এই বৃহৎ সাংস্কৃতিক উৎসবকে স্তব্ধ করে দিতে আজ থেকে এক যুগ আগে রমনা বটমূলের ছায়ানটের অনুষ্ঠানে স্বাধীনতা ও বাঙালি সংস্কৃতিবিরোধী উগ্র সাম্প্রদায়িক মৌলবাদী ধর্মান্ধ গোষ্ঠীর জঙ্গিরা হামলা চালিয়ে কেড়ে নিয়েছিল বহু নিষ্পাপ প্রাণ। বাঙালির অস্তিত্বের ঠিকানা নববর্ষের দিনকে যারা সেদিন রক্তাক্ত করেছিল, আজও তাদের বিচার হয়নি, কোটি বাঙালির কণ্ঠে আজ ধ্বনিত হবে- ‘ওদের শাস্তি চাই।’ সেই একই উগ্র সাম্প্রদায়িক মৌলবাদী গোষ্ঠী আজও দেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রে লিপ্ত। দেশকে যে কোনো মুহূর্তে অস্থিতিশীল করার জন্য নীলনকশা তৈরি করছে তারা।
এই অশুভ শক্তির সব চক্রান্ত ব্যর্থ করে দেয়ার প্রত্যয়ে আজ রাজধানীতে করা হবে মঙ্গলশোভাযাত্রা। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা ইন্সটিটিউট থেকে প্রতি বছর যে বর্ণাঢ্য মঙ্গলশোভাযাত্রা বের হয়, তার সূচনা ১৯৮৯ সালে। তারও আগে মঙ্গলশোভাযাত্রা বের করা হয় যশোরে ১৯৮৭ সালে। চারুকলার মঙ্গলশোভাযাত্রা এখন ঢাকাবাসীর কাছে নববর্ষ উৎসবের একটি প্রধান আকর্ষণ। ব্যর্থতার গ্লানি ভুলে, ব্যর্থ প্রাণের আবর্জনা পুড়িয়ে ফেলে সামনে এগিয়ে যাওয়ার প্রেরণা এই শোভাযাত্রায় অংশগ্রহণকারীরা হাজার কণ্ঠে আজ গাইবে- ‘মোচন করো বন্ধন সব/মোচন করো হে/মোচন করো ভয়/সব দৈন্য করো হ লয়…’।
রাজধানীসহ দেশজুড়ে উৎসব আনন্দের ঘটা
চট্টগ্রাম : বন্দর নগরী চট্টগ্রামে বর্ষবিদায় ও বর্ষবরণ অনুষ্ঠানের আয়োজনকে কেন্দ্র করে র্যাব-পুলিশ যৌথভাবে তিন স্তরের নিরাপত্তা বলয় তৈরি করেছে। নগরীতে বিভিন্ন অনুষ্ঠানে মোতায়েন থাকবে দুই হাজারের বেশি পুলিশ ও র্যাব সদস্য। রোববার বেলা ২টা থেকে অনুষ্ঠানস্থলে নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা দায়িত্ব পালন শুরু করেছে। এদিকে বাংলা বর্ষবিদায় ও নতুন বছরকে বরণ করার জন্য নগরীর ডিসি হিল, লালদীঘির পাড়, বাওয়া স্কুল প্রাঙ্গণ, সিআরবি, শিল্পকলা একাডেমি, পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকতে সব প্রস্তুতি নিপুণভাবে সম্পন্ন করেছে আয়োজকরা। পুরো নগরীতে বিরাজ করছে নববর্ষের বৈশাখী আমেজ। পহেলা বৈশাখের মূল অনুষ্ঠান আয়োজন করা হবে বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় খেলার মাঠে। এছাড়া ক্যাম্পাসজুড়েই থাকবে নানা আয়োজন।
সিলেট : প্রতি বছরের মতো এবারও সরকারি ও বেসরকারিভাবে নেয়া হয়েছে নানা কর্মসূচি। এছাড়াও সিলেট সম্মিলিত নাট্য পরিষদের উদ্যোগে ১৪২০ বাংলাকে বিদায় ও বাংলা নববর্ষকে স্বাগত জানাতে সুরমা নদীর তীরের চাঁদনীঘাটে বর্ষবিদায় অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে। সিলেট সিটি কর্পোরেশনের উদ্যোগে পাঁচ দিনব্যাপী কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে। আজ সকালে শোভাযাত্রা, পরে উদ্বোধনী অনুষ্ঠান, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান মধ্যাহ্নভোজ ও বৈশাখী মেলা অনুষ্ঠিত হবে। শ্রতি-সিলেটের উদ্যোগে ব্লু-বার্ড স্কুল অ্যান্ড কলেজের প্রাথমিক ক্যাম্পাস মাঠে সকাল ৬টায় সিলেটে প্রথমবারের মতো শত কণ্ঠে বর্ষবরণ, সকাল ৭টায় হাতের লেখা প্রতিযোগিতা, সকাল ৮টায় চিত্রাংকন প্রতিযোগিতা ও দিনব্যাপী সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান এবং বৈশাখী মেলার আয়োজন করা হয়েছে। এদিকে, বাংলা নববর্ষ ১৪২১ উপলক্ষে নগরবাসীকে নববর্ষের আন্তরিক শুভেচ্ছা জানিয়েছেন সিলেট সিটি কর্পোরেশনের মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী। ১৪২০ সনকে আনুষ্ঠানিকভাবে বিদায় ও ১৪২১ সনকে স্বাগত জানিয়েছে যুগান্তর সিলেট স্বজন সমাবেশ।
