দৈনিক বার্তা: বডোদরার খণ্ডেরাও মার্কেটের কাছে কর্পোরশেন অফিসের ঠিক উল্টো দিকে ছোট্ট একটি চায়ের দোকান। নাম ‘শ্রী টি স্টল’। দোকানির নাম কিরণ মাহিদা। বুধবার বডোদরায় বিজেপি-র প্রধানমন্ত্রী পদপ্রার্থী নরেন্দ্র মোদীর মনোনয়নপত্রে প্রস্তাবক হিসেবে স্বাক্ষর করলেন এই চা-বিক্রেতা। দেশ জুড়ে চা-চর্চার পর মোদীর দৌলতে এ বার খোদ চা-বিক্রেতাই উঠে এলেন সংবাদ শিরোনামে।
দু’দিন আগে রাজ্য বিজেপি-র তরফ থেকে কিরণের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। মোদীর মনোনয়নপত্রে প্রস্তাবক হিসেবে তিনি সই করবেন, দলীয় এই প্রস্তাব শোনার পর রাতে ভাল করে ঘুমোতেই পারেননি বলে জানিয়েছেন ৪৯ বছরের কিরণ। এক জন চা-বিক্রেতা যে তাঁর পেশায় থাকা অন্য এক জনকে যোগ্য সম্মান দেবেন তাতে মোটেও আশ্চর্য হননি তিনি, তাঁর শিহরণের গোটাটাই জুড়ে রয়েছে একটি নাম, নরেন্দ্র মোদী। তাঁর কথায়, “কয়েক দিন পর যিনি দেশের প্রধানমন্ত্রী হবেন, তাঁর প্রার্থীপদে আমার সই! ভাবতেই পারছি না!” জীবনের সবচেয়ে আনন্দের মুহূর্তের অপেক্ষায় নিদ্রাহীন রাত কেটেছে কিরণের। সকাল হতেই চলে গিয়েছিলেন মোদীর পথসভায়।
বডোদরার রোড শো-এ নরেন্দ্র মোদী। ছবি: পিটিআই। |
সাড়ে ৯টা নাগাদ বডোদরা পৌঁছেছিলেন মোদী। চার দিক লোকে লোকারণ্য। কড়া নিরাপত্তায় মোড়া বডোদরার রাস্তায় সকাল থেকে দাঁড়িয়ে থাকা সমর্থক এবং দর্শনার্থীদের উদ্দেশে দু’হাত নাড়ছেন তিনি। গায়ে অফ হোয়াইট পাঞ্জাবির উপর গেরুয়া জ্যাকেট। পদ্মফুলের কাটআউট লাগানো হুডখোলা জিপে তাঁর সঙ্গে ছিলেন আনন্দি পটেল, সৌরভ পটেল, পুরষোত্তম রূপালা এবং নিতিন পটেলের মতো রাজ্য বিজেপি-র প্রবীণ নেতারা। প্রায় চার কিলোমিটার রোড শো শেষে এ দিন বডোদরার জেলাশাসকের দফতরে মনোনয়নপত্র জমা দিতে পৌঁছেছিলেন নরেন্দ্র মোদী। তখনও বাইরে কর্মী-সমর্থকদের প্রবল ভিড়। মনোনয়নপত্র জমা দেওয়া শেষে যাঁদের উদ্দেশে মোদী বলবেন, “বডোদরার মানুষের ভালবাসা এবং সমর্থনের জন্য আমি তাঁদের প্রতি কৃতজ্ঞ।”
মোদীর প্রার্থীপদ প্রস্তাবকদের মধ্যে এ দিন যেমন ছিলেন তৃণমূল স্তরের চা-বিক্রেতা, তেমনই ছিলেন গায়কোয়াড় পরিবারের বধূ শুভাঙ্গিনীদেবীও। রাজপরিবারের প্রতি তিনি যে কৃতজ্ঞ সে কথা জানাতে ভোলেননি মোদী। তিনি বলেন, “বডোদরা আমার কর্মভূমি। আমার শিক্ষার শুরুটা কিন্তু গায়কোয়াড়দের প্রতিষ্ঠা করা স্কুলেই। দেশসেবায় এই পরিবারের নাম ভীষণ ভাবে উল্লেখযোগ্য।” আগামী ৩০ এপ্রিল বডোদরার মানুষ গণতন্ত্রের উৎসবে সামিল হবে বলেও এ দিন আশা প্রকাশ করেছেন মোদী।
এক দিকে প্রায় এক যুগ ধরে মোদী গুজরাত শাসন করছেন। অন্য দিকে বডোদরা বিজেপি-র শক্ত ঘাঁটি। ২০০৯ সালে এই কেন্দ্রে বিজেপি-র প্রার্থী প্রায় দেড় লাখ ভোটে জিতেছিলেন। এই লোকসভা কেন্দ্রের অন্তর্গত ৬টি বিধানসভার মধ্যে ৫টিই বিজেপি-র দখলে। বাকি আসনটিতে নির্দল প্রার্থী জিতলেও পরে তিনি বিজেপিতে যোগ দিয়েছিলেন। এমন একটা পরিসংখ্যান থাকা সত্ত্বেও প্রধানমন্ত্রী পদপ্রার্থী হিসেবে মোদীকে নিয়ে বিজেপি কোনও ঝুঁকি নেয়নি। তাঁকে বডোদরার পাশাপাশি উত্তরপ্রদেশের বারাণসী থেকেও প্রার্থী করা হয়েছে। যদিও বারাণসীতে এখনও মনোনয়নপত্র জমা দেননি মোদী। সেখানে তাঁর বিরুদ্ধে দাঁড়িয়েছেন আম আদমি পার্টি-র নেতা অরবিন্দ কেজরীবাল। বডোদরায় চা-বিক্রেতাকে আনার পর বারাণসীতে মোদী কী চমক দেন এখন সেটাই দেখার।