খুলনা : খুলনায় ব্যাপক প্রস্তুতি গ্রহণ করা হয়েছে। নতুন বছরকে ঘিরে খুলনা মহানগরীর সর্বত্র সৃষ্টি হয়েছে উৎসবের আমেজ। বর্ষবরণ কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে- মঙ্গলশোভাযাত্রা, পান্তা-ইলিশ উৎসব, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, বৈশাখী মেলা, গ্রাম বাংলার লোকজ উৎসব ইত্যাদি। খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা ইন্সটিটিউট নববর্ষকে বরণ করার জন্য আকর্ষণীয় মঙ্গলশোভাযাত্রা বের করবে। খুলনা জেলা প্রশাসনের উদ্যোগেও বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা বের হবে। উদীচী শিল্পী গোষ্ঠী খুলনা সার্কিট হাউসের পূর্ব পাশে ও সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট শহীদ হাদিস পার্কে মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছে। খুলনা জেলা প্রশাসন ও আব্বাস উদ্দিন একাডেমি নগরীর জাতিসংঘ শিশুপার্কে পহেলা বৈশাখ থেকে তিন দিনব্যাপী বৈশাখী মেলা, আলোচনা সভা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছে। এদিকে, বাংলা নববর্ষ ১৪২১ উদযাপন ও মসজিদ পাঠাগারের আলমারি ও বই বিতরণ উপলক্ষে ইসলামিক ফাউন্ডেশন মিলনায়তনে রোববার দুপুরে এক আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়।
রাজশাহী : রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে (রাবি) বিজনেস স্টাডিজ ফ্যাকাল্টি ডিবেটিং ফোরাম (বিএফডিএফ)-এর উদ্যোগে ও ‘গ্রামীণফোন’র সার্বিক সহযোগিতায় বাংলা নববর্ষ ১৪২১ নানা আয়োজনে উদযাপন করবে। রোববার বিকেলে বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ক্যাফেটেরিয়ায় সংগঠনটির প্রধান নির্বাহী আনন্দ শংকর রায় চৌধুরী সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান।
এ উপলক্ষে পহেলা বৈশাখের দিন বিভিন্ন কর্মসূচি হাতে নিয়েছে বিএফডিএফ। এসব কর্মসূচিতে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন ভিসি প্রফেসর ড. মিজানউদ্দীন। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন প্রো-ভিসি প্রফেসর ড. চৌধুরী সারওয়ার জাহানসহ বিভিন্ন বিভাগের প্রধান, শিক্ষকবৃন্দ ও প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা।
এদিকে, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে বিভিন্ন আবাসিক হলে বৈশাখী পিকনিকের নামে শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে ছাত্রলীগ পরিচয়ে চাঁদা আদায়ের অভিযোগ পাওয়া গেছে। শনিবার রাত থেকে এই চাঁদা আদায় করা হয়। এ ব্যাপারে বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সভাপতি মিজানুর রহমান রানা বলেন, চাঁদাবাজিকে ছাত্রলীগ সমর্থন করে না।
বরিশাল : কোনো ধরনের উৎসব ছাড়াই এবার বরিশালে বাংলা বর্ষবরণ করা হবে। বরিশাল সদর আসনের সংসদ সদস্য, মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি সাবেক মেয়র প্রয়াত শওকত হোসেন হিরনের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে বর্ষবরণে কোনো ধরনের উৎসব করা হবে না। শুধু নগরীতে উদীচীর আয়োজনে বিএম স্কুল মাঠে ঐতিহ্যবাহী বৈশাখী মেলা অনুষ্ঠিত হবে। মৃত্যুদিনই ২৭টি সংগঠনের সমম্বয়ে গঠিত বরিশাল সাংস্কৃতিক সংগঠন সমন্বয় পরিষদ জরুরি সভা করে বর্ষবরণ উপলক্ষে কোনো ধরনের অনুষ্ঠান না করার সিদ্ধান্ত নেয়।